আদিব সাহেবের শখের অকালমৃত্যুতে যখন মুষড়ে পরেছিল, ঠিক তখনই এক বন্ধু তাকে একটি ছোট্ট চটি আকারের বই উপহার দেয়। বই পড়ার প্রতি তীব্র আকর্ষণ থকা সত্ত্বেও আদিব সাহেব সেদিন বইটি র্স্পশ করেও দেখেনি।আদিব সাহেবের মন খুবই বিষন্ন। বন্ধুদের আড্ডায়, ঘরে-বাইরে কোথাও তার মন টিকেনা। সারাক্ষণ শুধু চোখে ভেসে উঠে মৃত প্রায় কিছু টার্কির বাচ্চার ছবি। বাচ্চা গুলোর সেই নিঃশ্বাস না নিতে পারার কষ্ট তাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়, তাহলে কি বাচ্চা গুলোর মৃত্যুর জন্য সে নিজেই দায়ী ? তার লালণ পালনের অদক্ষতার কারনেইতো বাচ্চা গুলো এভাবে চোখের সামনে মরে গেল।
বেশ কয়েকদিন কেটে গেল। আদিব সাহেব নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়েছে। একদিন হঠাৎ করেই চোখে পরে তার বন্ধুর উপহার দেয়া সেই বইটি।পড়ার টেবিলের এককোনে রাখা বইটিতে ধুলোর স্তর পরে আছে। আদিব সাহেব একটি নেকড়া দিয়ে বইটি মুছে ফেলল। বইটির উপর বড় করে লেখা “তুমিও জিতবে” লেখক শিব খেরা।
অনেকটা কৌতুহল নিয়ে সে বইটি পড়া শুরু করল। কয়েক পৃষ্ঠা পড়তেই তার খুব ভাল লাগতে লাগল। শিব খেরার অসাধারন উপস্থাপনা নেতিবাচক মনোভাবকে ইতিবাচক করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগাল তাকে। বইটি পড়ে সে একটি দির্ঘশ্বাস ছাড়ল। Failure of the pillar of success মন্ত্রে দিক্ষীত হয়ে সে আবার শুরু করতে চাইল।
আদিব সাহেব সিদ্ধান্ত নিল একটি খামার করবে। তার স্বপ্নের খামার, ছোট বেলা থেকে লালিত সেই শখের খামার। যেই ভাবা সেই কাজ। আদিব সাহেব খামার করার উপযুক্ত একটি রেডী শেড খুজতে লাগল। কিন্তু ঢাকা শহরে যেখানে মানুষ থাকার মত পর্যাপ্ত জায়গা নেই সেখানে খামার করার মত রেডী শেড সে কোথায় পাবে ? অবশেষে এক বন্ধুর পরামর্শে ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলা গাজীপুরে খোঁজ নিতে লাগল এবং খুব সহজেই মাসিক ৭,০০০/- ভাড়ায় (বিদ্যুৎ বিল নিজের) একটি পছন্দসই রেডী শেড পেয়ে গেল। পাবারই কথা কারণ বাংলাদেশের মধ্যে হয়তো গাজীপুরই একমাত্র জেলা যেখানে বড় বড় শেড তৈরী করে জমির মালিক অন্যান্য শহরের বাড়িওয়ালারা যেমন বাড়ি ভাড়া দেয় এখানে তেমন শেড ভাড়া দেয়। শেডটি ছিল আবাসিক এলাকায় এবং চারিদিকে কোন সীমানা প্রাচীর ছিলনা। আদিব সাহেব প্রথম দিনেই দেখল তার ফার্মের আশেপাশে অনেক দেশীয় মুরগী বিচরণ করছে। আদিব সাহেবের মনটা প্রফুল্ল হয়ে উঠল। আহ্ এই না হলে খামার ! একবারে মোক্ষম জায়গা।
এবার তার স্বপ্নের খামারের যাত্রা শুরু। কিন্তু সে আবারো বিপাকে পরে গেল।খামারতো ভাড়া নেয়া হল এখন সে কাজ করার মত দক্ষ লোক পাবে কোথায় ? লোক অনেক পাওয়া যায় কিন্তু খামারে কাজ করার কথা বললেই পিছটান দেয়। অবশেষে একজন লোক চাকরী করতে রাজী হল মাসিক বেতন ১০,০০০/-। আদিব সাহেবের কাজের লোক তার খামারের অতি নিকটেই একটি ভাড়াবাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করে। তিনবেলা বাড়ি থেকেই খেয়ে আসে।
আদিব সাহেব বিভিন্ন জায়গা হতে খুঁজে পেতে তার খামারের জন্য ছোট বড় মিলিয়ে বেশ কিছু টার্কি ও তিতির ক্রয় করে নিয়ে আসল। দেখা যাক এবার কি হয় ?
আদিব সাহেবের খামার কিছুদিন ভালই চলছিল। কিন্তু যখন খামারে আশেপাশের লোকজন জানতে পারল এখানে একটি অদ্ভূত পাখীর খামার গড়ে উঠেছে তখন উৎসুক জনতা ভীড় করতে লাগল। ভীড় দিন দিন বাড়তেই লাগল। এমনকি স্কুলগামী ছেলে মেয়েরাও স্কুলে যাওয়া আসার পথে তার খামার দেখতে ভীড় করতে লাগল। এ যেন একটি মিনি চিড়িয়াখানা। মানুষের পাশাপাশি সেখানে পাক্ষীকুলের সমাগমও বেড়ে গেল। খাবারের লোভে আশেপাশেল গৃহস্থদের হাঁস-মুরগী, কবুতরের সমাগম কয়েকগুণ বেড়ে গেল।
কিছুদিন যেতে না যেতেই আদিব সাহেবের টার্কি খামারের পাখী গুলো আবার পূর্বের ন্যায় একটার পর একটা অসুস্থ হতে লাগল। পশু চিকিৎসকের পরামর্শ মতে ঔষধ প্রয়োগ করে একটা অসুখ সারাতে না সারাতেই আরেক অসুখের আবির্ভাব ঘটতে লাগল। আদিব সাহেব দিশেহারা হয়ে গেল। তবে কি এবারও আদিব সাহেব সফলতার মুখ দেখতে পারবেনা ??
মাস শেষে আদিব সাহেব হিসেব করে দেখল ঔষধ খরচ, খাবার খরচ, কর্মচারীর বেতন, শেড ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল মিলে এক বিশাল খরচের অংক। অপরদিকে তার আউটপুট শূণ্য। প্রতিমাসে সে এক বিরাট অংকের টাকা তার আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ধার করতে লাগল। খুব অল্প দিনের মধ্যেই সে দেনার দায়ে জর্জড়িত হয়ে পরল।
মাস শেষে আদিব সাহেব হিসেব করে দেখল ঔষধ খরচ, খাবার খরচ, কর্মচারীর বেতন, শেড ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল মিলে এক বিশাল খরচের অংক। অপরদিকে তার আউটপুট শূণ্য। প্রতিমাসে সে এক বিরাট অংকের টাকা তার আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ধার করতে লাগল। খুব অল্প দিনের মধ্যেই সে দেনার দায়ে জর্জড়িত হয়ে পরল।
আসুন আমরা এখন দেখে নেই আদিব সাহেবের ভুল গুলো কি কি ছিলঃ
• আদিব সাহেব সবচেয়ে বড় ভুল করেছিল প্রথমেই মাসিক ৭,০০০/- ভাড়ায় একটি শেড নিয়ে। প্রথম অবস্থায় খামার শুরু করার জন্য মাসিক এত পরিমাণ ভাড়া একটু বেশীই।
• খামারে কাজ করার জন্য আদিব সাহেব একজন অদক্ষ লোক নিয়োগ দিয়েছিল। এটি একটা বড় ভুল কারণ খামার কোন মেশিন নয় যে সুইচ টিপলেই প্রোডাকশন হবে। এখানে নিবিড় পরিচর্যা ও দক্ষ লোকের কোন বিকল্প নেই।
• আদিব সাহেবের খামারের কোন সীমানা প্রাচীর না থাকায় বাহিরের হাঁস-মুরগী ও পাখী খাবারের লোভে খামার এলাকায় ভীড় করত ফলে এদের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ সহজেই ছড়িয়ে পরত।
• দর্শনার্থীদের ভীড়ের কারনে খামারের টার্কি পাখীগুলো সবসময় আতংকে থাকত আর তাছাড়া মানুষের অবাদ চলাচল রোগ ছড়ানোর অন্যতম বাহণ।
• আদিব সাহেবের কর্মচারী খামারকে অরক্ষিত রেখেই ৩ বেলা বাড়িতে খেতে যেত ও দির্ঘ সময় খামারের বাহিরে থাকায় টার্কি পাখীগুলোর পরিচর্যা ও অসুস্থ পাখীর সেবায় ঘাটতি হত।
• খামারের ব্যয় নির্বাহের জন্য আদিব সাহেব তার আত্মীয় স্বজনের কাছে হাত পেতেছিল যা কখনই কাম্য নয়। কারণ এতে আত্মীয়তার সম্পর্কের অবনতি হয়।
• খামারে কাজ করার জন্য আদিব সাহেব একজন অদক্ষ লোক নিয়োগ দিয়েছিল। এটি একটা বড় ভুল কারণ খামার কোন মেশিন নয় যে সুইচ টিপলেই প্রোডাকশন হবে। এখানে নিবিড় পরিচর্যা ও দক্ষ লোকের কোন বিকল্প নেই।
• আদিব সাহেবের খামারের কোন সীমানা প্রাচীর না থাকায় বাহিরের হাঁস-মুরগী ও পাখী খাবারের লোভে খামার এলাকায় ভীড় করত ফলে এদের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ সহজেই ছড়িয়ে পরত।
• দর্শনার্থীদের ভীড়ের কারনে খামারের টার্কি পাখীগুলো সবসময় আতংকে থাকত আর তাছাড়া মানুষের অবাদ চলাচল রোগ ছড়ানোর অন্যতম বাহণ।
• আদিব সাহেবের কর্মচারী খামারকে অরক্ষিত রেখেই ৩ বেলা বাড়িতে খেতে যেত ও দির্ঘ সময় খামারের বাহিরে থাকায় টার্কি পাখীগুলোর পরিচর্যা ও অসুস্থ পাখীর সেবায় ঘাটতি হত।
• খামারের ব্যয় নির্বাহের জন্য আদিব সাহেব তার আত্মীয় স্বজনের কাছে হাত পেতেছিল যা কখনই কাম্য নয়। কারণ এতে আত্মীয়তার সম্পর্কের অবনতি হয়।
শিক্ষাঃ
(১) নতুন অবস্থায় খামার করতে চাইলে প্রথমে ছোট্ট পরিসরে চেষ্টা করতে হবে নিজের জমিতে যতটা সম্ভব খরচ কমিয়ে শেড তৈরী করা যাতে মাসিক ভাড়া দিতে না হয়।
(২)টার্কি খামার কখনই আবাসিক এলাকায় করা ঠিক নয়।
(৩) টার্কি খামারে কাজ করার জন্য অদক্ষ লোক কখনই নিয়োগ দেয়া যাবেনা।
(৪) খামারের চারপাশে বিচরণের জায়গার বাহিরাংশে প্রাচীর অথবা লোহার তারের বেড়া দিতে হবে যাতে বাহিরের লোকজন ও পশু পাখী খামার এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে।
(৫) টার্কি খামারের বাহির প্রাচীরের গেট সবসময় বন্ধ রাখতে হবে।
(৬)টার্কি খামারে নিবিড় পরিচর্যার বিকল্প কিছু নেই। এজন্য খামার কর্মচারীর সার্বক্ষণিক খামার এলাকায় থাকতে হবে। নিতান্ত বাহিরে যেতেই হলে বিকল্প কোন লোক রেখে যেতে হবে।
(৭) দর্শনার্থীদের অবাদ প্রবেশের সুযোগ দেয়া যাবেনা। নিতান্তই যদি দিতে হয় তাহলে জীবানুনাশক স্প্রে করে ও খামারের নির্ধারিত এ্যাপ্রোন, জুতা ব্যবহার করতে হবে।
(৮) খামার এলাকা প্রতিদিন জীবানুনাশক স্প্রে করতে হবে।
(৯) খামারের মুল ফটকের সামনে জীবানুনাশক ফুট টাব তৈরী করতে হবে।
(১০) কোন টার্কি খামার হতে বা হাট হতে টার্কি পাখী সংগ্রহ করলে প্রথমে অন্য জায়গায় রেখে কিছুদিন অবজার্ভ করে পরে খামারে ডুকাতে হবে।
(২)টার্কি খামার কখনই আবাসিক এলাকায় করা ঠিক নয়।
(৩) টার্কি খামারে কাজ করার জন্য অদক্ষ লোক কখনই নিয়োগ দেয়া যাবেনা।
(৪) খামারের চারপাশে বিচরণের জায়গার বাহিরাংশে প্রাচীর অথবা লোহার তারের বেড়া দিতে হবে যাতে বাহিরের লোকজন ও পশু পাখী খামার এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে।
(৫) টার্কি খামারের বাহির প্রাচীরের গেট সবসময় বন্ধ রাখতে হবে।
(৬)টার্কি খামারে নিবিড় পরিচর্যার বিকল্প কিছু নেই। এজন্য খামার কর্মচারীর সার্বক্ষণিক খামার এলাকায় থাকতে হবে। নিতান্ত বাহিরে যেতেই হলে বিকল্প কোন লোক রেখে যেতে হবে।
(৭) দর্শনার্থীদের অবাদ প্রবেশের সুযোগ দেয়া যাবেনা। নিতান্তই যদি দিতে হয় তাহলে জীবানুনাশক স্প্রে করে ও খামারের নির্ধারিত এ্যাপ্রোন, জুতা ব্যবহার করতে হবে।
(৮) খামার এলাকা প্রতিদিন জীবানুনাশক স্প্রে করতে হবে।
(৯) খামারের মুল ফটকের সামনে জীবানুনাশক ফুট টাব তৈরী করতে হবে।
(১০) কোন টার্কি খামার হতে বা হাট হতে টার্কি পাখী সংগ্রহ করলে প্রথমে অন্য জায়গায় রেখে কিছুদিন অবজার্ভ করে পরে খামারে ডুকাতে হবে।
Post a Comment