ইনকিউবেটরে টার্কির ডিম ফুটানোঃ আদ্রতা নিয়ন্ত্রন (পর্ব-০২) | Turkey egg boiling humidity control in incubator

সবকিছু ঠিক থাকা শর্তেও ইনকিউবেটরে ১০০% বাচ্চা না ফোটার মুল কারন হচ্ছে আদ্রতা সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রন করতে না পারা, এখন কার ইনকিউবেটর গুলিতে অটোমেটিক আদ্রতা নিয়ন্ত্রনের কোনো সিষ্টেম থাকেনা বললেই চলে। এই আদ্রতা আসলে কিভাবে সহজে কম খরচে নিয়ন্ত্রণ করাযায় সেটাই আজ জানবো আমরা। বাতসে জলিয় বাস্পের উপস্থিতিকে আদ্রতা বলাহয়, ইনকিউবেটরের ভেতরে যখন বাতাস আদ্র হয় তখন সেই বাতাসে পানির অনুগুলি ডিমের সংস্পর্শে এসে ডিমের খোসায় ক্যলসিয়াম কার্বোনেট তৈরি করে যার ফলে সেই ডিমের ভেতরে থাকা ভ্রুনে অক্সিজেন গ্রহনের পথ বন্ধ হয়ে যায় এবং ভ্রুন মারা যায়, আর বাতাসে আদ্রতা কম থাকলে ডিম উত্তাপের ফলে ডিমের খোসা ভঙ্গুর হয় এবং ডিমের ভিতরে বাচ্চা দুর্বল হয়ে মারা যায়। তাই এই আদ্রতাকে সব সময় স্বভাবিক রাখতে হয়, কিন্তু সেটা জন্য তেমন কোনো অধুনিক প্রযুক্তি আমাদের হাতের নাগালে নেই, আর আদ্রতা নিয়ন্ত্রন মেশিন গুলো মুলত অনেক বেশি পরিমানে বিদ্যুৎ খরচ করে।

বৃষ্টির সময় বাতাস আদ্র থাকে কারন বাতাসের অনুর সাথে পানির অনুর স্পর্স হয়, এটাকে কৃতীম উপায়ে এবং পম্প ছাড়া করার জন্য, ছোট্ট একটা পাত্রেমধ্যে পানি দিবেন, একটা ৬ ভোল্টেজ হাইস্পিড মোটর সেখানে সেট করবেন, মোটরে ছেট একটা পাখা এমন ভাবে লাগাবে যাতে পাখার অর্ধেক পানির ভিতর এবং অর্ধেক পানির উপরে থাকে, এখন পাত্র টা বন্ধ করে মোটর অন করুন, দেখবেন পানি ভিষণ জোরে ছিটছে, অর্থাৎ পানির অনুএবং বাতাশের অনু মিশ্রিত হয়ে বাতাসকে আদ্র করছে, এখন সেই বাতাসকে একটা ফ্যন দিয়ে ইনকিউবেটরেরর ভেতরে ছড়িয়ে দিন দেখবেন আদ্রতা বাড়ছে ঐ মোটর আর ফ্যন কন্ট্রোলারের সাথে যুক্ত করুন, দেখবেন আদ্রতা স্বভাবিক হলে কন্ট্রলার মোটর এবং ফ্যনকে অফ করবে, এবং আদ্রতা কমেগেলে নিজে থেকেই ফ্যন চালু হবে। এখন দ্বিতীয় অংশ কন্ট্রোল করার উপায় বলবো, ধরুন ইনকিউবেটরের ভেতরে এবং বাহিরে আদ্রতা খুব বেশি তখন আদ্রতা কমাবেন কেমন করে! আমরা জানি বালি অথবা ক্যলসিয়াম কার্বনেট অধিক পরিমানে আদ্রতা শোষণ কারি পদার্থ, ক্যলসিমাম কার্বোনেট মুলত “চুন”, এখন বাজার থেকে একটা বড় পাথর চুনের টুকরো কিনবেন, সাবধানে সেটার মধ্যে বেশ কিছু ফুটো করুন এখন সেই চুন কে একটা পাত্রে রাখলেন এবার সেই পাত্রের মুখে একটা ফ্যন লাগান, এখন ইনকিউবেটরের ভেতরের বাতাস গুলো পাথর চুনের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত করো আবার ইনকিবেটরের ভেতরে পাঠান দেখবেন আদ্রতা কমতে শুরু করেছে এভাবে কিছু ক্ষণ চালু রাখুন দেখবেন আদ্রতাকমে এসেছে, পাথর চুনের পাত্রটির মুখের ফ্যনটি কন্ট্রোলারের সাথে যুক্ত করুন দেখবেন আদ্রতা স্বাভাবিক হলে ফ্যনটি বন্ধ হবে, আদ্রতা বেশি হলে ফ্যনটি আবার চালু হবে। কিছদিন পরপর পাথর চুনের টুকরো টা রোদে শুকিয়ে নিন, দেখবেন অনেক ভালো কাজ করছে।
ইনকিবেটরে আদ্রতা কন্ট্রোল করার ব্যপারে নতুন কিছু জানবো , আদ্রতাকে নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য সবার আগে আমাদের জানতে হবে আদ্রতার জন্ম হয় কোথায়, আর আদ্রতা শেষ হয় কোথায়। প্রথমে জানবো বাতাস আদ্র হয় কেনো, বিজ্ঞানের সুত্র অনুযায়ী বাতাস যত উত্তাপ্ত হবে বাতাসে পানি শোষণ করার ক্ষমতা তত বাড়বে, আবার বাতাস যত শিতল হবে বাতাস থেকে তত পানির অনু বের হয়ে আসবে, বাতাস থেকে আদ্রতা বের করার একটা ছোট পরিক্ষা করা যাক, দুপুরে যখন আবহাওয়া একটু গরম হয় তখন ফ্রিজ থেকে কয়েক টুকরো বরফ বের করুন এবং একটি শুকনো কাচের পাত্রে বরফ গুলি রাখুন, এবার পাত্রের মুখটা বন্ধ করুন, কিছুক্ষণ পরে দেখুন সেই পাত্রের বাহির পিষ্টে পানির বুদ বুদ জমেছে, এবার ভবুন তো পানি কোথায় থেকে এলো, তবে কি কাঁচ ভেত করে পানি বেরিয়ে এলো! না। আসলে পাত্রের গা অত্যান্ত ঠান্ডা হওয়াতে ঐ পাত্রের সংস্পর্শে যে সুমস্ত বাতাসের অনু এসেছে সেই বাতাস অদ্রতা বা পানির অনু ধরে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে, যার ফলে বাতাসে থাকা সেই পানিগুলি এখন কাঁচের প্রাত্রের গায়েই লেগে আছে, এখন বোঝা গেলো বাতাস থেকে তাড়াতারি আদ্রতা শোষণের সব চেয়ে কার্জকারী উপায় হলো বাতাস কে শীতল করা, আর অদ্রতা তৈরি হতে তিনটি বিষয় লাগে প্রথমত পানি দ্বিতীয়ত বাতাস এবং তৃতীয়ত তাপ, আপনি যদি তিনটি জিনিষ কোনো জায়গায় একটা নিদৃষ্ট পরিমান রাখতে পারেন তবে ঐ জায়গায় আদ্রতাও নিদৃষ্ট পরিমানই থাকবে, এই বিষয় টাই আমাদের ইনকিউবেটরের সাথে মিলিয়ে রাখতে হবে।
আর আদ্রতা ধংস করার সব চেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে প্রথমে বাতাসকে ঠান্ডা করে আদ্রতা ঝরিয়ে নিয়ে সমস্থ পানি সরিয়ে নিয়ে সেই বাতাসকে গরম করে ইনিউবেটরের ভেতর পাঠানো, কিন্তু আদ্রতা বাড়ানোর ক্ষেত্র ইনকিউবের ভেতরে কতটুকু জায়গা আছে, ইনকিউবেটরের বডিটা কতক্ষণে কতটুকু তাপ শোষণ করে, বাহিরে তাপমাত্রা কত সেগুলি জেনে একটা হিসেব করে ভেতরের পানির আয়তন বাড়িয়ে আদ্রতা স্বভাবিক রাখা সম্ভব।
ইনকিউবেটরে ইমার্জেনসি আদ্রতা তৈরির পদ্ধতী জানাবো, পদ্ধতীটা বেস মজার এবং হাস্যকর কিন্তু বিপদের সময় এটাই আপনার অনেক উপকার করবে, খুব বড় ইনকিউবেটরে কাজ নাও করতে পারে। শীতকালে বাতাসের আদ্রতা খুব কম থাকে, আজ সকালেও অনেক শীত পড়েছিলো আমারও ভিষণ করছিলো শীতের কারনে মাঝে মাঝে হা করে থেকে মুখ দিয়ে নিঃস্বাস নিচ্ছিলাম হঠাৎ খেয়াল করেদেখি মুখ দিয়ে ধোঁয়ার মত বাতাস বের হচ্ছে, এটা নিয়েই গবেষণা শুরু করেদিলাম, এই বাতাস অনেক আদ্র, এখন আপনার ইনকিউবেটরে আদ্রতা যদি খুবই কমে যায় এবং তা কোনো ভাবে বাড়াতে না পারেন, তবে নিজে মুখ দিয়ে ফু দিয়ে ইনকিউবেটরের ভেতরে বাতাস ঢুকিয়ে ইনকিউবেটরের ভেতরে তৎক্ষনাৎ আদ্রতা তৈরি করতে পারবেন, আমাদের ফুসফুসের ভেতরে যতটা বাতাস থাকে পুরোটা কর্বোনডাই অক্সাইড নয় এতে অনেটা আক্সিজেনও থাকে তাই এটা ডিমের ভিতরে ভ্রুনের কোনো ক্ষতি করবেনা।
বিশেষ কথাঃ ডিমের ভিতর থেকে ছোট্ট ভ্রুনকে বাচ্চায় রুপান্তরিত করার প্রধান ভুমিকা পালান করে নিদৃষ্ট তাপমাত্রা। একটা কক্ষে সব জায়গায় সঠিক ভাবে ডিম ফুটার জন্য নিদৃষ্ট তাপমাত্রা রেখে সেই কক্ষে কিছু উর্বর ডিম রাখলে ডিমের ভিতরে ভ্রুনের কোষ বিভাজোন হতে থাকে, তাপমাত্রা সঠিক রেখে ভ্রুনের সঠিক বৃদ্ধির জন্য ডিম গুলো নিদৃষ্ট সময় পর পর এদিক ওদিক উল্টে দিলে, নিদৃষ্ট দিনে সেই ভ্রুন বাচ্চায় পরিনিত হয়। কিন্তু ডিমের ভিতরে তরল পদার্থ সঠিক সময়ে সঠিক পরিমান না শুকালে ডিমের ভিতর বাচ্চা বড় হয়েও মৃত্যু বরণ করে, ডিমের ভিতরে তরল সঠিক সময়ে শুকানোর জন্য ডিমের বাহিরে ইনকিউবেটরের ভিতরের বাতাসে নিদৃষ্ট পরিমান আদ্রতা বজায় রাখতে হয়। তাপমাত্রা ভ্রুন বড় করে, ডিম ঘুরানো হয় ভ্রুনের সঠিক বৃদ্ধির জন্য এবং নিদৃষ্ট আদ্রতা ডিমের তরল শুকাতে সাহায্য করে। একটি বিষয় লক্ষণীয়, তাপমাত্রা ভ্রুন বড় করে সেই জন্য তাপমাত্রাকে প্রথম থেকেএকটা নিদৃষ্ট সময় পর্যন্ত শেষের সপ্তাহ অপেক্ষা একটু বেশি তাপমাত্রা রাখতে হয় যাতে ভ্রুনের বৃদ্ধিটা নিদৃষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। ডিম ঘুরানো হয় ভ্রুনের সঠিক বৃদ্ধির জন্য সেই কারনে প্রথম থেকে একটা নিদৃষ্ট সময় পর্যন্ত ডিম ঘুরানো হয় যাতে ঐ সময়ের মধ্যেই যে করনে ডিম ঘুরানো হয় সেটা সম্পূর্ণ হয়। আদ্রতা ডিমের তরল শুকাতে সাহায্য করে সেই জন্য প্রথম থেকে আদ্রতাকে একটা নিদৃষ্ট সময় পর্যন্ত শেষের সপ্তাহ অপেক্ষা কম আদ্রতা রাখা হয় যাতে ঐ সময়ের মধ্যে সঠিকভাবে ডিম শুকানোর কাজ সম্পূর্ন হয়। প্রথম থেকে সেই নিদৃষ্ট সময় হচ্ছে হেচিংএর আগে পর্যন্ত। তাহলে বোঝাগেলো হেচিংএর আগেই ডিমের ভিতরে বাচ্চার সঠিক বৃদ্ধি এবং সঠিক পরিমানে ডিমের তরল শুকানোর কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে, যাতে হেচিংএর সময় অনায়াসে বাচ্চা ফুটে বের হতে পারে। সেই জন্য ইনকিউবেটরে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর সময়কে দুইভাগে ভাগ করা হয় প্রথম ভাগে সাঠিক ভাবে ভ্রুনকে বাচ্চায় পরিনিত করা, দ্বিতীয় ভাগে সেই বাচ্চাকে সঠিকভাবে ডিম থেকে বের হরার ব্যবস্থা করা। ‘মূলত ইনকিউবেটর হচ্ছে ডিম দেবার প্রথম থেকে শুরু করে ডিম ফুটা পর্যন্ত সঠিক যত্ন নেয়া এবং ডিম ফুটার উপযোগী আবহাওয়া বজায় রাখার কক্ষ।

Related product you might see:

Share this product :

+ comments + 1 comments

April 23, 2021 at 6:50 AM

তুষ হারিকেন পদ্ধতি তে কিভাবে আদ্রতা নিয়ন্ত্রণে রাখবো জানাবেন

Post a Comment