টার্কি পালন খামারের জন্য স্থান নির্বাচন | Select place for turkey pet farm

সাহেবের মন ভাল নেই! কেননা টার্কি পালণের দ্বিতীয় প্রচেষ্টায়ও সে ব্যর্থ। তবে কি তাকে দিয়ে টার্কি পালণ হবেনা ? ভাবতেই সাহেবের চোখের কোনে জল চলে আসল। তার এতদিনের লালিত স্বপ্ন, একটি শখের টার্কি খামার করার স্বপ্ন তাহলে কি কোনদিনও সফলতার মুখ দেখবেনা ?

স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় আর্ত সাহেব আনমনে হাটতে হাটতে নিজের অজান্তেই তার চীরচেনা বংশী নদীর তীরে পৌছে গেল। আদিব সাহেবের কৈশরের সেই দূরন্ত দিনগুলোর কথা স্মৃতীর পটে একের পর এক জড়ো হতে লাগল। নদীতে ঝাপাঝাপি, সাঁতার, বাল্য বন্ধুদের সাথে কাদা ছোড়াছুড়ি। হঠাৎ তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটির কথা মনে আসতেই তার মুখটা উজ্জল হয়ে উঠল। এক নিমিষেই মনের সব গ্লাণী দূরে সরে গেল। কেননা তার বন্ধুটি পড়াশুনায় অতটা ভাল না থাকায় তার পরিবারের ইচ্ছায় প্রবাসে যাওয়ার চেষ্টায় বারবার ব্যর্থ হয়েও হাল না ছাড়ায় টানা ০৪ বারের প্রচেষ্টায় এখন সে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রীন কার্ডধারী। শুনেছে অনেক টাকা মাইনে পায়। মাঝে মাঝে কিসব অদ্ভূত ঢঙে ফিরিঙী মেয়েদের সাথে নিয়ে ফেসবুকে ছবি আপলোড দেয়।
আদিব সাহেবের চোখের সামনে ভেসে উঠল ছেলেবেলায় তার স্কুল শিক্ষক মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের গল্প শুনিয়েছিল।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন (জন্ম: ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৮০৯ - মৃত্যু: ১৫ এপ্রিল, ১৮৬৫) । তিনি ২৩ বছর বয়সে চাকুরী হারান এবং রাজনীতিতে পরাজিত হন। ২৪ বছর বয়সে ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে ব্যবসার মূলধন হারান। ২৬ বছর বয়সে হারান প্রিয়তমা প্রেমিকা অ্যান কে। ২৭ বছর বয়সে তার নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়। দেখতে ও সুশ্রী ছিলেননা, জন্মেছিলেন অতি দরিদ্র ঘরে। ২৯ বছর বয়সে স্পীকার পদে পরাজিত হন। ৩৪ বছর বয়সে কংগ্রেস প্রার্থী নির্বাচনে হেরে যান। ৩৯ বছর বয়সে কংগ্রেস প্রার্থী নির্বাচনে আবার পরাজিত হন। ৪০ বছর বয়সে ভূমি অফিসার পদে রিজেক্ট বা বাদ পড়েন। সিনেট নির্বাচনে হেরে যান ৪৫ বছর বয়সে। ৪৭ বছর বয়সে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে গিয়ে হেরে যান। ৪৯ বছর বয়সে সিনেট নির্বাচনে আবারো হারেন, অবশেষে ৫২ বছর বয়সে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
আদিব সাহেবের বন্ধুর অতীত ও স্যারের বলা সেই আব্রাহাম লিংকনের গল্প তাকে নতুন করে উজ্জিবীত করল।
আদিব সাহেব এবার তার ১ম ও ২য় বারের ভুল গুলো খুজে বের করতে লাগল। ভুল গুলো শোধরে নতুন করে পথ চলতে চাইল। আদিব সাহেব কিছু সফল উদ্যোক্তার সাথে কথা বলল এবং জানতে পারল যে, কোন ব্যবসায় এর সাফল্যের মুল চাবিকাঠি হচ্ছে ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরা। ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরলে স্বাভাবিক নিয়মেই আয় বেড়ে যাবে। তবে সাথে সাথে কঠোর পরিশ্রম ও উৎপাদনের ধারাবাহিকতাও ঠিক রাখতে হবে। যেহেতু খামারের ভাড়া+বিদ্যুৎ বিল+শ্রমিকের বেতন+খামারের খাবার খরচ + অন্যান্য খরচ মিলিয়ে এক বিশাল অংকের টাকা আদিব সাহেবকে প্রতিমাসে দিতে হত, সেহেতু সে এবার ভাবতে লাগল কিভাবে খরচ কমিয়ে আনা যায়।
তার এই ভাবনা থেকে সে প্রথমেই টার্গেট নিল নিজেদের জমিতে স্বল্প পরিসরে ছোট আকারে খামার গড়ে তুলবে। আর কর্মচারী হিসাবে অভিজ্ঞ কাউকে না পেলে সে নিজেই শ্রমিকের কাজ করবে। কিন্তু তাতেও প্রতিবদ্ধকতার শেষ নেই। তারমত একজন উচ্চ শিক্ষিত গ্রাজুয়েট ছেলে লেখা পড়া শেষ করে শেষে কিনা মুরগীর বিষ্ঠা পরিষ্কার করবে ? যদিও এতে আদিব সাহেবের কোন আপত্তি নেই কিন্তু প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন এমনকি খোদ পরিবারের সদস্যদের আচরণে আদিব সাহেবের বিরম্বনার শেষ নেই। আদিব সাহেবের অবস্থা তখন সেই কবিতার লাইন দুটির মত-
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে
পাছে লোকে কিছু বলে।
আদিব সাহেব ভাবল নিন্দুকের নিন্দা কথাকে সে কেন কানে নিবে ? যে যাই বলুক তার স্বপ্ন সে পূরণ করবেই।
আদিব সাহেব প্রথমেই টার্কি পালণের জন্য উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করল। জায়গা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সে অভিজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী যে বিষয়গুলোর দিকে গুরুত্ব দিলঃ
• প্রথমেই আদিব সাহেবের খামারের জমির পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। অভিজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী খামারের মুল স্থাপনার চাইতে খামার এলাকায় প্রায় দেড়গুণ বেশী জায়গা নিতে হবে।
• খামারের জায়গাটি উচু হতে হবে যেন বণ্যা বা অতি বৃষ্টি হলে খামার এলাকায় পানি প্রবেশ না করে।
• খামারের জমির মাটি বেলে বা বেলে দোঁআশ হলে ভাল হয়। কেননা খামারের মাটির পানি শোষণ ক্ষমতা বেশী হওয়া আবশ্যক।
• খামারের চারপাশে ড্রেইনেজ ব্যবস্থা ভাল রাখতে হবে যাতে পানি দ্রুত চলে যায়।
• খামারের জায়গাটি শহুরে বা মানুষের কোলাহলমুক্ত স্থানে হতে হবে। সেক্ষেত্রে লক্ষনীয় মুল সড়ক হতে একটু ভিতরে হলে ভাল হয়।
• মুল সড়ক থেকে ভিতরে হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা যেন অবশ্যই ভাল হয়।
• বিদ্যুত ও বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা রাখতে হবে।
• আদিব সাহেবকে আরো লক্ষ্য রাখতে হবে সে যে এলাকায় খামার করবে সেখানে সস্তায় বা সহজে মুরগীর খাবার পাওয়ার সুব্যবস্থা আছে কিনা ?
• আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আদিব সাহেবকে খেয়াল করতে হবে যেন তার উৎপাদিত টার্কিগুলো সে সহজে বাজারজাত করতে পারে এমন এলাকায় খামার স্থাপন করতে হবে।
আদিব সাহেব তার চাহিদামত উপযুক্ত জায়গা খুজে পেল। সামনে তার জন্য আরো কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। খামার পরিকল্পনার প্রধান বিষয়গুলোই রয়ে গেছে।
১। বাসস্থান ব্যবস্থাপনা
২। খাদ্য ব্যবস্থাপনা
৩। রোগ বালাই দমন ব্যবস্থাপনা

Related product you might see:

Share this product :

Post a Comment