জনপ্রিয় হয়ে উঠছে টার্কি মুরগি চাষ | Turkey's chicken farming has become popular

জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আমেরিকা ও ইউরোপের টার্কি মুরগি। ডিম সংগ্রহের এক মাসের মধ্যে বাচ্চা ফুটে ও তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ছয় কেজি ওজন হচ্ছে এসব টার্কি মুরগির।

বর্তমানে মাংসের চাহিদা পূরণে গরু, মুরগি ও হাঁসের খামার দেখা মেলে অহরহ। কিন্তু মুরগির মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য অধিক মাংসসমৃদ্ধ টার্কি জাতের মুরগি পালনের বিষয়টি এবার লক্ষ্য করা গেছে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে।

তবে
টার্কি এক সময়ের বন্যপাখি হলেও এখন এটি গৃহপালিত বড় আকারের একটি পাখি। তেমনি একজন টার্কি খামারি নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালের পাইকসা এলাকার বাছেদ মিয়া।

তিনি আগে মুরগি পালন করতেন, শখের বসে সিলেট থেকে দুটি মাত্র টার্কির বাচ্চা সংগ্রহ করেন। পরে বিষয়টি নিজের কাছেই কৌতূহল মনে হলে তা থেকে যে ডিম আসে তা দেশি মুরগি দিয়ে ফোটানো শুরু করেন। সেই থেকে টার্কির খামার করার ইচ্ছা পোষণ করেন বাছেদ।

তার কাছে থেকে টার্কির বাচ্চা নিয়ে সফল হয়েছেন আশপাশের প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি পরিবার। তারা বাড়িতে ছোট আকারেই পালন করছেন এ টার্কির মুরগি। তাদের মধ্যে অন্যতম হুমায়ুন, বারেক, জামান, আলামিনসহ আরো অনেকে।

বাছেদ মিয়া জানান, টার্কি মুরগি পালন অর্থনৈতিকভাবে খরচ অনেক কম। বয়লার বা লেয়ার ও হাঁস পালনের চেয়ে অনেক বেশি লাভ হয়। এ ছাড়া টার্কি ৩০ সপ্তাহ থেকে ডিম দেওয়া শুরু করে। একটি টার্কি বছরে ৮০ থেকে ১০০টি ডিম দেয়। আবার ২৮ থেকে ৩০ দিনেই এই ডিম ফুটে বাচ্চার জন্ম হয়।

একটি টার্কি ৪ মাস বয়স হলেই গড় ওজন ৭ থেকে ৮ কেজি। ৩ থেকে ৪ মাস বয়স হলেই একটি টার্কি মাংসের জন্য বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। দেশি হাঁস-মুরগির মতো সাধারণ নিয়মে পালন করলেও ৫ থেকে ৬ মাসে প্রতিটি টার্কি গড়ে ৫ থেকে ৬ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। খোলা বা আবদ্ধ উভয়ভাবেই টার্কি পালন করা যায়।

টার্কি মুরগি নিজেই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটাতে পারে। তবে টার্কি না দিয়ে ফোটানোই উত্তম। কেননা টার্কি ডিমে তা দিলে পুনরায় ডিম পারতে দেরি করে। এর বদলে দেশি মুরগি অথবা ইনকিউবেটর দিয়ে বাচ্চা ফুটালে ফল ভালো পাওয়া যায়।

বাছেদ মিয়া আরো বলেন, টার্কির মাংস পুষ্টিকর ও সুস্বাদু হওয়ায় এটি খাদ্য তালিকার একটি আদর্শ মাংস হিসেবে ঢাকার নামিদামি হোটেলে সরবরাহ হয়ে থাকে সিংহভাগ।

ঘোড়াশালের টার্কি মুরগি খামারি কাসেম মিয়া জানান, বাছেদ মিয়ার কাছ থেকে মাত্র ১০টি টার্কির বাচ্চা নিয়ে ছোট আকারে পালন শুরু করেন তিনি। মাত্র এক বছর যাবত টার্কি পালন করেই তিনি লাভের মুখ দেখেন। তাই তার ইচ্ছা  নিজস্ব মুরগির ডিম দিয়েই খামারটি আরো বড় করার।

একই এলাকার বিষু দত্ত জানান, আগে হাঁসের খামার করেছিলেন। তাতে প্রচুর লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন। তারপর শুরু করেন কোয়েল পাখির খামার। ব্যবসা কিছুটা জমতে শুরু করে। কোয়েল পাখি পালনের পাশাপাশি তিনি ২০/২৫ দিন পূর্বে বিভিন্ন খামারিদের কাছ থেকে প্রায় দেড় শতাধিক টার্কি মুরগি সংগ্রহ করেন। শুরু হয় তার টার্কি পালনের যাত্রা। তিনি এর পাশাপাশি খোলা অবস্থায় অর্ধশতাধিক দেশি জাতের মুরগিও পালন শুরু করেন।

পলাশ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শাহা জামান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টার্কির মাংস বেশ জনপ্রিয়। পাখির মাংসের মধ্যে হাঁস, মুরগি, কোয়েল এরপর টার্কির অবস্থান। টার্কি বর্তমানে মাংসের প্রোটিনের চাহিদা মিটিয়ে অর্থনীতিতে বেশ অবদান রাখছে। এ ছাড়া এর মাংসে প্রোটিন বেশি, চর্বি কম এবং আন্যান্য পাখির মাংসের চেয়ে বেশি পুষ্টিকর। পশ্চিমা দেশগুলোতে টার্কি খুব জনপ্রিয়।

তবে রোগ বালাইয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো রোগ দেখা না দিলেও পক্স, সালমোনেলোসিস, কলেরা ও এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা দেখা দিতে পারে। পরিবেশ ও খামার অব্যবস্থাপনার কারণে এসব রোগ সংক্রমণ হতে পারে। তবে নিয়মিত টিকা দেওয়া হলে এ সব রোগ আক্রান্ত করতে পারে না।

Related product you might see:

Share this product :

Post a Comment