উদীয়মান টার্কি মুরগি শিল্প ও কিছু ভাবনা | Rising turkey Hen industry and some ideas


বর্তমানে টার্কি শিল্পটা ৯৯% নতুন খামারিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, বাস্তবিক অর্থে টার্কি সম্পর্কে যাদের ধারণা খুবই সীমাবদ্ধ/ঝাপসা। বাংলাদেশে যেসব পুরাতন খামারি ভাইয়েরা আছেন তাদের বেশিরভাগই যে বিষয়টাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন তা হলো অর্থনীতির ‘চাহিদা ও যোগান’ তত্ত্ব। টার্কি কোনো সাধারণ পণ্য নয়, এটি একটি কৃষিজ উৎপাদন যার চূড়ান্ত ভোক্তা হলো দেশের সাধারণ জনগণ। টার্কি শিল্পটা ৩টি ধাপে বিস্তার লাভ করেঃ
১। বড় খামারিদের কাছ থেকে ট্রেনিং/প্যারেন্ট স্টক (Parent Stock) নিয়ে নতুন খামারিরা খামার করেন।
২। পুরাতন ও নতুন খামারিরা তাদের খামারের টার্কি উৎপাদন বৃদ্ধি করেন।
৩। সর্বশেষে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো, ‘বাজারজাতকরণ’। অর্থাৎ, ভোক্তার হাতে টার্কির মাংস তুলে দেওয়া।
এই তৃতীয় ধাপটিই হলো সবচাইতে কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে টার্কি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে ভোক্তাদের ভেতর টার্কির মাংস খাওয়ার আগ্রহ তৈরি করতে হবে এবং এই বিষয়ে পুরাতন খামারিদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। বাজারে টার্কির মাংসের চাহিদা বাড়াতে হবে এবং তার মূল্য ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে আনতে হবে। বাজারে যদি টার্কির মাংসের চাহিদাই না থাকে তাহলে খামারিরা তাদের টার্কি দিয়ে কি করবেন?
ছোট থেকেই একটা কথা শুনে আসছি তা হলো, “আমরা বাঙালিরা হুজুগের জাতি”। টার্কি সম্পর্কিত ফেসবুক গ্রুপে অনেকের পোস্ট দেখে অবাকও হই আবার হাসিও পায়। টার্কি সম্পর্কে যার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই ওই ভাই ২০০/৩০০/৪০০ টার্কির বাচ্চা কিনে খামার শুরু করেছেন বা খামার করার পরিকল্পনা করছেন...!!! ওই ভাইদের কাছে আমার প্রশ্ন, খামার করার আগে আপনার নির্ধারিত ভোক্তা কারা, মানে আপনার পণ্য কাদের কাছে বিক্রি করবেন তা কি বিবেচনা করে দেখেছেন? যদি না করে থাকেন তাহলে এখন তো কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হতেই হবে, তাই না ভাই?
বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো Educated Unemployed Youth অর্থাৎ শিক্ষিত বেকার। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে সামনে রেখে কিছু কিছু.........টার্কি নিয়ে বিভিন্ন চটকদার পোস্ট করে তাদের এই সেক্টরে ঢুকাচ্ছে। চটকদার পোস্টের কিছু উদাহরণ দিচ্ছিঃ
১। ৫/৭ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে না গিয়ে লাখ টাকা খরচ করে টার্কির খামার করুন এবং অল্পদিনে লাখপতি হয়ে যান।
২। হাইব্রিড/আমেরিকান টার্কি ৬-৭ মাসে ১০/১২ কেজি হয় এবং এক বছরে ১৫-২০ কেজি। যারা এই বিজ্ঞাপনগুলো দেন ওইসব খামারি ভাইদের কাছে আমার অনুরোধ, আমেরিকান/হাইব্রিড এর বিজ্ঞাপনের সঙ্গে এর সত্যতা প্রমাণের জন্য ইমপোর্ট লাইসেন্স বা কোনো বৈধ ডকুমেন্টের কপি পোস্ট করবেন।
৩। অল্প টাকায় টার্কি খামার করুন, অল্প সময়ে স্বাবলম্বী হোন ইত্যাদি ইত্যাদি।
আর ওইসব নিরীহ শিক্ষিত বেকার যুবকেরা না বুঝেই এই সেক্টরে ঝাঁপ দিচ্ছেন যার ফলাফল নিজের পণ্য বিক্রি না করতে পারার হতাশা। সবথেকে মূল বিষয় হলো, হাইব্রিডই হোক আর লোব্রিডই হোক যারা প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদের ৯৯%ই কিন্তু নতুন খামারিদের পণ্য মার্কেটিং/বাজারজাতকরণের কোনো দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন না।
একটি বিষয় যা পুরাতন খামারি ভাইদের মনে রাখতে হবে, টার্কি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে দেশের জনগণের কাছে টার্কির মাংস খাওয়ার আগ্রহ বৃদ্ধি করতে হবে এবং একইসঙ্গে টার্কির মাংসের দাম ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার সীমায় আনতে হবে। এটা যদি করতে না পারেন তাহলে আগামী ২/৩ বছরের ভেতর বাংলাদেশে শৌখিন টার্কিপালক ছাড়া আর কোনো খামারি থাকবে না। তাদের ভেতরে কিন্তু ভাই আপনিও আছেন......!!
যারা তাদের টার্কি বিক্রির জন্য বিভিন্ন চটকদার ইউটিউব ভিডিও ক্লিপ পোস্ট করছেন বা বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন তারা মাথার পেছনে একটা বিষয় মনে রাখবেন, এখন আপনার যে প্যারেন্ট স্টক (Parent Stock) আছে ২/৩ বছর পর ওগুলো যখন বাতিল হয়ে যাবে তখন আপনাকেও ওগুলো বাজারে মাংস হিসেবেই বিক্রি করতে হবে।
অতএব, এই টার্কি শিল্পের যদি বিস্তার ঘটাতেই হয় তাহলে কেবল নতুন খামারিদের চটকদার পোস্ট দিয়ে এই সেক্টরে না এনে, ‘বাজারে টার্কির মাংসের চাহিদা’ কি করে বৃদ্ধি করা যায় তা নিয়ে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। বাজারে চাহিদা থাকলে নতুন খামারি এমনিতেই সৃষ্টি হবে, তা কেউ চাক বা না চাক।

Related product you might see:

Share this product :

Post a Comment