টার্কির নাগরিকত্ব বিতর্কঃ বাংলাদেশ কি ইন্ডিয়া | Turkey citizenship debate. What is Bangladesh, India?

ইন্ডিয়ান টার্কি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠছে। মুষ্টিমেয় কিছু ক্রেতা ইন্ডিয়ায় উৎপাদিত টার্কি দিয়ে খামার শুরু করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার অনেক পোস্ট আমরা ভার্চুয়াল মাধ্যমে পড়েছি। বিষয়টি এখন ব্যক্তি পর্যায় থেকে সামষ্টিক পর্যায়ে উঠে এসেছে এবং এটি নিয়ে গ্রুপিং, দলাদলিরও শেষ নেই। এক পক্ষ সরাসরি ইন্ডিয়ায় উৎপাদিত টার্কিকে খারাপ, অসুস্থ আর নিম্নমানের বলছে। আবার আরেক পক্ষ বলছে ইন্ডিয়ায় উৎপাদিত টার্কির কোন সমস্যা নেই। আবার এক শ্রেণীর ভন্ড টার্কি প্রেমীরা এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে ক্রেতাদের আই ওয়াস করে ইন্ডিয়ানকে দেশী বলে ঠকাচ্ছে। দেশী-বিদেশী ব্রান্ডিং করে টার্কির দাম আরও বৃদ্ধি করছে।

দলাদলি আর নোংরা প্রতিযোগিতায় টালমাটালে সাধারণ টার্কি প্রেমীরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগছে কি করবে ? ইন্ডিয়ায় উৎপাদিত টার্কি কিনবে না দেশে উৎপাদিত টার্কি কিনবে ? পক্ষ-বিপক্ষ যে যার মতামত দিচ্ছে। সবাই চায় তার অনুকূলে জনমত যাক। ভার্চুয়াল মাধ্যমের কল্যাণে আমরা মুহূর্তেই সব খবর পাচ্ছি।
দলাদলি আর গোড়ামীর আড়ালে মূল বিষয়টি সবাই এড়িয়ে যাচ্ছে। কেন ইন্ডিয়ায় উৎপাদিত টার্কির বাচ্চা বাংলাদেশে আসছে সেটা একবারও কি আমরা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে বিশ্লেষন করে দেখেছি ? অর্থনীতির সূত্র অনুযায়ী কোন পণ্যের বাজার চাহিদার সাথে যোগানের অপ্রতুলতা থাকলে পণ্যের মূল্য উর্ধগতীতে থাকে। আবার বাজারে কোন পণ্যের যোগান যখন বেশী থাকে তখন দাম থাকে নিম্নগামী। বর্তমানে বাংলাদেশে যে পরিমাণ টার্কির বাচ্চার চাহিদা রয়েছে তার তুলনায় স্থানীয় যোগান অতি নগন্ন। আর তাই স্বাভাবিক ভাবেই বাজারে স্থানীয় যোগানের পাশাপাশি বিকল্প যোগানের প্রয়োজন হচ্ছে।
কেন টার্কির এত চাহিদাঃ
পোল্ট্রির অন্যান্য পাখী বাদ দিয়ে কেন নতুন উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ ও সৌখিনরা পঙ্গপালের ন্যায় ছুটছে টার্কির দিকে? জনমণে প্রশ্নটা থেকেই যায়। আমার দৃষ্টিতে যা ধরা পরেছে নিচে তা উল্লেখ করলাম।
▪ পোল্ট্রি শিল্পে লাভের মুখ না দেখতে পারা, তুলনামুলকভাবে অন্যান্য পোল্ট্রির চেয়ে টার্কি পালণ সহজ হওয়া, টার্কির খাবার খরচ ও রোগ ব্যধি অন্যান্য পোল্ট্রির তুলনায় কম হওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে টার্কির মাংসের উচ্চ মূল্য ও সর্বোপরি মিডিয়ার কল্যাণে নতুন নতুন উদ্যোক্তার আকর্ষনের কেন্দ্র বিন্দুতে এখন টার্কি।
▪ এছাড়া দেখতে আকর্ষনীয় ও মনমুগ্ধকর হওয়ায় সৌখিনরাও ছুটছে এর পেছনে।
▪ টার্কির মাংস অতি সুস্বাদু হওয়ায় ভোজন রসিকরাও এর প্রেমে মশগুল।
উপর্যুক্ত কারনে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টার্কির চাহিদা এখন তুঙ্গে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় আমার ছোট্ট শখের খামারটি প্রায় প্রতিদিনই সারাদেশ থেকে বেশ কিছু নতুন উদ্যোক্তা ও সৌখিনরা আসে ভিজিট করতে, তথ্য নিতে ও টার্কি সম্পর্কে জানতে। আমার ব্যক্তিগত জরীপ মতে প্রায় প্রতিদিন শুধুমাত্র আমার খামারে যারা ভিজিট করে তাদের প্রায় ৫০%-৬০% টার্কি প্রেমী একমাসের মধ্যেই টার্কি পালণ শুরু করছে। এখন সারাদেশের চিত্রটা যদি আমরা একটু ক্যালকুলেশন করার চেষ্টা করি তাহলেই আরো স্পষ্ট হবে ক্রমবর্ধমান টার্কি প্রেমীর % কতটা আশাব্যঞ্জক।
তাহলে এই ক্রমবর্ধমান টার্কি প্রেমীদের চাহিদার যোগান কিভাবে মেটানো সম্ভব?? উৎপাদন বৃদ্ধি করা ছাড়া আমরা যতই বলি ইন্ডিয়ায় উৎপাদিত টার্কি বাংলাদেশে আসা বন্ধ হোক তা আকাশ কুসুম কল্পনা ছাড়া কিছুইনা।
বাংলাদেশে যদি টার্কির বাচ্চা উৎপাদন বৃদ্ধি পায় তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই বাচ্চার দাম কমে যাবে। আর দাম কমে গেলে ইন্ডিয়ায় উৎপাদিত টার্কি অটোমেটিক আসা বন্ধ হয়ে যাবে। সেজন্য অবশ্য টার্কির বর্তমান ০১টি ডিমের মূল্যে ০১টি বাচ্চা অর্থাৎ ২০০-৩০০/- টাকার মধ্যে বাচ্চা বিক্রয় করতে হবে।
তাহলে এটাই স্পষ্ট বুঝা যায় ক্রমবর্ধমান চাহিদার তুলনায় বাজারে টার্কির বাচ্চার অপ্রতুলতাই টার্কির বাজার মূল্য উর্ধগতীর অন্যতম কারণ॥ এছাড়াও টার্কির সাথে জড়িতদের আন্ত:কোন্দল, দেশী-বিদেশী ব্রান্ডিং, অতি মুনাফার লোভও এর জন্য দায়ী।
বিঃ দ্রঃ আমার লেখালেখির কারনে অনেকেই আমাকে ইন্ডিয়ায় উৎপাদিত টার্কির দালাল বলে। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি আমিও মনে প্রাণে চাই ইন্ডিয়ায় উৎপাদিত টার্কি বাংলাদেশে আসা বন্ধ হোক। কারন আমিও আপনাদের মতই খামারি। আর আপনাদের মত আমিও চাই টার্কির দাম দির্ঘদিন বেশী বেশী থাকুক।

Related product you might see:

Share this product :

Post a Comment