Latest Products

গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পঃ বর্তমান বাস্তবতা ও করনীয়

ভাই, ষাঁড়ে লাভ না লস???
১০০ জনে মধ্যে ৯০ জন খামারী বলবে লস!!!
আর ৪ মাস পরেই কুরবানি ঈদ। ঈদ-কে সামনে রেখে অনেকেই এখন গরু কিনবেন মোটাতাজা করার উদ্দেশ্যে।
এছাড়াও সারা বছরেই কম বেশি গরু মোটাতাজাকরন লাভজনক।
কিন্তু বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ খামারী এই প্রকল্পে নিজের পুজি হারিয়ে ফেলছেন।
এর কারন অনেক!
আমি সব কারন খুজতে যাবো না, কারন কি কি সেটা আপনিও জানেন। চাইলেই তো আপনি বর্ডার থেকে গরু প্রবেশ বন্ধ করতে পারবেন না!!! যেটি পারবেন সেটি নিয়েই আলোচনা করবো-
আমি কিছু কারন তুলে ধরবো-
১। পরিকল্পনার অভাবঃ
মোটাতাজাকরন বলতে আমরা কি বুজি?
স্বল্প সময়ে (৩ থেকে ৪ মাস) অধিক প্রোটিন যুক্ত খাবার ও অধিক যত্নের মাধ্যমে দ্রুত মাংস বৃদ্ধির প্রক্রিয়া।
প্রকল্পের মেয়াদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২। চোখের মাপে গরু ক্রয়ঃ
চোখের মাপে গরু ক্রয় বন্ধ করুন। মাংসের দামে (ওজন করে) গরু ক্রয় করে আবার মাংসের দাম বিবেচনায় গরু বিক্রি করুন। বর্তমানে মাংসের মুল্য কেজি প্রতি স্থানভেদে ৪০০/- থেকে ৪৮০/- টাকা।
ওজন করে গরু কিনলে আপনি বুজতে পারবেন আপনি কত টাকা খরচ করে কত কেজি মাংস উৎপাদন করলেন। আপনার লাভ বা ক্ষতি সহজে বুজতে পারবেন।
৩। গরুর বয়স ও জাতঃ
দেশি ষাঁড় হলে- মোটাতাজাকরনের জন্য ২ বছরের দেশি গরু আদর্শ। এ সময় দ্রুত মাংস উৎপাদন সহজ হয়।
ক্রস বা উচ্চ মাংস উৎপাদন জাতের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১২ থেকে ১৪ মাস হওয়া জরুরী।
৪। খাবার ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্যঃ
গরুর বরাদ্দকৃত খাবার দিনে ২ বারে না দিয়ে কমপক্ষে ৩/৪ বার ভাগ করে দেওয়া। এতে খাদ্য গ্রহন ও খাদ্য পরিপাক ভাল হবে।
সুষম দানাদার খাবার গরুর ৭৫ কেজি ওজনের অনুপাতে ১ কেজি সুষম দানাদার খাবার দিনে নিশ্চিত করতে হবে।
গরমে প্রতিদিন কমপক্ষে ১ বার গোসল করাতে হবে।
মোটাতাজাকরন প্রকল্পের জন্য এঢ়ে/ষাঁড় গরু বাছাই করা গুরুত্বপূর্ণ। কারন বকনা/গাই গরু থেকে ষাঁড়/এঢ়ে গরুর মাংস উৎপাদনের হার তুলনামুলক অনেক বেশি।
ছোট ছোট বাছুর ক্রয় মোটাতাজাকরন প্রকল্পের জন্য বড় ঝুকি!
গরু ক্রয়ের পর ৪/৫ দিনের মধ্য কৃমিমুক্ত করাটাও খুবই জরুরী। সাথে হজমক্রিয়া যাহাতে ঠিক থাকে এজন্য কৃমিনাশক দেওয়ার ৩/৪ দিন পর লিভারটনিক ও প্রিবায়োটিক ও প্রোবায়োটিক খাওয়াতে হবে।
নারিশ ক্যাটল ফিড (দ্রুত মাংস বৃদ্ধির জন্য) আপনার ষাঁড়/এঢ়ে গরুকে ৭৫ কেজি অনুপাতে প্রতিদিন ১ কেজি ফিড খাওয়ান।
ইনশাআল্লাহ্ সফল হবেন।
পরামর্শ ও সহযোগীতায়
ডাঃমোঃ শাহ্-আজম খান
(DVM, MS in Animal Science)
নারিশ পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারী লিমিটেড।
মোবা- ০১৭৩৩০৫৯৯৩৬

গরুর লাইভ ওয়েট বের করার পদ্ধতি / সুত্র
উপরের ছবি অনুযায়ী (ইন্চি)

বুকের বেড় (G)

দৈর্ঘ (L)

সূত্র = (G)2* L/ 660 = Kg.
(বুকের বেড় (গুন) বুকের বেড় (গুন) দৈর্ঘ্য (ভাগ) ৬৬০
তাহলে কেজি তে চলে আসবে)।
ভাই, ষাঁড়ে লাভ না লস???
১০০ জনে মধ্যে ৯০ জন খামারী বলবে লস!!!
আর ৪ মাস পরেই কুরবানি ঈদ। ঈদ-কে সামনে রেখে অনেকেই এখন গরু কিনবেন মোটাতাজা করার উদ্দেশ্যে।
এছাড়াও সারা বছরেই কম বেশি গরু মোটাতাজাকরন লাভজনক।
কিন্তু বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ খামারী এই প্রকল্পে নিজের পুজি হারিয়ে ফেলছেন।
এর কারন অনেক!
আমি সব কারন খুজতে যাবো না, কারন কি কি সেটা আপনিও জানেন। চাইলেই তো আপনি বর্ডার থেকে গরু প্রবেশ বন্ধ করতে পারবেন না!!! যেটি পারবেন সেটি নিয়েই আলোচনা করবো-
আমি কিছু কারন তুলে ধরবো-
১। পরিকল্পনার অভাবঃ
মোটাতাজাকরন বলতে আমরা কি বুজি?
স্বল্প সময়ে (৩ থেকে ৪ মাস) অধিক প্রোটিন যুক্ত খাবার ও অধিক যত্নের মাধ্যমে দ্রুত মাংস বৃদ্ধির প্রক্রিয়া।
প্রকল্পের মেয়াদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২। চোখের মাপে গরু ক্রয়ঃ
চোখের মাপে গরু ক্রয় বন্ধ করুন। মাংসের দামে (ওজন করে) গরু ক্রয় করে আবার মাংসের দাম বিবেচনায় গরু বিক্রি করুন। বর্তমানে মাংসের মুল্য কেজি প্রতি স্থানভেদে ৪০০/- থেকে ৪৮০/- টাকা।
ওজন করে গরু কিনলে আপনি বুজতে পারবেন আপনি কত টাকা খরচ করে কত কেজি মাংস উৎপাদন করলেন। আপনার লাভ বা ক্ষতি সহজে বুজতে পারবেন।
৩। গরুর বয়স ও জাতঃ
দেশি ষাঁড় হলে- মোটাতাজাকরনের জন্য ২ বছরের দেশি গরু আদর্শ। এ সময় দ্রুত মাংস উৎপাদন সহজ হয়।
ক্রস বা উচ্চ মাংস উৎপাদন জাতের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১২ থেকে ১৪ মাস হওয়া জরুরী।
৪। খাবার ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্যঃ
গরুর বরাদ্দকৃত খাবার দিনে ২ বারে না দিয়ে কমপক্ষে ৩/৪ বার ভাগ করে দেওয়া। এতে খাদ্য গ্রহন ও খাদ্য পরিপাক ভাল হবে।
সুষম দানাদার খাবার গরুর ৭৫ কেজি ওজনের অনুপাতে ১ কেজি সুষম দানাদার খাবার দিনে নিশ্চিত করতে হবে।
গরমে প্রতিদিন কমপক্ষে ১ বার গোসল করাতে হবে।
মোটাতাজাকরন প্রকল্পের জন্য এঢ়ে/ষাঁড় গরু বাছাই করা গুরুত্বপূর্ণ। কারন বকনা/গাই গরু থেকে ষাঁড়/এঢ়ে গরুর মাংস উৎপাদনের হার তুলনামুলক অনেক বেশি।
ছোট ছোট বাছুর ক্রয় মোটাতাজাকরন প্রকল্পের জন্য বড় ঝুকি!
গরু ক্রয়ের পর ৪/৫ দিনের মধ্য কৃমিমুক্ত করাটাও খুবই জরুরী। সাথে হজমক্রিয়া যাহাতে ঠিক থাকে এজন্য কৃমিনাশক দেওয়ার ৩/৪ দিন পর লিভারটনিক ও প্রিবায়োটিক ও প্রোবায়োটিক খাওয়াতে হবে।
নারিশ ক্যাটল ফিড (দ্রুত মাংস বৃদ্ধির জন্য) আপনার ষাঁড়/এঢ়ে গরুকে ৭৫ কেজি অনুপাতে প্রতিদিন ১ কেজি ফিড খাওয়ান।
ইনশাআল্লাহ্ সফল হবেন।
পরামর্শ ও সহযোগীতায়
ডাঃমোঃ শাহ্-আজম খান
(DVM, MS in Animal Science)
নারিশ পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারী লিমিটেড।
মোবা- ০১৭৩৩০৫৯৯৩৬

গরুর লাইভ ওয়েট বের করার পদ্ধতি / সুত্র
উপরের ছবি অনুযায়ী (ইন্চি)

বুকের বেড় (G)

দৈর্ঘ (L)

সূত্র = (G)2* L/ 660 = Kg.
(বুকের বেড় (গুন) বুকের বেড় (গুন) দৈর্ঘ্য (ভাগ) ৬৬০
তাহলে কেজি তে চলে আসবে)।
আরো পড়ুন>

উন্নত জাতের গাভীর বৈশিষ্ট্য ! গরু চেনার উপায় (ডেইরী খামারিদের জন্য)


ডেইরি খামার লাভজনক করতে চাইলে উন্নত জাতের গাভী নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিষয়টি ঠিকমত পালন করতে না পারলে ডেইরি খামার লাভজনক তো হবেই না উপরন্তু পুঁজিও হারাবেন। তাই গাভী কেনার আগে অবশ্যই ভালো দুধ দেওয়ার লক্ষণবিশিষ্ট গাভীটিই নির্বাচন করতে হবে। কারণ দুধ উৎপাদনের ক্ষমতা সব গাভীর এক রকম নয়। সুষম খাবার, উন্নত বাসস্থান, সঠিক পরিচর্যাসহ আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে লালন-পালন করার পরও শুধু গাভী নির্বাচনে ভুল করলে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দুধ উৎপাদন সম্ভব হবে না। আজ ভালো জাতের দুগ্ধবতী গাভী নির্বাচনের কিছু লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে খামারিদের ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
দৈহিক গঠনঃ- দেহের আকার বড় হবে, পেট থাকবে ঢিলাঢালা, পা শিথিল, চওড়া কপাল ও মাথা ছোট একটি উৎকৃষ্ট দুগ্ধবতী গাভীর বৈশিষ্ট্য। ভালো জাতের গাভীর শরীরের চামড়া থাকবে পাতলা, নরম ও আলগা থাকে। দুধেল গাভীর ত্বকে থাকে চাকচিক্য। বুক বেশ গভীর ও প্রশস্ত। সামনের ও পেছনের পা দুটির মধ্যে যথেষ্ট ফাঁক থাকবে। পেছনের পা সামনের পায়ের চেয়ে বড় হয়। গাভীর মুখগহ্বর ও নাসিকা প্রশস্ত হবে। উৎকৃষ্ট গাভীর চোখ সবসময় উজ্জ্বল হবে। দেহ তেমন চর্বিবহুল হবে না। দুগ্ধবতী গাভীর শরীর সাধারণত অপ্রয়োজনীয় পেশিমুক্ত থাকে।
গোঁজ আকৃতির দেহঃ- ভালো জাতের গাভীর পেছনের দিক সামনের দিক অপেক্ষা প্রশস্ত হবে। তাই উন্নত দুগ্ধবতী গাভীকে পেছনের দিক থেকে গোঁজকৃতি দেখায়। প্রশস্ত চওড়া পাছা ও পেছনের পা দুটির মধ্যে যথেষ্ট ফাঁক উন্নত গাভীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পেছনের পা দুটির মধ্যে পর্যাপ্ত ফাঁক থাকলে ওলান বড় হওয়ার সুযোগ থাকে।
ওলানঃ- ভালো গাভীর ওলান বেশ বড়, চওড়া, মেদহীন এবং কক্ষগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। ওলান সামনে ও পেছনে সমভাবে প্রসারিত থাকে। ওলানের পেছন দিক সুডৌল ও প্রশস্ত হয়। পাশ থেকে ওলানের তলদেশ সমতল দেখায়। দুগ্ধবতী গাভীর ওলান স্পঞ্জের ন্যায় নরম থাকে যা দুধ দোহনের পূর্বে বড় দেখায় এবং পরে সংকুচিত হয়ে ঝুলে থাকে। অধিক মাংসল ও চর্বিযুক্ত ওলান ভালো নয়। এ ধরনের ওলানে দুধ ধারনের জায়গা কম থাকে।
বাঁটঃ- তাছাড়া উৎকৃষ্ট গাভীর বাঁটগুলো প্রায় একই মাপের এবং সমান দূরত্বে থাকবে। বাঁটের আকার দোহন উপযোগী হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
দুধের শিরাঃ- উত্তম দুগ্ধবতী গাভীর পেটের নিচে ওলানের সঙ্গে সংযুক্ত সুস্পষ্ট শাখা-প্রশাখাযুক্ত দুধের শিরা থাকে।
প্রকৃতিঃ- দুগ্ধবতী গাভী শান্ত, ধীরস্থির ও মাতৃভাবাপন্ন হয়। উন্নত দুগ্ধবতী গাভী সাধারণ ভীত প্রকৃতির হয়, দুধ দোহনকালে অস্থিরতা প্রকাশ করে না। এদের হাঁটাচলাও ধীর ও মন্থর প্রকৃতির হয়।
বয়সঃ- সাধারণত একটি গাভী প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত বাচ্চা ও দুধ উৎপাদন করে। সুতরাং গাভীর বয়স জানা আবশ্যক। তাছাড়া গাভীর প্রথম প্রসবে যেসব বিপদের সম্ভাবনা থাকে সেগুলো একবার প্রসবের পর দূর হয়ে যায়।
দুধ উৎপাদনঃ- সাধারণত পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদনকারী গাভী উৎকৃষ্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে অনেক গাভী দুধ বেশি দিলেও দুধ পাতলা হয় এবং ফ্যাট বা চর্বির পরিমাণ কম থাকে। সুতরাং দুধে ফ্যাটের পরিমাণ যাচাই করে গাভীর উৎকৃষ্টতা বিচার করা প্রয়োজন। স্বাভাবিক ফ্যাটযুক্ত দুধ ঘন ও ঈষৎ হলদে বর্ণের হয়।
লেজঃ- লেজ দেখেও ভাল জাতের গাভীর বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করা যায়। ভালো জাতের গাভীর লেজ সবসময় লম্বা হয়। লেজের অগ্রভাগের চুলের গুচ্ছও বড় হয়।
বংশঃ- বংশ ইতিহাস জেনেও দুধেল গাভীর বৈশিষ্ট্য যাচাই করা যায়। খনার বচনে আছে, ‘যেমন মা তেমন ছা’। তাই গাভীর মা-নানীর দুধ দেওয়ার ক্ষমতা যাচাই করে নিতে পারলে উৎকৃষ্ট দুগ্ধবতী গাভী নির্বাচন ও মূল্যায়ন সহজ হয়।
ডেইরি খামার লাভজনক করতে চাইলে উন্নত মান ও জাতের গাভী নির্বাচন সর্ব অপেক্ষা গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ খামারির সাহায্য নিতে হবে। কাজটি যদিও যথেষ্ট ধৈর্য ও পরিশ্রমের, তারপরও করতে পারলে লোকসান তো হবেই না বরং আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য মাত্রায় পৌছাতে পারবেন ইনশা আল্লাহ।
আনু মোহাম্মদ
anumohammad79@gmail.com

ডেইরি খামার লাভজনক করতে চাইলে উন্নত জাতের গাভী নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিষয়টি ঠিকমত পালন করতে না পারলে ডেইরি খামার লাভজনক তো হবেই না উপরন্তু পুঁজিও হারাবেন। তাই গাভী কেনার আগে অবশ্যই ভালো দুধ দেওয়ার লক্ষণবিশিষ্ট গাভীটিই নির্বাচন করতে হবে। কারণ দুধ উৎপাদনের ক্ষমতা সব গাভীর এক রকম নয়। সুষম খাবার, উন্নত বাসস্থান, সঠিক পরিচর্যাসহ আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে লালন-পালন করার পরও শুধু গাভী নির্বাচনে ভুল করলে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দুধ উৎপাদন সম্ভব হবে না। আজ ভালো জাতের দুগ্ধবতী গাভী নির্বাচনের কিছু লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে খামারিদের ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
দৈহিক গঠনঃ- দেহের আকার বড় হবে, পেট থাকবে ঢিলাঢালা, পা শিথিল, চওড়া কপাল ও মাথা ছোট একটি উৎকৃষ্ট দুগ্ধবতী গাভীর বৈশিষ্ট্য। ভালো জাতের গাভীর শরীরের চামড়া থাকবে পাতলা, নরম ও আলগা থাকে। দুধেল গাভীর ত্বকে থাকে চাকচিক্য। বুক বেশ গভীর ও প্রশস্ত। সামনের ও পেছনের পা দুটির মধ্যে যথেষ্ট ফাঁক থাকবে। পেছনের পা সামনের পায়ের চেয়ে বড় হয়। গাভীর মুখগহ্বর ও নাসিকা প্রশস্ত হবে। উৎকৃষ্ট গাভীর চোখ সবসময় উজ্জ্বল হবে। দেহ তেমন চর্বিবহুল হবে না। দুগ্ধবতী গাভীর শরীর সাধারণত অপ্রয়োজনীয় পেশিমুক্ত থাকে।
গোঁজ আকৃতির দেহঃ- ভালো জাতের গাভীর পেছনের দিক সামনের দিক অপেক্ষা প্রশস্ত হবে। তাই উন্নত দুগ্ধবতী গাভীকে পেছনের দিক থেকে গোঁজকৃতি দেখায়। প্রশস্ত চওড়া পাছা ও পেছনের পা দুটির মধ্যে যথেষ্ট ফাঁক উন্নত গাভীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পেছনের পা দুটির মধ্যে পর্যাপ্ত ফাঁক থাকলে ওলান বড় হওয়ার সুযোগ থাকে।
ওলানঃ- ভালো গাভীর ওলান বেশ বড়, চওড়া, মেদহীন এবং কক্ষগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। ওলান সামনে ও পেছনে সমভাবে প্রসারিত থাকে। ওলানের পেছন দিক সুডৌল ও প্রশস্ত হয়। পাশ থেকে ওলানের তলদেশ সমতল দেখায়। দুগ্ধবতী গাভীর ওলান স্পঞ্জের ন্যায় নরম থাকে যা দুধ দোহনের পূর্বে বড় দেখায় এবং পরে সংকুচিত হয়ে ঝুলে থাকে। অধিক মাংসল ও চর্বিযুক্ত ওলান ভালো নয়। এ ধরনের ওলানে দুধ ধারনের জায়গা কম থাকে।
বাঁটঃ- তাছাড়া উৎকৃষ্ট গাভীর বাঁটগুলো প্রায় একই মাপের এবং সমান দূরত্বে থাকবে। বাঁটের আকার দোহন উপযোগী হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
দুধের শিরাঃ- উত্তম দুগ্ধবতী গাভীর পেটের নিচে ওলানের সঙ্গে সংযুক্ত সুস্পষ্ট শাখা-প্রশাখাযুক্ত দুধের শিরা থাকে।
প্রকৃতিঃ- দুগ্ধবতী গাভী শান্ত, ধীরস্থির ও মাতৃভাবাপন্ন হয়। উন্নত দুগ্ধবতী গাভী সাধারণ ভীত প্রকৃতির হয়, দুধ দোহনকালে অস্থিরতা প্রকাশ করে না। এদের হাঁটাচলাও ধীর ও মন্থর প্রকৃতির হয়।
বয়সঃ- সাধারণত একটি গাভী প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত বাচ্চা ও দুধ উৎপাদন করে। সুতরাং গাভীর বয়স জানা আবশ্যক। তাছাড়া গাভীর প্রথম প্রসবে যেসব বিপদের সম্ভাবনা থাকে সেগুলো একবার প্রসবের পর দূর হয়ে যায়।
দুধ উৎপাদনঃ- সাধারণত পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদনকারী গাভী উৎকৃষ্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে অনেক গাভী দুধ বেশি দিলেও দুধ পাতলা হয় এবং ফ্যাট বা চর্বির পরিমাণ কম থাকে। সুতরাং দুধে ফ্যাটের পরিমাণ যাচাই করে গাভীর উৎকৃষ্টতা বিচার করা প্রয়োজন। স্বাভাবিক ফ্যাটযুক্ত দুধ ঘন ও ঈষৎ হলদে বর্ণের হয়।
লেজঃ- লেজ দেখেও ভাল জাতের গাভীর বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করা যায়। ভালো জাতের গাভীর লেজ সবসময় লম্বা হয়। লেজের অগ্রভাগের চুলের গুচ্ছও বড় হয়।
বংশঃ- বংশ ইতিহাস জেনেও দুধেল গাভীর বৈশিষ্ট্য যাচাই করা যায়। খনার বচনে আছে, ‘যেমন মা তেমন ছা’। তাই গাভীর মা-নানীর দুধ দেওয়ার ক্ষমতা যাচাই করে নিতে পারলে উৎকৃষ্ট দুগ্ধবতী গাভী নির্বাচন ও মূল্যায়ন সহজ হয়।
ডেইরি খামার লাভজনক করতে চাইলে উন্নত মান ও জাতের গাভী নির্বাচন সর্ব অপেক্ষা গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ খামারির সাহায্য নিতে হবে। কাজটি যদিও যথেষ্ট ধৈর্য ও পরিশ্রমের, তারপরও করতে পারলে লোকসান তো হবেই না বরং আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য মাত্রায় পৌছাতে পারবেন ইনশা আল্লাহ।
আনু মোহাম্মদ
anumohammad79@gmail.com
আরো পড়ুন>

উন্নত জাতের গাভী থেকে বেশী বেশি দুধ পাওয়ার উপায় ।

বাংলাদেশে প্রতিবছর দুধের চাহিদা ১২.৫২ মিলিয়ন মেট্রিক টন, উৎপাদন হচ্ছে প্রতিবছর ২.২৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন, ঘাটতি প্রতিবছর ১০.২৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন। চাহিদার আলোকে আমাদের দেশে ছোট-বড় প্রায় ৪৭,৭১০টি ডেইরি খামার গড়ে উঠেছে। বর্তমানে শংকর জাতের গাভী পালনের মাধ্যমে দুগ্ধ খামার স্থাপন একটি লাভজনক ব্যবসা। ফলে গাভী পালনে উন্নত ব্যবস্থাপনা, সঠিক প্রজনন, সুষম খাদ্য, রোগদমন ও প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে খামারিদের জানা প্রয়োজন।

ভালজাতের গাভীর বৈশিষ্ট্য মাথা : হালকা ও ছোট আকার, কপাল প্রশসত্দ, উজ্জ্বল চোখ, খাদ্যের প্রতি আগ্রহ। দৈহিক বৈশিষ্ট্য : দেহের সামনে দিক হালকা, পিছনের দিক ভারী ও সুসংগঠিত, দৈহিক আকার আকর্ষণীয়, শরীরের গঠন ঢিলা। পাজর : পাজরের হাড় স্পষ্ট, হাড়ের গঠন সামঞ্জস্যপুর্ণ। চামড়া : চামড়া পাতলা, চামড়ার নীচে অহেতুক চর্বি জমা থাকবে না, চামড়ার রঙ উজ্জ্বল, লোম মসৃণ ও চকচকে হবে। ওলান : ওলান বড় সুগঠিত ও দেহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, বাটগুলো একই আকারের হবে। চারবাট সমান দূরত্বে ও সমানত্দরাল হবে। দুগ্ধশিরা : দুগ্ধশিরা মোটা ও স্পষ্ট, তলপেটে নাভীর পাশ দিয়ে দুগ্ধশিরা আঁকাবাঁকাভাবে বিস্তৃত থাকবে।

খামার ব্যবস্থাপনা: খামার ব্যবস্থাপনা এক প্রকার কৌশল যার মাধ্যমে খামারের সম্পদ, সুযোগ ও সময়ের সমন্বয় ঘটানো যায়। সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার সুফল হল-
১. সম্পদের মিতব্যয়িতা
২. স্বল্প সময়ে ফললাভ
৩. স্বল্প সময়ে অধিক উৎপাদন
৪. শক্তি ও শ্রমের অপচয় রোধ
৫. উৎপাদনে গুণগতমান ও উৎকর্ষতা লাভ।

সাধারণ ব্যবস্থাপনা: গাভী তার গুণগতমান উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকে। কিন্তু গাভীর বংশানুক্রমিক গুণগতমান যতই ভাল হোক এর ব্যবস্থাপনা সমন্ধে বিশেষ যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। দৈনন্দিন পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা, বিজ্ঞান সম্মত বাসস্থান, সুষম খাদ্য সরবরাহ, সঠিক প্রজনন, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ইত্যাদি উন্নত গাভী পালনের মৌলিক বিষয়।

বাসস্থান: পারিবারিক পর্যায়ে বা খামার পর্যায়ে গাভী পালন করতে হলে গাভীর জন্য ভাল বাসস্থান প্রয়োজন। গাভীকে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা যেমন- ঝড়, বৃষ্টি, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা ও গরম এবং অন্যান্য নৈসর্গিক দৈব দুর্বিপাক, পোকামাকড়, চোর, বন্য-জীবজন্তু হতে রক্ষা করার জন্য যথোপযুক্ত বাসস্থান বা গোয়ালঘর প্রয়োজন। আমাদের আবহাওয়ার আলোকে ঘরে প্রচুর আলো বাতাস চলাচলের জন্য ঘরটি উত্তর-দক্ষিণমুখী হওয়া বাঞ্চনীয়। কোন অবস্থাতেই যেন ঘরে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা যেন না থাকে। এতে ঘরের মেঝেটি ইট বিছানো থাকলে ভাল হয়। ঘরের দুর্গন্ধ ও মশামাছি দমনের জন্য মাঝে মাঝে জীবাণুনাশক দ্বারা ধোয়া প্রয়োজন।

গবাদিপশুর বাসস্থান দুই ধরণের হতে পারে : ১. উন্মুক্ত বা উদাম ঘর ২. বাঁধা ও প্রচলিত ঘর।

বাঁধা ঘরের বৈশিষ্ট্য: এই পদ্ধতিতে গরুর গলায় দড়ি বা লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে পালন করা যায়। গাভীর খাদ্য, পানি গ্রহণ এবং দুধ দোহন একই স্থানে করা যায়।

সুবিধা : বাঁধা থাকে বিধায় গাভীর দুধ দোহন সহজ হয়, প্রতিকূল আবহাওয়ায় পশু নিরাপদ থাকে, কৃত্রিম প্রজননের জন্য বেশ সুবিধাজনক, নির্ধারিত অল্প জায়গায় পশু পালন করা যায়।

অসুবিধা: এই পদ্ধতিতে ঘর তৈরি খরচ বেশি, পশুর সহজে ঘোরাফেরার ব্যবস্থা থাকে না, এতে পশুর ব্যয়াম না হওয়াতে বিভিন্ন ধরনের রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে, একই জায়গায় দিনরাত্রি বাঁধা থাকে বলে মেঝে স্যাঁতস্যাঁতে থাকে।

বাঁধা ঘরের নকশা: এই পদ্ধতির গো-শালায় পশু সব সময় বাঁধা অবস্থায় থাকে। এজন্য গো-শালা যাতে সহজে পরিস্কার করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে ঘর তৈরি করা প্রয়োজন। প্রচলিত গো-শালা দুই ধরনের হয়-

একসারি বিশিষ্ট গো-শালা: অল্প সংখ্যক গবাদি পশুর জন্য একটি লম্বা সারিতে বেঁধে পালনের জন্য এই গো-শালা তৈরি করা হয়। প্রতিটি পশুকে পৃথক রাখার জন্য জিআইপাইপ দিয়ে পার্টিশন দেয়া হয়, পার্টিশনের পাইপ লম্বায় ৯০ সে.মি. এবং উচ্চতায় ৪৫ সে.মি. হওয়া প্রয়োজন, একটি গরুর দাঁড়াবার স্থান ১৬৫ সে.মি., পাশের জায়গা ১০৫ সে.মি., খাবার পাত্র ৭৫ সে.মি. এবং নালা ৩০ সে.মি. হওয়া প্রয়োজন, একই মাপে পশুর সংখ্যা অনুযায়ী জায়গা নির্ধারণ করে গো-শালা তৈরি করা হয়, গো-শালা হবে একচালা বিশিষ্ট ঘর, ঘরের ছাদ প্রায় ৩০০ সে.মি. উঁচুতে করতে হয়।

দুই সারি বিশিষ্ট গো-শালা: অল্প জায়গায় অধিক পশুপালনের জন্য এ ধরণের গো-শালা তৈরি করা হয়, এ ধরনের গো-শালায় পশুকে দুভাবে রাখা যায়, মুখোমুখি পদ্ধতি ও বাহির মুখ পদ্ধতি। মুখোমুখি পদ্ধতিতে দুই সারি পশু সামনাসামনি থাকে। দুইসারি খাবারের পাত্রের মাঝখানে ১২০ সে.মি. চওড়া রাসত্দা থাকে- যা পাত্রে খাবার দেবার জন্য ব্যবহার করা হয়, একটি গরুর জন্য দাঁড়ানোর জায়গা ৫.৫ ফুট, পাশের জায়গা ৩.৫ ফুট।

সুবিধা: একই সাথে দুইসারি পশুকে সহজে খাবার ও পানি সরবরাহ করা যায়, দুধ দোহনের জন্য অধিকতর আলো পাওয়া যায়, পশু নিজ জায়গায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, পরিচর্যাকারী সহজে চলাফেরা করতে পারে।
একটি গাভীকে নিম্ন তালিকা অনুসারে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে :
কাঁচা ঘাস (সবুজ ঘাস) ২০-৩০ কেজি, দানাদার খাদ্য মিশ্রণ: ১৮-২০% প্রোটিন সমৃদ্ধ: ১ম ৩ কেজি দুধ উৎপাদনের জন্য- ০৩ কেজি, পরবর্তী প্রতি কেজি দুধ উৎপাদনের জন্য-০.৫ কেজি, লবণ-৫০-৬০ গ্রাম, পরিস্কার পানি-প্রয়োজন মত।

পরিচর্যা: গাভীর সঠিক পরিচর্যা না করলে উন্নত জাতের গাভী পালন করেও গাভীকে সুস্থ সবল উৎপাদনক্ষম রাখা সম্ভব হবে না। ফলে গাভী হতে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ দুধ, মাংস পাওয়া যাবে না এবং গাভী পালন অলাভজনক হবে।

দুধ দোহন: গাভীর দুধ দৈনিক ভোরে একবার এবং বিকালে একবার নির্দিষ্ট সময়ে দোহন করতে হবে। দুধ দোহনের পূর্বে গাভীর উলান ও দোহনকারীর হাত পরিস্কার পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

প্রজনন: গাভীর বংশানুক্রমিক গুণগতমান উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পিত প্রজনন ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে। যে ষাড়ের মা, দাদী, নানী যত বেশি পরিমাণ দুধ দেয় তার বাচ্চার দুধ উৎপাদনের ক্ষমতা ততই বেশি হয়। তাই যখন গাভী গরম হবে তখন গুণগতমানসম্পন্ন ষাড়ের বীজ দ্বারা নিকটস্থ কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র হতে গাভীকে প্রজনন করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

খামারের রেকর্ড সংরক্ষণ: খামারের লাভক্ষতি নিরূপণ আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাবের উপর নির্ভরশীল। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য পরিকল্পনা ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিয়য়ে মূল্যায়ন করা দরকার। খামারের উৎপাদিত পণ্যের হিসাব, ক্রয়, বিক্রয়, জন্ম, মৃতু্য এবং কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রমের জন্য সঠিক তথ্য রক্ষাকল্পে রেকর্ড সংরক্ষণ করা অত্যাবশ্যকীয়।

উন্মুক্ত বাসস্থানে নিম্নোক্ত হারে জায়গার প্রয়োজন:
পশুর ধরণ ঘরে প্রতি পশু স্থান প্রতি পশুর জন্য মুক্ত স্থান খাদ্যপাত্র
বাড়ন্ত বাছুর ২.৫-৩ বর্গ মিটার ৫-৬ বর্গ মিটার ৩৭-৫০ সেন্টিমিটার
গাভী ৩-৩.৫ বর্গ মিটার ৮-১০ বর্গ মিটার ৫০-৬০ সেন্টিমিটার
গর্ভবতী গাভী ১০-১২ বর্গ মিটার ১৮-২০ বর্গ মিটার ৬০-৭০ সেন্টিমিটার
লেখক: কৃষিবিদ সোহরাব জিসান

গাভী পালন : আয় বাড়তে করণীয়

হয়তো আপনার বাসা সংলগ্ন কিছু জায়গা পতিত অবস্থায় রয়েছে। সেখানে গাভী, হাঁস-মুরগির খামার ও মাছ চাষ করে বাড়তি টাকা উপার্জন করতে পারেন। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করে নিতে পারেন। একদিকে ৮৪ ফুট, আরেক দিকে ৬০ ফুট—এমনি একটি জায়গায় কী কী করবেন, কত পুঁজি নিয়ে নামবেন এবং কবে থেকে লাভবান হতে থাকবেন তার একটি বর্ণনা দেয়া হলো।
সংখ্যা ৮টি। জায়গার পরিমাণ ১৬ ফুট – ৫০ ফুট।

খরচের হিসাব : 
১. গাভীর ঘর নির্মাণ (উপরে টিন, চারদিকে দেয়াল) ১০,০০০ টাকা;
২. ৮টি গাভী ক্রয় (বাছুরসহ দুধের গাভী) প্রতিটি ৫০,০০০ করে ৪,০০,০০০ টাকা;
৩. খানার পাত্রসহ আনুষঙ্গিক খরচ ৪,০০০ টাকা;
৪. প্রতিদিন খাদ্য খরচ (১টির জন্য ১০০ টাকা) ৮টির জন্য (৮০০ × ৩০) ২৮,০০০ টাকা (প্রতি মাসে);
৫. ওষুধ, ভিটামিন (মাসিক) ১৫০০ টাকা;
৬. টিউবওয়েল স্থাপন ৮,০০০ টাকা;
৭. পানি সাপ্লাইয়ের মোটর ৮,০০০ টাকা;
৮. ৪টি ফ্যান ১৬,০০০ টাকা; মোট খরচ ৯,৮৫,০০০ টাকা।

গাভীর খামার থেকে আয় : প্রতিটি গাভী দৈনিক ১৮ কেজি দুধ দেবে। প্রতি কেজির দাম ৩০ টাকা। একটি গাভীর দুধ থেকে প্রতিদিন গড়ে পাওয়া যাবে ৩০ × ১৮ = ৫৪০ টাকা। তাহলে ৮টি গাভীর দুধ থেকে প্রতিদিন ৫৪০ × ৮ = ৪৩২০ টাকা আয় হবে। ফলে ৩০ দিনে ৮টি গাভীর দুধ বিক্রি থেকে ৪৩২০ × ৩০ = ১,২৯,৬০০ টাকা। গাভী প্রায় ৮ মাস ধরে গড়ে ১৮ কেজি দুধ দেবে। এরপর দুধের পরিমাণ কমতে থাকবে। দুধ বিক্রি থেকে ৮ মাসে আয় ১,২৯,৬০০ × ৮ = ১০,৩৬,৮০০ টাকা। প্রাথমিক খরচ ৯,৮৫,০০০ টাকা; মোট আয় = ৫১,৮০০ টাকা। ৮ মাস পর নিট লাভ ৫১,৮০০ টাকা।
৮ মাস পর দুধ দেয়ার পরিমাণ কমে যাবে। গড়ে ৮ কেজিতে নেমে আসবে। তাহলে ৮টি গাভী থেকে ৬৪ কেজি দুধ পাওয়া যাবে। ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে ৬৪ কেজি দুধ থেকে দৈনিক আয় ১৯২০ টাকা। ৩০ দিনে আয় ১৯২০ × ৩০ = ৫৭,৬০০। ৮ মাসের আয় ৫৭,৬০০ × ৮ = ৪,৪০,৮০০ টাকা। তাহলে প্রথম ৮ মাসে দুধ বিক্রি থেকে আয় ১০,৩৬,৮০০ টাকা + পরবর্তী ৪ মাসে আয় ৪,৪০,৮০০ টাকা। মোট দুধ বিক্রি থেকে আয় ১৪,৭৭,৬০০ টাকা।


৮ মাস পর দুধ দেয়ার পরিমাণ কমে যাবে। তখন কৃত্রিম প্রজনন দিতে হবে। কৃত্রিম প্রজনন দেয়ার প্রায় ৮ মাস পর গাভী বাচ্চা দেবে। এরপর প্রতিবার ২০ কেজি করে দুধ দেবে। এ গাভী ৪ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত পোষা যাবে। ১ বছর পর এক-একটি বাছুর প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে। ৩ বছর পর বাছুরগুলো আবার গর্ভবতী হবে। তখন এক-একটির দাম ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় দাঁড়াবে। এ কারণে বাছুরগুলো রেখে ষাঁড়গুলো বিক্রি করে দিতে হবে।
গাভীকে দানাদার খাদ্য, কাঁচা ঘাস, খড়, চালের কুঁড়া ও প্রচুর পরিমাণে পানি দিতে হবে। পরবর্তী বছরগুলোতে ঘর নির্মাণ খরচ লাগবে না, গাভীও কিনতে হবে না। ৮ মাস পর আবার গাভীগুলো দুধ দেবে। আগের বাছুর বড় হবে। এসময় ঘর নির্মাণ খরচ, গাভী ক্রয় খরচ, টিউবওয়েল নির্মাণ খরচ আর লাগবে না, তবে খাদ্য খরচ বেড়ে যাবে। আগের ৮টি গাভী, ৮টি বড় বাছুর, নতুন ৮টি ছোট বাছুর সব মিলে ২৪টি গরু হবে। আগের বাছুরের মধ্যে যদি ষাঁড় থাকে তাহলে বিক্রি করে দিতে হবে। ৮টি বাছুরের মধ্যে যদি ৪টি ষাঁড় থাকে তাহলে প্রতিটি ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করলে ১৫,০০০ × ৪ = ৬০.০০০ টাকা আয় হবে। এর বেশিও আয় হতে পারে।

৮ মাস পর বাছুর প্রসবের পরে খরচ : খাদ্য খরচ বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে দৈনিক ১,৫০০ টাকা। তাহলে এক মাসে খাদ্য খরচ ১,৫০০ × ৩০ = ৪৫,০০০ (প্রতি মাসে)। বিদ্যুত্, পানি, ওষুধ, ভিটামিন ৫,০০০ টাকা। মোট ব্যয় ৫০,০০০ টাকা।

আয় : দুধ বিক্রি থেকে এক মাসে আয় ১,২৯,৬০০ টাকা; ১,২৯,৬০০ - ৫০,০০০ = ৭৯,৬০০ টাকা নিট লাভ। এছাড়া প্রতি বছর বাছুর বিক্রি থেকে এবং গোবর বিক্রি করেও টাকা অর্জন করা যাবে। গাভীগুলো ৪ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত দুধ দেয়ার পর এগুলো বিক্রি করে দিতে হবে। এ ধরনের একটি গাভী ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে।
লেখক: মোহাম্মদ মোস্তফা
এগ্রোবাংলা ডটকম

দুধ উত্পাদন বৃদ্ধির তিনটি কৌশল

গাভী পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য দুধ উত্পাদন। আর তার জন্য প্রয়োজন সুষম খাবার সরবরাহ, রোগাক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে যথাযথ চিকিত্সাসহ অন্যান্য দৈনন্দিন পরিচর্যা। তবে এর সাথে আরো কিছু সহজ বিষয়ের দিকে নজর দিলে দুধের উত্পাদন আশানুরূপ মাত্রায় বাড়ানো সম্ভব। দুধে আশি ভাগের বেশি পানি থাকে। বাকি ১২.৫ ভাগ ফ্যাট নয় এমন শক্ত পদার্থ যেমন- ভিটামিন, মিনারেল ইত্যাদি। অবশিষ্টাংশ ফ্যাট। এক লিটার দুধ উত্পাদনের জন্য গাভীর প্রায় চার লিটার পানির প্রয়োজন হয়। অথচ অধিকাংশ সময় গাভীকে পর্যাপ্ত পানি দেয়া হয় না। যেমন- রাতের বেলা পিপাসা লাগলেও গাভী পানি পান করতে পারে না। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গাভীকে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি দিলে দুধের উত্পাদন প্রায় ২০ শতাংশ বেড়ে যায়। তাই গাভী যেন প্রয়োজনমত পানি পান করতে পারে সে জন্য চব্বিশ ঘণ্টা পানির পাত্রে পানি দিতে হবে। প্রচলিত ধারণা হচ্ছে গাভীকে বেশি খাবার দিলে দুধ উত্পাদন বেশি হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে সুষম, পুষ্টিকর খাবার গাভীর শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এবং দুধ উত্পাদনের জন্য অপরিহার্য কিন্তু অতিরিক্ত খাবার কখনোই নয়। বরং এতে হিতে বিপরীত হয়। খাবার হজমের জন্য পাকস্থলীর রাসায়নিক পরিবেশ হচ্ছে ক্ষারীয়। গাভী যত বেশি জাবর কাটবে খাবারের সাথে বেশি লালা মিশ্রিত হবে এতে খাবার বেশি হজম হবে। গাভী জাবর কাটার সময় না পেলে খাবার হজম হবে না। আর এ কারণে পুষ্টিও কম পাবে। আর পুষ্টি কম পেলে দুধ উত্পাদনও কমে আসবে। তাই খাবার হজমের জন্য গাভীকে কমপক্ষে আট ঘণ্টা জাবর কাটার সময় দিতে হবে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর আর কোনো খাবার দেয়া ঠিক হবে না। গাভীকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে হবে। প্রতি লিটার দুধে প্রায় ১.২ গ্রাম ক্যালসিয়াম থাকার কারণে দুগ্ধবতী গাভীর দুধ উত্পাদনের জন্য বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হয়। খাবারের সাথে ক্যালসিয়াম সরবরাহ না করলে গাভীর হাড় থেকে ক্যালসিয়াম ব্যবহার করে থাকে। এতে হাড়ে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে গাভী দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পড়ে। দুধ উত্পাদনও কমে যায়।
উপরের বিষয়গুলোর দিকে নজর দিলে খরচ কমের পাশপাশি দুধ উত্পাদন বৃদ্ধি পাবে। খামারি লাভবান হবে।

গাভীর রোগ-ব্যাধি ও তার প্রতিকার

গাভীর রোগ-ব্যাধি ও তার প্রতিকার
গৃহপালিত পশুর মধ্যে গাভী পালন কৃষিজীবি সমাজের এক দীর্ঘ কালের প্রাচীন ঐতিহ্য। আমাদের দেশে গাভী পালন এক সময় কেবল গ্রামের কৃষিজীবি পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু দুগ্ধ চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে তা গ্রামীণ কৃষিজীবীদের সীমানা চাড়িয়ে শহরের শিক্ষিত, উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে বহুদিন আগেই। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দুগ্ধ খামার গড়ে উঠেছে এবং তা ক্রমেই সমপ্রসারিত হছে। এটা নিঃসন্দেহে শুভ লক্ষণ। ফরে উন্নত জাতের বাচুর প্রজনন এবং গাভীর যত্নের প্রয়োজনীয়তাও বেড়েছে। গাভী পালনে এর পরিচচর্যা এবং রোগ-ব্যাধি সম্পর্কেও সংশ্লিষ্ট দের সচেতনতা অপরিহার্য। নানা রকমের রোগে আক্রান্ত হতে পারে আপনার বাড়ি কিংবা খামারের পোষা গাভী। এসব রোগ এবং এর প্রতিকার বিষয়েই এবার আলোকপাত করা যাক।
ওলান পাকা রোগ
নানা প্রকার রোগ-জীবাণু বা অন্য কোনো রাসায়নিক দ্রব্যের দ্বারা এ রোগের সৃষ্টি হয়।
লক্ষণ
ক) ওলান লাল হয়ে ওঠে এবং হাত দিয়ে স্পর্শ করলে গরম অনুভব হয়।
খ) ব্যাথার দরুণ গাভী ওলানে হাত দিতে দেয় না এবং দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
গ) হলুদ বর্ণ দুধের সাথে ছানার মতো টুকরা বের হয়।
পুরনো রোগে দুধ কমে যায় এমনকি একেবারে বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং ওলান শুক্ত হয়ে যায়।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
প্রথমত আক্রান্ত পশুকে পরিস্কার জায়গায় রাখতে হবে। ওলানে জমে থাকা দুধ বের করে দিতে হবে। বাঁচের মুখ বন্ধ হয়ে গেলে টিটিসাইফন দ্বারা বাঁচের মুখ পরিস্কার করে দিতে হবে।
১. ভেলুস ২০%
২. এ্যান্টিবায়েটিক
৩. ম্যাসটাইটিস টিউব ইত্যাদি।
পেট ফাঁপা
সাধারণত গরহজমের জন্য গাভীর পেট ফেঁপে যায়। এছাড়া কিছু কিছু রোগের কারণেও পেট ফাঁপে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
দানাদার খাদ্য বন্ধ করে দিতে হবে। শুধুমাত্র শুকনা খড় খেতে দেওয়া যেতে পারে।
১. নিওমেট্রিল
২. কারমিনেটিভ মিঙ্চার ইত্যাদি।
জায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা
অনেক রোগের দরুন পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। তবে অস্ত্রর রোগ এদের মধ্যে অন্যতম। আক্রান্ত পশু দূর্বল হয়ে পড়ে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
১. সকেটিল পাউডার
২. স্টিনামিন ট্যাবলেট ইত্যাদি।
নিউমোনিয়া
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, রাসায়নিক দ্রবাদি, ঠান্ডা ইত্যাদির কারণে পশুর নিউমোনিয়া হতে পারে।
লক্ষণ
ক) ঘনঘন নিঃশ্বাস এ রোগের প্রধান লক্ষণ।
খ) রোগের শেষ পর্যায়ে শ্বাসকষ্ট হয়
গ) শুল্ক কাশি হতে পারে।
ঘ) তীব্র রোগে জ্বর হয় এবং নাক দিয়ে সর্দি পড়ে।
ঙ) বুকের মধ্যে গরগর শব্দ হয়।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। ভেলুসং ২০%
২। অ্যান্টিবায়টিক
৩। ক্লোরেটেট্রাসন
৪। টেরামাইসিন
৫। ভেটিবেনজামিন
কৃমি
কৃমি নানা জাতের ও নানা আকারের হয়ে থাকে। কৃমিতে আক্রান্ত পশুকে ঠিক মতো খাবার দিলেও তার স্বাস্থ্যের কোন উন্নতি হয় না। বরং দি দিন রোগা হতে থাকে।
লক্ষণ
ক) পশু দূর্বল হয়ে যায়
খ) খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দেয়
গ) হাড্ডিসার হয়ে যায়
ঘ) সময় সময় পায়খানা পাতলা হয়
ঙ) শরীরের ওজন কমে যায়
ছ) দুগ্ধবর্তী গাভীর দুধ কমে যায়
চ) রক্তশুণ্যতায় ভোগে বলে সহজেই অন্যান্য আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে।
জ) দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধি পায় না।
ঝ) ফলে পশুকে রোগা ও আকারে ছোট দেখায়
চিকিৎসা ও প্রতিকার
গোবর পরীক্ষান্তে কৃমিনাশক ওষুধ দ্বারা চিকিৎসা করতে হবে।
লক্ষণ
প্রাথমিক অবস্থায়
ক) আক্রান্ত পশু কিছু খেতে চায় না
খ) হাটতে চায় না
গ) জিহবা বের হয়ে থাকে
ঘ) মাথা ও পায়ের মাংসপেশী কাপতে থাকে
পরবর্তী অবস্থায় আক্রান্ত গাভী
ক) বুকে ভর দিয়ে শুয়ে পড়ে
খ) মাথা বাঁকিয়ে এক পাশে কাধের ওপর ফেলে রাখে
গ) এ অবস্থায় গাভী অনেকটা চৈতন্য হারিয়ে ফেলে
ঘ) গাভী কাত হয়ে শুয়ে পড়ে, উঠতে পারে না
ঙ) ধমনীর মাত্রা বেড়ে যায়
চ) অবশেষে গাভী মারা যায়
চিকিৎসা ও প্রতিকার
গাভীকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ক্যালসিয়াম ইনজেকশন দিতে পারলে দ্রুত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।
কিটোসিস
দেহের মধ্যে শর্করা জাতীয় খাদ্যের বিপাকক্রিয়ার কোন প্রকার বিঘ্ন ঘটলে রক্তে এসিটোন বা কিটোন নামক বিষাক্ত দ্রব্য অধিক মাত্রায় জমা হয়ে দেহ বিষিয়ে তোলে। এই বিষক্রিয়ার ফলেই কিটোসিস রোগের সৃষ্টি হয়।
লক্ষণ
ক) ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়
খ) গাভীর দুধ কমে যায়
গ) দৈহিক ওজন কমে যায়
ঘ) কোষ্ঠাকাঠিন্য দেখা দেয়
ঙ) এছাড়া আক্রান্ত পশুর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে এসিটোনের মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যায়
চ) অনেক সময় গাভী এক জায়গায় দাঁড়িয়ে চতুর্দিকে ঘোরে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
অপটিকরটেনল-এস ইনজেকশন।
ফুল আটকে যাওয়া
বাচ্চা প্রসবের পর অনেক সময় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফুল বের হয়ে আসে না। এবং এসব ক্ষেত্রে গর্ভ ফুলের অংশ বিশেষ বাইরের দিক হতে ঝুলে থাকতে দেখা যায়।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। অকসিটোসিন
২। ইউটোসিল পেশারিস
৩। এ্যানটবায়েটিক ইনজেকশন ইত্যাদি।
জলুবায়ুর প্রদাহ
অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগের জীবাণূ যোনিপথ হতে জরায়ুতে পৌছে এ রোগ হতে পারে। গর্ভ ফুলের টুকরা ভেতরে থেকে গেলে পচে যায় এবং প্রদাহের কারণ ঘটায়। কামপর্বে পশুর যৌন-ক্রিয়ার সয়ও অনেক সময় জরায়ুতে রোগ জীবানূ সংক্রমিত হয়ে থাকে।
লক্ষণ
ক) জ্বর হয়
খ) দুর্গন্ধযুক্ত জলের মতো কিংবা কালচে লাল রঙের স্রাব পড়তে দেখা যায়
গ) খাদ্যে অরুচি হয়
ঘ) দুধ কমে যায়
ঙ) গাভী পাল রাখে না
চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। ইউটোলিস পেরারিস
২। এ্যান্টিবায়েটিক ইনজেকশন ইত্যাদি
গর্ভপাত
সাধারণত রোগ-জীবানুর কারণেই অধিকাংশ গর্ভপাত হয়ে থাকে। এছাড়া আঘাত, বিষক্রিয়া, পক্ষাঘাত ইত্যাদি কারণেও গর্ভপাত হতে পারে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। ইউটোসিল পেশারিশ
২। এ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন ইত্যাদি।
অনুর্বরতা ও সাময়িক বন্ধ্যাত্ব
সাধারণত প্রজনন ইন্দ্রিয়সমূহের বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি, হরমোন ক্ষরণের অনিয়ম, অসমতা, ওভারিতে সিস্ট ও পুষ্টিহীনতা ইত্যাদি কারণে সাময়িক বন্ধ্যাত্ব রোগ হয়ে থাকে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
সঠিক কারণ নির্ধারণ করে হরমোন দ্বাা চিকিৎসা করলে সাময়িক বন্ধ্যাত্ব দূর হয়। যৌননালীর অসুখের দরুন বন্ধ্যাত্ব হলে ইউটোলিস পেশারিস, স্টিমাভেট ট্যাবলেট জরায়ুতে স্থাপন করতে হবে।ভিটামিন 'এ' যুক্ত সুষম পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।
খুরো বা খুর পচা
খুরের ভিতরের বা চারপাশের টিস্যু পচনশীল অবস্থাকে ফুটরট বলে।
লক্ষণ
ক) আঘাতপ্রাপ্ত টিস্যুতে পচন যুক্ত ঘা হয়
খ) আশপাশের টিস্যুতে রক্ত জমা হতে দেখা যায়
গ) পশু খুড়িয়ে হাঁটে এবং কিছু খেতে চায় না
ঘ) পশুর ওজন ও দুধ কমে যায়
ঙ) শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়
চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। ভেসাডিন
২। ভেসুলাং ২০% ইনজেকশন
৩। এ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন
৪। ক্ষতস্থান ভালভাবে পরিস্কার করে দিনে ২ বার ডাস্টিং পাউডার ব্যবহার করতে হবে।
ককসিডিওসিস বা রক্ত আমাশয়
রক্ত মিশানো পাতলা পায়খানা, রক্ত শূণ্যতা ও শরীরের দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্তি এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
লক্ষণ
ক) শরীরের তাপমাত্রা অল্প বৃদ্ধি পায়
খ) হঠাৎ করে পায়খানা শুরু হয়
গ) পায়খানার সময় ঘন ঘন কোথ দেয়
ঘ) পায়খানা খুবই দুগর্ন্ধযুক্ত
ঙ) আক্রান্ত পশু দিন দিন দূর্বল হতে থাকে
চ) মলের সাথে মিউকাস অথবা চাকা চাকা রক্ত থাকে
ছ) খেতে চায় না
জ) শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়
চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। ভেলুসং ২০% ইনজেকশন
২। সকেটিল পাউডার ইত্যাদি
বেবিসিয়াসিস বা রক্ত প্রস্রাব
আটালি দ্বারা এ রোগের জীবাণূ সংক্রামিত হয়।
লক্ষণ
ক) হঠাৎ জ্বর (১০৮ ডিগ্রী ফা.) হয়
খ) জাবর কাটা বন্ধ করে দেয়
গ) রক্তের সঙ্গে লোহিত কাণিকা ডাঙ্গা হিমোব্লোবিন যুক্ত হবে প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে আসে।
ঘ) প্রস্রাবের রঙ লাল হয়।
প্রতিকার ও চিকিৎসা
১। বেরিনিণ ইনজেকশন
২। শরীরের আটালিমুক্ত করার জন্য নেগুভন সপ্রে অথবা আসানটল সপ্রে দিতে হবে।
উকুন/আটালি
এরা এক প্রকার বহিঃ পরজীবী। অধিকাংশ গবাদি পশু উকুন/ আটালি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। নিওসিডল ৪০ ডবি্লউ-পি
২। আসানটল
৩। নেগুভন সপ্রে ইত্যাদি মিশিয়ে পশুর গায়ের সপ্রে করতে হবে।
তথ্য সূত্র: শাইখ সিরাজ রচিত ‘মাটি ও মানুষের চাষবাস’ গ্রন্থ থেকে সংগ্রহীত

গবাদি পশুর গলাফুলা রোগ ও প্রতিকার

গলাফুলা একটি তীব্র প্রকৃতির রোগ যা গরু এবং মহিষকে আক্রান্ত করে। এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ যা Pasteurella multocida দ্বারা সংঘটিত হয়। এ রোগে মৃত্যুর হার খুবই বেশি। বর্ষাকালে গলাফুলা রোগ বেশি দেখা যায়। আমাদের দেশে বর্ষার শুরুতে এবং বর্ষার শেষে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। পশুর শরীরে স্বাভাবিক অবস্থায় এ রোগের জীবাণু বিদ্যমান থাকে। কোনো কারণে যদি পশু ধকল যেমন ঠান্ডা, অধিক গরম, ভ্রমণজনিত দুর্বলতা ইত্যাদির সম্মুখীন হয় তখনই এ রোগ বেশি দেখা দেয়। গলাফুলা রোগের প্রচলিত নাম ব্যাংগা, ঘটু, গলগটু, গলবেরা ইত্যাদি।

চিত্র-১ গলাফুলা রোগে আক্রান্ত পশুর মুখমন্ডলসহ গলা ফুলে উঠেছে
এপিডেমিওলজি ও রোগজননতত্ত্ব 
গলাফুলা (hemorrhagic septicemia) এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ ইউরোপের কিছু দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যমান। তবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এটি বেশি পরিলক্ষিত হয়। গলাফুলা মূলত গরু ও মহিষের রোগ হলেও শুকর, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া, বাইসন, উট, হাতী এমনকি বানরেও এ রোগ হতে পারে। এ রোগ বছরের যে কোনো সময় হতে পারে তবে বর্ষাকালে এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। বাহক পশুর টনসিল ও ন্যাজো-ফ্যারিনজিয়াল মিউকোসায় এ রোগের জীবাণু থাকে। অনুকূল পরিবেশে রক্তে এ রোগের জীবাণুর সংখ্যা বেড়ে গিয়ে septicemia করে। এই বৃদ্বিপ্রাপ্ত জীবাণু মরে গিয়ে এন্ডোটক্সিন নিঃসৃত হয় যার ফলে রক্ত দূষিত হয়ে পড়ে। এন্ডোটক্সিন রক্তের ক্যাপিলারিস নষ্ট করে; ফলে এডিমা হয়। এছাড়া এন্ডোটক্সিন একদিকে কোষ কলা বিনষ্ট করে দেহে হিস্টামিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে অন্যদিকে টিস্যু বিনষ্টের ফলে টিস্যুর প্রোটিন ভেঙ্গে রক্তে প্রোটিনের পরিমাণ হ্রাস পায়। ফলে, এডিমার সৃষ্টি হয়। সে কারণে এ রোগে আক্রান্ত পশুর গলা ফুলে যায় ও রক্তে জীবাণুর উপস্থিতির(septicemia) কারণে পশুর দ্রুত মৃতু্য হয়।
লক্ষণ
এ রোগ অতি তীব্র ও তীব্র এ দুই ভাবে হতে পারে। অতি তীব্র প্রকৃতির রোগে হঠাৎ জ্বর (১০৬-১০৭০ ফা) হয়ে মুখ ও নাক দিয়ে তরল পদার্থ বের হতে থাকে। পশু অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে ও খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে মৃতু্য ঘটে। তীব্র প্রকৃতির রোগে আক্রান্ত পশু ২৪ ঘন্টার অধিক বেঁচে থাকে। এ সময় পশুর এডিমা দেখা দেয় যা প্রথমে গলার নিচে, পরে চোয়াল, তলপেট এবং নাক, মুখ, মাথা ও কানের অংশে বিসতৃত হয়।
গলায় স্ফীতি থাকলে গলার ভেতর ঘড় ঘড় শব্দ হয় যা অনেক সময় দূর থেকে শোনা যায়। প্রদাহযুক্ত ফোলা স্থানে ব্যথা থাকে এবং হাত দিলে গরম ও শক্ত অনুভূত হয়। সূঁচ দিয়ে ছিদ্র করলে উক্ত স্থান হতে হলুদ বর্ণের তরল পদার্থ বের হয়ে আসে। অনেক সময় কাশি হয় এবং চোখে পিচুটি দেখা যায়। নাক দিয়ে ঘন সাদা শ্লেষ্মা পড়তে দেখা যায়। সাধারণত লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আক্রান্ত পশু মারা যায়। মারা যাবার সাথে সাথে পেট খুব ফুলে উঠে এবং নাক ও মুখ দিয়ে তরল পদার্থ বের হতে থাকে। পোস্টমর্টেম করলে পেরিকার্ডিয়াল স্যাক (pericardial sac) এ রক্ত মিশ্রিত তরল পদার্থ দেখা যায়, যা থোরাসিক (thoracic) এবং এবডোমিনাল ক্যাভিটি (abdominal cavity) তে বিসতৃত হতে পারে। ফ্যারিনজিয়াল এবং সার্ভাইক্যাল লিম্ফনোডে বিন্দু আকৃতির (petechial) রক্তক্ষরণ পরিলক্ষিত হয়।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব 
গলাফুলা রোগের যথেষ্ট অর্থনৈতিক গুরুত্ব আছে বিশেষত, এশিয়া এবং আফ্রিকার কিছু দেশে। এশিয়াতে ৩০% গবাদিপশু এ রোগের প্রতি সংবেদনশীল। ভারত দুগ্ধ উৎপাদনে এশিয়াতে সর্বোচ্চ যেখানে ৫০% দুধ আসে মহিষ থেকে, যারা এ রোগের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। ভারতে গত চার দশক ধরে গলাফুলা রোগে মৃত্যু হার গবাদিপশুর মৃত্যুহারের ৪৬-৫৫%। ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ভারতে গবাদিপশুর ৫টি মহামারীতে আক্রান্ত গবাদিপশুর ৫৮.৭% মারা যায়। এই ৫টি মহামারী হল ক্ষুরারোগ, রিন্ডারপেষ্ট, বাদলা, এনথ্রাক্স এবং গলাফুলা। শ্রীলংকায় ১৯৭০ এর দশকে পরিচালিত একটি অপঃরাব সারভ্যাইল্যান্স স্টাডিতে দেখা গেছে গলাফুলা আক্রান্ত স্থানসমূহে বছরে প্রায় ১৫% মহিষ এবং ৮% গরু গলাফুলার কারণে মারা যায়। পাকিস্তানে একটি রির্পোটে দেখা গেছে সেখানে গবাদিপশুর মোট মৃত্যুর ৩৪.৪% মারা যায় গলাফুলা রোগে। মায়ানমারে পশু রোগ নিয়ন্ত্রণে বরাদ্দকৃত মোট বাজেটের ৫০ ভাগ ব্যয় হয় গলাফুলা রোগ দমনে। গলাফুলা রোগে শুধু গবাদিপশুর মৃত্যুই ঘটে না, সাথে সাথে বেশ কিছু অপ্রত্যক্ষ ক্ষতিও হয়। যেমন -
উৎপাদন হ্রাসঃ মাংস, দুধ, জোয়াল টানা, হালচাষের বিকল্প উপায়ের জন্য মোট ব্যয় ইত্যাদি। পশুর প্রজনন ক্ষমতা বিঘি্নত হওয়া, চিকিংসা খরচ ইত্যাদি।
প্রতিরোধ
এ রোগ উচ্ছেদ করা অসম্ভব কারণ এ রোগের জীবাণু স্বাভাবিক অবস্থায় পশুর দেহে থাকে। তবে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
• রোগাক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা করে সুস্থ পশুকে টিকা দানের ব্যবস্থা করতে হবে।
• মড়কের সময় পশুর চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
• হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পশুর পরিচর্যার ব্যবস্থা করতে হবে।
• টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত এল.আর. আই কতৃর্ক প্রস্তুতকৃত টিকার নাম গলাফুলা টিকা। লোকাল স্ট্রেইন দ্বারা প্রস্তুতকৃত এই অয়েল এডজুভেন্ট টিকা সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক (৬ মাস বয়সের উপরে) গবাদিপশুকে ২ মিলি মাত্রায় ও ছাগল ভেড়াকে ১ মিলি মাত্রায় প্রয়োগ করতে হয়। এ রোগের প্রাদুর্ভাব আছে এরূপ এলাকায় ৬ মাস বা তদুধর্ব বয়সী বাছুরে প্রাপ্ত বয়স্ক গরুর অর্ধেক মাত্রায় টিকা দিতে হয়। এলাম অধঃপাতিত (Alum precipitated) টিকা মাংসে প্রদান করা হয়। যেহেতু দুই ধরনের টিকাই মাঠপর্যায়ে ব্যবহার হয় তাই বিষয়টির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ অয়েল এডজুভেন্ট টিকা তেল থেকে প্রস্তুতকৃত বিধায় এই টিকা ভুলক্রমে মাংসে প্রদান করলে মাংসে প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে মাংসের ক্ষতি হয় এবং সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। টিকা প্রদানের ২-৩ সপ্তাহ পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মাতে শুরু করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ১ বৎসর কাল পর্যন্ত বজায় থাকে। এই টিকা মৃত জীবাণুর দ্বারা প্রস্তুত বিধায় এই টিকা প্রদানের মাধ্যমে রোগ বিস্তারের কোনো সম্ভাবনা নাই। টিকা প্রয়োগের স্থান ২/৩ দিন পর্যন্ত ফোলা থাকতে পারে। ত্রুটিপূর্ণ ইনজেকশনের কারণে এই ফোলা স্বাভাবিক এর চেয়ে কয়েকদিন বেশি থাকতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে এনাফাইলেকটিক শক দেখা দিতে পারে। কোনো এলাকায় বা খামারে টিকা প্রদানের পূর্বে অল্প কয়েকটি গবাদিপশুকে টিকা প্রদানের পর ২৫-৩০ মিনিট অপেক্ষা করে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা শ্রেয়। যদি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় তবে উক্ত বোতলের টিকা পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না। অয়েল এডজুভেন্ট টিকা বেশ ঘন হওয়ায় এই টিকা প্রদানে মোটা বারের নিডল ব্যবহার করা সুবিধাজনক।
রোগ নির্ণয় 
হঠাৎ মৃত্যু হয় এ ধরনের রোগ যেমন বজ্রপাত, সাপে কাটা, বাদলা রোগ, রিন্ডারপেস্ট, এনথ্রাক্স ইত্যাদি থেকে গলাফোলা রোগকে আলাদা করতে হবে। সেরোলজিক্যাল টেস্ট যেমন Indirect hemagglutination test এ উচ্চ টাইটার লেভেল (১:১৬০ বা তার বেশি) পাওয়া গেলে এ রোগ সমন্ধে নিশ্চিত হওয়া যায়।
চিকিৎসা
আক্রান্ত পশুর চিকিৎসায় বিলম্ব হলে সুফল পাওয়া যাবে না। তাই রোগের উপসর্গ দেখা দেয়ার সাথে সাথে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এ রোগের চিকিৎসায় সালফোনামাইড গ্রুপ যেমন সালফাডিমিডিন (৫০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১৫-৩০ মিলি হিসেবে প্রত্যহ একবার করে তিনদিন শিরা বা ত্বকের নিচে), ট্রাইমিথোপ্রিম-সালফামেথাক্সাসোল কম্বিনেশন (৪৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৩-৫ মিলি), অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, পেনিসিলিন ও ক্লোরামফেনিকল জাতীয় ঔষধ অধিক কার্যকর।

Ampicillin, Tetracycline, Erythromycin, Sulphonamide জাতীয় ইনজেকশন গভীর মাংসে দিয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়। Sulphadimidin ঔষধ শীরায় প্রয়োগ করে দ্রুত ফল পাওয়া যায়। আমাদের দেশে এ চিকিত্সাটা বেশি ব্যবহূত হয়। Oxytetracycline/Streptophen ইনজেকশন গভীর মাংসে প্রয়োগ করে কার্যকরী ফল পাওয়া যায়। টিকার ব্যবহার মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি: বাংলাদেশের মহাখালীর খজও -এ টিকা পাওয়া যায়- ১. অয়েল এ্যাডজুভেন্ট টিকা: গরু/মহিষ- ২ মি.লি চামড়ার নিচে দিতে হয়। ছাগল/ভেড়া- ১ মি.লি চামড়ার নিচে দিতে হয়। (অয়েল এ্যাডজুভেন্ট টিকা ঘন হওয়ায় মোটা বোরের নিডল ব্যবহার করতে হবে)।
প্রতিরোধ 
ভ্যাকসিনই এ রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে ভাল উপায়। মূলত তিন ধরনের ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলো হল প্লেইন ব্যাকটেরিন, এলাম অধ:পাতিত ব্যাকটেরিন এবং অয়েল এডজুভেন্ট ব্যাকটেরিন। এর মধ্যে ৬ মাস বিরতিতে এলাম অধ:পাতিত ব্যাকটেরিন এবং ৯ থেকে ১২ মাস অন্তর অয়েল এডজুভেন্ট ভ্যাকসিন দিতে হয়। ভালো ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত খামারে বাছুরকে ৩ থেকে ৬ মাস বয়সে প্রথম, ৩ মাস পরে বুস্টার এবং এরপর বছরে একবার টিকা দিতে হয়। উন্মুক্ত খামারে বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই বাৎসরিক টিকার কোর্স শুরু করতে হয়।


লেখক: ডাঃ এ, এইচ. এম. সাইদুল হক
এক্সিকিউটিভ, ভেটেরিনারী সার্ভিসেস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল
তথ্যসূত্র: পোলট্রি, পশুসম্পদ ও মৎস্য বিষয়ক মাসিক পত্রিকা ‘খামার’

বাংলাদেশে প্রতিবছর দুধের চাহিদা ১২.৫২ মিলিয়ন মেট্রিক টন, উৎপাদন হচ্ছে প্রতিবছর ২.২৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন, ঘাটতি প্রতিবছর ১০.২৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন। চাহিদার আলোকে আমাদের দেশে ছোট-বড় প্রায় ৪৭,৭১০টি ডেইরি খামার গড়ে উঠেছে। বর্তমানে শংকর জাতের গাভী পালনের মাধ্যমে দুগ্ধ খামার স্থাপন একটি লাভজনক ব্যবসা। ফলে গাভী পালনে উন্নত ব্যবস্থাপনা, সঠিক প্রজনন, সুষম খাদ্য, রোগদমন ও প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে খামারিদের জানা প্রয়োজন।

ভালজাতের গাভীর বৈশিষ্ট্য মাথা : হালকা ও ছোট আকার, কপাল প্রশসত্দ, উজ্জ্বল চোখ, খাদ্যের প্রতি আগ্রহ। দৈহিক বৈশিষ্ট্য : দেহের সামনে দিক হালকা, পিছনের দিক ভারী ও সুসংগঠিত, দৈহিক আকার আকর্ষণীয়, শরীরের গঠন ঢিলা। পাজর : পাজরের হাড় স্পষ্ট, হাড়ের গঠন সামঞ্জস্যপুর্ণ। চামড়া : চামড়া পাতলা, চামড়ার নীচে অহেতুক চর্বি জমা থাকবে না, চামড়ার রঙ উজ্জ্বল, লোম মসৃণ ও চকচকে হবে। ওলান : ওলান বড় সুগঠিত ও দেহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, বাটগুলো একই আকারের হবে। চারবাট সমান দূরত্বে ও সমানত্দরাল হবে। দুগ্ধশিরা : দুগ্ধশিরা মোটা ও স্পষ্ট, তলপেটে নাভীর পাশ দিয়ে দুগ্ধশিরা আঁকাবাঁকাভাবে বিস্তৃত থাকবে।

খামার ব্যবস্থাপনা: খামার ব্যবস্থাপনা এক প্রকার কৌশল যার মাধ্যমে খামারের সম্পদ, সুযোগ ও সময়ের সমন্বয় ঘটানো যায়। সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার সুফল হল-
১. সম্পদের মিতব্যয়িতা
২. স্বল্প সময়ে ফললাভ
৩. স্বল্প সময়ে অধিক উৎপাদন
৪. শক্তি ও শ্রমের অপচয় রোধ
৫. উৎপাদনে গুণগতমান ও উৎকর্ষতা লাভ।

সাধারণ ব্যবস্থাপনা: গাভী তার গুণগতমান উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকে। কিন্তু গাভীর বংশানুক্রমিক গুণগতমান যতই ভাল হোক এর ব্যবস্থাপনা সমন্ধে বিশেষ যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। দৈনন্দিন পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা, বিজ্ঞান সম্মত বাসস্থান, সুষম খাদ্য সরবরাহ, সঠিক প্রজনন, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ইত্যাদি উন্নত গাভী পালনের মৌলিক বিষয়।

বাসস্থান: পারিবারিক পর্যায়ে বা খামার পর্যায়ে গাভী পালন করতে হলে গাভীর জন্য ভাল বাসস্থান প্রয়োজন। গাভীকে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা যেমন- ঝড়, বৃষ্টি, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা ও গরম এবং অন্যান্য নৈসর্গিক দৈব দুর্বিপাক, পোকামাকড়, চোর, বন্য-জীবজন্তু হতে রক্ষা করার জন্য যথোপযুক্ত বাসস্থান বা গোয়ালঘর প্রয়োজন। আমাদের আবহাওয়ার আলোকে ঘরে প্রচুর আলো বাতাস চলাচলের জন্য ঘরটি উত্তর-দক্ষিণমুখী হওয়া বাঞ্চনীয়। কোন অবস্থাতেই যেন ঘরে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা যেন না থাকে। এতে ঘরের মেঝেটি ইট বিছানো থাকলে ভাল হয়। ঘরের দুর্গন্ধ ও মশামাছি দমনের জন্য মাঝে মাঝে জীবাণুনাশক দ্বারা ধোয়া প্রয়োজন।

গবাদিপশুর বাসস্থান দুই ধরণের হতে পারে : ১. উন্মুক্ত বা উদাম ঘর ২. বাঁধা ও প্রচলিত ঘর।

বাঁধা ঘরের বৈশিষ্ট্য: এই পদ্ধতিতে গরুর গলায় দড়ি বা লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে পালন করা যায়। গাভীর খাদ্য, পানি গ্রহণ এবং দুধ দোহন একই স্থানে করা যায়।

সুবিধা : বাঁধা থাকে বিধায় গাভীর দুধ দোহন সহজ হয়, প্রতিকূল আবহাওয়ায় পশু নিরাপদ থাকে, কৃত্রিম প্রজননের জন্য বেশ সুবিধাজনক, নির্ধারিত অল্প জায়গায় পশু পালন করা যায়।

অসুবিধা: এই পদ্ধতিতে ঘর তৈরি খরচ বেশি, পশুর সহজে ঘোরাফেরার ব্যবস্থা থাকে না, এতে পশুর ব্যয়াম না হওয়াতে বিভিন্ন ধরনের রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে, একই জায়গায় দিনরাত্রি বাঁধা থাকে বলে মেঝে স্যাঁতস্যাঁতে থাকে।

বাঁধা ঘরের নকশা: এই পদ্ধতির গো-শালায় পশু সব সময় বাঁধা অবস্থায় থাকে। এজন্য গো-শালা যাতে সহজে পরিস্কার করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে ঘর তৈরি করা প্রয়োজন। প্রচলিত গো-শালা দুই ধরনের হয়-

একসারি বিশিষ্ট গো-শালা: অল্প সংখ্যক গবাদি পশুর জন্য একটি লম্বা সারিতে বেঁধে পালনের জন্য এই গো-শালা তৈরি করা হয়। প্রতিটি পশুকে পৃথক রাখার জন্য জিআইপাইপ দিয়ে পার্টিশন দেয়া হয়, পার্টিশনের পাইপ লম্বায় ৯০ সে.মি. এবং উচ্চতায় ৪৫ সে.মি. হওয়া প্রয়োজন, একটি গরুর দাঁড়াবার স্থান ১৬৫ সে.মি., পাশের জায়গা ১০৫ সে.মি., খাবার পাত্র ৭৫ সে.মি. এবং নালা ৩০ সে.মি. হওয়া প্রয়োজন, একই মাপে পশুর সংখ্যা অনুযায়ী জায়গা নির্ধারণ করে গো-শালা তৈরি করা হয়, গো-শালা হবে একচালা বিশিষ্ট ঘর, ঘরের ছাদ প্রায় ৩০০ সে.মি. উঁচুতে করতে হয়।

দুই সারি বিশিষ্ট গো-শালা: অল্প জায়গায় অধিক পশুপালনের জন্য এ ধরণের গো-শালা তৈরি করা হয়, এ ধরনের গো-শালায় পশুকে দুভাবে রাখা যায়, মুখোমুখি পদ্ধতি ও বাহির মুখ পদ্ধতি। মুখোমুখি পদ্ধতিতে দুই সারি পশু সামনাসামনি থাকে। দুইসারি খাবারের পাত্রের মাঝখানে ১২০ সে.মি. চওড়া রাসত্দা থাকে- যা পাত্রে খাবার দেবার জন্য ব্যবহার করা হয়, একটি গরুর জন্য দাঁড়ানোর জায়গা ৫.৫ ফুট, পাশের জায়গা ৩.৫ ফুট।

সুবিধা: একই সাথে দুইসারি পশুকে সহজে খাবার ও পানি সরবরাহ করা যায়, দুধ দোহনের জন্য অধিকতর আলো পাওয়া যায়, পশু নিজ জায়গায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, পরিচর্যাকারী সহজে চলাফেরা করতে পারে।
একটি গাভীকে নিম্ন তালিকা অনুসারে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে :
কাঁচা ঘাস (সবুজ ঘাস) ২০-৩০ কেজি, দানাদার খাদ্য মিশ্রণ: ১৮-২০% প্রোটিন সমৃদ্ধ: ১ম ৩ কেজি দুধ উৎপাদনের জন্য- ০৩ কেজি, পরবর্তী প্রতি কেজি দুধ উৎপাদনের জন্য-০.৫ কেজি, লবণ-৫০-৬০ গ্রাম, পরিস্কার পানি-প্রয়োজন মত।

পরিচর্যা: গাভীর সঠিক পরিচর্যা না করলে উন্নত জাতের গাভী পালন করেও গাভীকে সুস্থ সবল উৎপাদনক্ষম রাখা সম্ভব হবে না। ফলে গাভী হতে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ দুধ, মাংস পাওয়া যাবে না এবং গাভী পালন অলাভজনক হবে।

দুধ দোহন: গাভীর দুধ দৈনিক ভোরে একবার এবং বিকালে একবার নির্দিষ্ট সময়ে দোহন করতে হবে। দুধ দোহনের পূর্বে গাভীর উলান ও দোহনকারীর হাত পরিস্কার পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

প্রজনন: গাভীর বংশানুক্রমিক গুণগতমান উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পিত প্রজনন ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে। যে ষাড়ের মা, দাদী, নানী যত বেশি পরিমাণ দুধ দেয় তার বাচ্চার দুধ উৎপাদনের ক্ষমতা ততই বেশি হয়। তাই যখন গাভী গরম হবে তখন গুণগতমানসম্পন্ন ষাড়ের বীজ দ্বারা নিকটস্থ কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র হতে গাভীকে প্রজনন করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

খামারের রেকর্ড সংরক্ষণ: খামারের লাভক্ষতি নিরূপণ আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাবের উপর নির্ভরশীল। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য পরিকল্পনা ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিয়য়ে মূল্যায়ন করা দরকার। খামারের উৎপাদিত পণ্যের হিসাব, ক্রয়, বিক্রয়, জন্ম, মৃতু্য এবং কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রমের জন্য সঠিক তথ্য রক্ষাকল্পে রেকর্ড সংরক্ষণ করা অত্যাবশ্যকীয়।

উন্মুক্ত বাসস্থানে নিম্নোক্ত হারে জায়গার প্রয়োজন:
পশুর ধরণ ঘরে প্রতি পশু স্থান প্রতি পশুর জন্য মুক্ত স্থান খাদ্যপাত্র
বাড়ন্ত বাছুর ২.৫-৩ বর্গ মিটার ৫-৬ বর্গ মিটার ৩৭-৫০ সেন্টিমিটার
গাভী ৩-৩.৫ বর্গ মিটার ৮-১০ বর্গ মিটার ৫০-৬০ সেন্টিমিটার
গর্ভবতী গাভী ১০-১২ বর্গ মিটার ১৮-২০ বর্গ মিটার ৬০-৭০ সেন্টিমিটার
লেখক: কৃষিবিদ সোহরাব জিসান

গাভী পালন : আয় বাড়তে করণীয়

হয়তো আপনার বাসা সংলগ্ন কিছু জায়গা পতিত অবস্থায় রয়েছে। সেখানে গাভী, হাঁস-মুরগির খামার ও মাছ চাষ করে বাড়তি টাকা উপার্জন করতে পারেন। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করে নিতে পারেন। একদিকে ৮৪ ফুট, আরেক দিকে ৬০ ফুট—এমনি একটি জায়গায় কী কী করবেন, কত পুঁজি নিয়ে নামবেন এবং কবে থেকে লাভবান হতে থাকবেন তার একটি বর্ণনা দেয়া হলো।
সংখ্যা ৮টি। জায়গার পরিমাণ ১৬ ফুট – ৫০ ফুট।

খরচের হিসাব : 
১. গাভীর ঘর নির্মাণ (উপরে টিন, চারদিকে দেয়াল) ১০,০০০ টাকা;
২. ৮টি গাভী ক্রয় (বাছুরসহ দুধের গাভী) প্রতিটি ৫০,০০০ করে ৪,০০,০০০ টাকা;
৩. খানার পাত্রসহ আনুষঙ্গিক খরচ ৪,০০০ টাকা;
৪. প্রতিদিন খাদ্য খরচ (১টির জন্য ১০০ টাকা) ৮টির জন্য (৮০০ × ৩০) ২৮,০০০ টাকা (প্রতি মাসে);
৫. ওষুধ, ভিটামিন (মাসিক) ১৫০০ টাকা;
৬. টিউবওয়েল স্থাপন ৮,০০০ টাকা;
৭. পানি সাপ্লাইয়ের মোটর ৮,০০০ টাকা;
৮. ৪টি ফ্যান ১৬,০০০ টাকা; মোট খরচ ৯,৮৫,০০০ টাকা।

গাভীর খামার থেকে আয় : প্রতিটি গাভী দৈনিক ১৮ কেজি দুধ দেবে। প্রতি কেজির দাম ৩০ টাকা। একটি গাভীর দুধ থেকে প্রতিদিন গড়ে পাওয়া যাবে ৩০ × ১৮ = ৫৪০ টাকা। তাহলে ৮টি গাভীর দুধ থেকে প্রতিদিন ৫৪০ × ৮ = ৪৩২০ টাকা আয় হবে। ফলে ৩০ দিনে ৮টি গাভীর দুধ বিক্রি থেকে ৪৩২০ × ৩০ = ১,২৯,৬০০ টাকা। গাভী প্রায় ৮ মাস ধরে গড়ে ১৮ কেজি দুধ দেবে। এরপর দুধের পরিমাণ কমতে থাকবে। দুধ বিক্রি থেকে ৮ মাসে আয় ১,২৯,৬০০ × ৮ = ১০,৩৬,৮০০ টাকা। প্রাথমিক খরচ ৯,৮৫,০০০ টাকা; মোট আয় = ৫১,৮০০ টাকা। ৮ মাস পর নিট লাভ ৫১,৮০০ টাকা।
৮ মাস পর দুধ দেয়ার পরিমাণ কমে যাবে। গড়ে ৮ কেজিতে নেমে আসবে। তাহলে ৮টি গাভী থেকে ৬৪ কেজি দুধ পাওয়া যাবে। ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে ৬৪ কেজি দুধ থেকে দৈনিক আয় ১৯২০ টাকা। ৩০ দিনে আয় ১৯২০ × ৩০ = ৫৭,৬০০। ৮ মাসের আয় ৫৭,৬০০ × ৮ = ৪,৪০,৮০০ টাকা। তাহলে প্রথম ৮ মাসে দুধ বিক্রি থেকে আয় ১০,৩৬,৮০০ টাকা + পরবর্তী ৪ মাসে আয় ৪,৪০,৮০০ টাকা। মোট দুধ বিক্রি থেকে আয় ১৪,৭৭,৬০০ টাকা।


৮ মাস পর দুধ দেয়ার পরিমাণ কমে যাবে। তখন কৃত্রিম প্রজনন দিতে হবে। কৃত্রিম প্রজনন দেয়ার প্রায় ৮ মাস পর গাভী বাচ্চা দেবে। এরপর প্রতিবার ২০ কেজি করে দুধ দেবে। এ গাভী ৪ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত পোষা যাবে। ১ বছর পর এক-একটি বাছুর প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে। ৩ বছর পর বাছুরগুলো আবার গর্ভবতী হবে। তখন এক-একটির দাম ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় দাঁড়াবে। এ কারণে বাছুরগুলো রেখে ষাঁড়গুলো বিক্রি করে দিতে হবে।
গাভীকে দানাদার খাদ্য, কাঁচা ঘাস, খড়, চালের কুঁড়া ও প্রচুর পরিমাণে পানি দিতে হবে। পরবর্তী বছরগুলোতে ঘর নির্মাণ খরচ লাগবে না, গাভীও কিনতে হবে না। ৮ মাস পর আবার গাভীগুলো দুধ দেবে। আগের বাছুর বড় হবে। এসময় ঘর নির্মাণ খরচ, গাভী ক্রয় খরচ, টিউবওয়েল নির্মাণ খরচ আর লাগবে না, তবে খাদ্য খরচ বেড়ে যাবে। আগের ৮টি গাভী, ৮টি বড় বাছুর, নতুন ৮টি ছোট বাছুর সব মিলে ২৪টি গরু হবে। আগের বাছুরের মধ্যে যদি ষাঁড় থাকে তাহলে বিক্রি করে দিতে হবে। ৮টি বাছুরের মধ্যে যদি ৪টি ষাঁড় থাকে তাহলে প্রতিটি ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করলে ১৫,০০০ × ৪ = ৬০.০০০ টাকা আয় হবে। এর বেশিও আয় হতে পারে।

৮ মাস পর বাছুর প্রসবের পরে খরচ : খাদ্য খরচ বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে দৈনিক ১,৫০০ টাকা। তাহলে এক মাসে খাদ্য খরচ ১,৫০০ × ৩০ = ৪৫,০০০ (প্রতি মাসে)। বিদ্যুত্, পানি, ওষুধ, ভিটামিন ৫,০০০ টাকা। মোট ব্যয় ৫০,০০০ টাকা।

আয় : দুধ বিক্রি থেকে এক মাসে আয় ১,২৯,৬০০ টাকা; ১,২৯,৬০০ - ৫০,০০০ = ৭৯,৬০০ টাকা নিট লাভ। এছাড়া প্রতি বছর বাছুর বিক্রি থেকে এবং গোবর বিক্রি করেও টাকা অর্জন করা যাবে। গাভীগুলো ৪ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত দুধ দেয়ার পর এগুলো বিক্রি করে দিতে হবে। এ ধরনের একটি গাভী ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে।
লেখক: মোহাম্মদ মোস্তফা
এগ্রোবাংলা ডটকম

দুধ উত্পাদন বৃদ্ধির তিনটি কৌশল

গাভী পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য দুধ উত্পাদন। আর তার জন্য প্রয়োজন সুষম খাবার সরবরাহ, রোগাক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে যথাযথ চিকিত্সাসহ অন্যান্য দৈনন্দিন পরিচর্যা। তবে এর সাথে আরো কিছু সহজ বিষয়ের দিকে নজর দিলে দুধের উত্পাদন আশানুরূপ মাত্রায় বাড়ানো সম্ভব। দুধে আশি ভাগের বেশি পানি থাকে। বাকি ১২.৫ ভাগ ফ্যাট নয় এমন শক্ত পদার্থ যেমন- ভিটামিন, মিনারেল ইত্যাদি। অবশিষ্টাংশ ফ্যাট। এক লিটার দুধ উত্পাদনের জন্য গাভীর প্রায় চার লিটার পানির প্রয়োজন হয়। অথচ অধিকাংশ সময় গাভীকে পর্যাপ্ত পানি দেয়া হয় না। যেমন- রাতের বেলা পিপাসা লাগলেও গাভী পানি পান করতে পারে না। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গাভীকে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি দিলে দুধের উত্পাদন প্রায় ২০ শতাংশ বেড়ে যায়। তাই গাভী যেন প্রয়োজনমত পানি পান করতে পারে সে জন্য চব্বিশ ঘণ্টা পানির পাত্রে পানি দিতে হবে। প্রচলিত ধারণা হচ্ছে গাভীকে বেশি খাবার দিলে দুধ উত্পাদন বেশি হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে সুষম, পুষ্টিকর খাবার গাভীর শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এবং দুধ উত্পাদনের জন্য অপরিহার্য কিন্তু অতিরিক্ত খাবার কখনোই নয়। বরং এতে হিতে বিপরীত হয়। খাবার হজমের জন্য পাকস্থলীর রাসায়নিক পরিবেশ হচ্ছে ক্ষারীয়। গাভী যত বেশি জাবর কাটবে খাবারের সাথে বেশি লালা মিশ্রিত হবে এতে খাবার বেশি হজম হবে। গাভী জাবর কাটার সময় না পেলে খাবার হজম হবে না। আর এ কারণে পুষ্টিও কম পাবে। আর পুষ্টি কম পেলে দুধ উত্পাদনও কমে আসবে। তাই খাবার হজমের জন্য গাভীকে কমপক্ষে আট ঘণ্টা জাবর কাটার সময় দিতে হবে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর আর কোনো খাবার দেয়া ঠিক হবে না। গাভীকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে হবে। প্রতি লিটার দুধে প্রায় ১.২ গ্রাম ক্যালসিয়াম থাকার কারণে দুগ্ধবতী গাভীর দুধ উত্পাদনের জন্য বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হয়। খাবারের সাথে ক্যালসিয়াম সরবরাহ না করলে গাভীর হাড় থেকে ক্যালসিয়াম ব্যবহার করে থাকে। এতে হাড়ে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে গাভী দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পড়ে। দুধ উত্পাদনও কমে যায়।
উপরের বিষয়গুলোর দিকে নজর দিলে খরচ কমের পাশপাশি দুধ উত্পাদন বৃদ্ধি পাবে। খামারি লাভবান হবে।

গাভীর রোগ-ব্যাধি ও তার প্রতিকার

গাভীর রোগ-ব্যাধি ও তার প্রতিকার
গৃহপালিত পশুর মধ্যে গাভী পালন কৃষিজীবি সমাজের এক দীর্ঘ কালের প্রাচীন ঐতিহ্য। আমাদের দেশে গাভী পালন এক সময় কেবল গ্রামের কৃষিজীবি পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু দুগ্ধ চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে তা গ্রামীণ কৃষিজীবীদের সীমানা চাড়িয়ে শহরের শিক্ষিত, উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে বহুদিন আগেই। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দুগ্ধ খামার গড়ে উঠেছে এবং তা ক্রমেই সমপ্রসারিত হছে। এটা নিঃসন্দেহে শুভ লক্ষণ। ফরে উন্নত জাতের বাচুর প্রজনন এবং গাভীর যত্নের প্রয়োজনীয়তাও বেড়েছে। গাভী পালনে এর পরিচচর্যা এবং রোগ-ব্যাধি সম্পর্কেও সংশ্লিষ্ট দের সচেতনতা অপরিহার্য। নানা রকমের রোগে আক্রান্ত হতে পারে আপনার বাড়ি কিংবা খামারের পোষা গাভী। এসব রোগ এবং এর প্রতিকার বিষয়েই এবার আলোকপাত করা যাক।
ওলান পাকা রোগ
নানা প্রকার রোগ-জীবাণু বা অন্য কোনো রাসায়নিক দ্রব্যের দ্বারা এ রোগের সৃষ্টি হয়।
লক্ষণ
ক) ওলান লাল হয়ে ওঠে এবং হাত দিয়ে স্পর্শ করলে গরম অনুভব হয়।
খ) ব্যাথার দরুণ গাভী ওলানে হাত দিতে দেয় না এবং দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
গ) হলুদ বর্ণ দুধের সাথে ছানার মতো টুকরা বের হয়।
পুরনো রোগে দুধ কমে যায় এমনকি একেবারে বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং ওলান শুক্ত হয়ে যায়।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
প্রথমত আক্রান্ত পশুকে পরিস্কার জায়গায় রাখতে হবে। ওলানে জমে থাকা দুধ বের করে দিতে হবে। বাঁচের মুখ বন্ধ হয়ে গেলে টিটিসাইফন দ্বারা বাঁচের মুখ পরিস্কার করে দিতে হবে।
১. ভেলুস ২০%
২. এ্যান্টিবায়েটিক
৩. ম্যাসটাইটিস টিউব ইত্যাদি।
পেট ফাঁপা
সাধারণত গরহজমের জন্য গাভীর পেট ফেঁপে যায়। এছাড়া কিছু কিছু রোগের কারণেও পেট ফাঁপে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
দানাদার খাদ্য বন্ধ করে দিতে হবে। শুধুমাত্র শুকনা খড় খেতে দেওয়া যেতে পারে।
১. নিওমেট্রিল
২. কারমিনেটিভ মিঙ্চার ইত্যাদি।
জায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা
অনেক রোগের দরুন পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। তবে অস্ত্রর রোগ এদের মধ্যে অন্যতম। আক্রান্ত পশু দূর্বল হয়ে পড়ে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
১. সকেটিল পাউডার
২. স্টিনামিন ট্যাবলেট ইত্যাদি।
নিউমোনিয়া
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, রাসায়নিক দ্রবাদি, ঠান্ডা ইত্যাদির কারণে পশুর নিউমোনিয়া হতে পারে।
লক্ষণ
ক) ঘনঘন নিঃশ্বাস এ রোগের প্রধান লক্ষণ।
খ) রোগের শেষ পর্যায়ে শ্বাসকষ্ট হয়
গ) শুল্ক কাশি হতে পারে।
ঘ) তীব্র রোগে জ্বর হয় এবং নাক দিয়ে সর্দি পড়ে।
ঙ) বুকের মধ্যে গরগর শব্দ হয়।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। ভেলুসং ২০%
২। অ্যান্টিবায়টিক
৩। ক্লোরেটেট্রাসন
৪। টেরামাইসিন
৫। ভেটিবেনজামিন
কৃমি
কৃমি নানা জাতের ও নানা আকারের হয়ে থাকে। কৃমিতে আক্রান্ত পশুকে ঠিক মতো খাবার দিলেও তার স্বাস্থ্যের কোন উন্নতি হয় না। বরং দি দিন রোগা হতে থাকে।
লক্ষণ
ক) পশু দূর্বল হয়ে যায়
খ) খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দেয়
গ) হাড্ডিসার হয়ে যায়
ঘ) সময় সময় পায়খানা পাতলা হয়
ঙ) শরীরের ওজন কমে যায়
ছ) দুগ্ধবর্তী গাভীর দুধ কমে যায়
চ) রক্তশুণ্যতায় ভোগে বলে সহজেই অন্যান্য আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে।
জ) দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধি পায় না।
ঝ) ফলে পশুকে রোগা ও আকারে ছোট দেখায়
চিকিৎসা ও প্রতিকার
গোবর পরীক্ষান্তে কৃমিনাশক ওষুধ দ্বারা চিকিৎসা করতে হবে।
লক্ষণ
প্রাথমিক অবস্থায়
ক) আক্রান্ত পশু কিছু খেতে চায় না
খ) হাটতে চায় না
গ) জিহবা বের হয়ে থাকে
ঘ) মাথা ও পায়ের মাংসপেশী কাপতে থাকে
পরবর্তী অবস্থায় আক্রান্ত গাভী
ক) বুকে ভর দিয়ে শুয়ে পড়ে
খ) মাথা বাঁকিয়ে এক পাশে কাধের ওপর ফেলে রাখে
গ) এ অবস্থায় গাভী অনেকটা চৈতন্য হারিয়ে ফেলে
ঘ) গাভী কাত হয়ে শুয়ে পড়ে, উঠতে পারে না
ঙ) ধমনীর মাত্রা বেড়ে যায়
চ) অবশেষে গাভী মারা যায়
চিকিৎসা ও প্রতিকার
গাভীকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ক্যালসিয়াম ইনজেকশন দিতে পারলে দ্রুত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।
কিটোসিস
দেহের মধ্যে শর্করা জাতীয় খাদ্যের বিপাকক্রিয়ার কোন প্রকার বিঘ্ন ঘটলে রক্তে এসিটোন বা কিটোন নামক বিষাক্ত দ্রব্য অধিক মাত্রায় জমা হয়ে দেহ বিষিয়ে তোলে। এই বিষক্রিয়ার ফলেই কিটোসিস রোগের সৃষ্টি হয়।
লক্ষণ
ক) ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়
খ) গাভীর দুধ কমে যায়
গ) দৈহিক ওজন কমে যায়
ঘ) কোষ্ঠাকাঠিন্য দেখা দেয়
ঙ) এছাড়া আক্রান্ত পশুর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে এসিটোনের মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যায়
চ) অনেক সময় গাভী এক জায়গায় দাঁড়িয়ে চতুর্দিকে ঘোরে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
অপটিকরটেনল-এস ইনজেকশন।
ফুল আটকে যাওয়া
বাচ্চা প্রসবের পর অনেক সময় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফুল বের হয়ে আসে না। এবং এসব ক্ষেত্রে গর্ভ ফুলের অংশ বিশেষ বাইরের দিক হতে ঝুলে থাকতে দেখা যায়।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। অকসিটোসিন
২। ইউটোসিল পেশারিস
৩। এ্যানটবায়েটিক ইনজেকশন ইত্যাদি।
জলুবায়ুর প্রদাহ
অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগের জীবাণূ যোনিপথ হতে জরায়ুতে পৌছে এ রোগ হতে পারে। গর্ভ ফুলের টুকরা ভেতরে থেকে গেলে পচে যায় এবং প্রদাহের কারণ ঘটায়। কামপর্বে পশুর যৌন-ক্রিয়ার সয়ও অনেক সময় জরায়ুতে রোগ জীবানূ সংক্রমিত হয়ে থাকে।
লক্ষণ
ক) জ্বর হয়
খ) দুর্গন্ধযুক্ত জলের মতো কিংবা কালচে লাল রঙের স্রাব পড়তে দেখা যায়
গ) খাদ্যে অরুচি হয়
ঘ) দুধ কমে যায়
ঙ) গাভী পাল রাখে না
চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। ইউটোলিস পেরারিস
২। এ্যান্টিবায়েটিক ইনজেকশন ইত্যাদি
গর্ভপাত
সাধারণত রোগ-জীবানুর কারণেই অধিকাংশ গর্ভপাত হয়ে থাকে। এছাড়া আঘাত, বিষক্রিয়া, পক্ষাঘাত ইত্যাদি কারণেও গর্ভপাত হতে পারে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। ইউটোসিল পেশারিশ
২। এ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন ইত্যাদি।
অনুর্বরতা ও সাময়িক বন্ধ্যাত্ব
সাধারণত প্রজনন ইন্দ্রিয়সমূহের বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি, হরমোন ক্ষরণের অনিয়ম, অসমতা, ওভারিতে সিস্ট ও পুষ্টিহীনতা ইত্যাদি কারণে সাময়িক বন্ধ্যাত্ব রোগ হয়ে থাকে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
সঠিক কারণ নির্ধারণ করে হরমোন দ্বাা চিকিৎসা করলে সাময়িক বন্ধ্যাত্ব দূর হয়। যৌননালীর অসুখের দরুন বন্ধ্যাত্ব হলে ইউটোলিস পেশারিস, স্টিমাভেট ট্যাবলেট জরায়ুতে স্থাপন করতে হবে।ভিটামিন 'এ' যুক্ত সুষম পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।
খুরো বা খুর পচা
খুরের ভিতরের বা চারপাশের টিস্যু পচনশীল অবস্থাকে ফুটরট বলে।
লক্ষণ
ক) আঘাতপ্রাপ্ত টিস্যুতে পচন যুক্ত ঘা হয়
খ) আশপাশের টিস্যুতে রক্ত জমা হতে দেখা যায়
গ) পশু খুড়িয়ে হাঁটে এবং কিছু খেতে চায় না
ঘ) পশুর ওজন ও দুধ কমে যায়
ঙ) শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়
চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। ভেসাডিন
২। ভেসুলাং ২০% ইনজেকশন
৩। এ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন
৪। ক্ষতস্থান ভালভাবে পরিস্কার করে দিনে ২ বার ডাস্টিং পাউডার ব্যবহার করতে হবে।
ককসিডিওসিস বা রক্ত আমাশয়
রক্ত মিশানো পাতলা পায়খানা, রক্ত শূণ্যতা ও শরীরের দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্তি এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
লক্ষণ
ক) শরীরের তাপমাত্রা অল্প বৃদ্ধি পায়
খ) হঠাৎ করে পায়খানা শুরু হয়
গ) পায়খানার সময় ঘন ঘন কোথ দেয়
ঘ) পায়খানা খুবই দুগর্ন্ধযুক্ত
ঙ) আক্রান্ত পশু দিন দিন দূর্বল হতে থাকে
চ) মলের সাথে মিউকাস অথবা চাকা চাকা রক্ত থাকে
ছ) খেতে চায় না
জ) শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়
চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। ভেলুসং ২০% ইনজেকশন
২। সকেটিল পাউডার ইত্যাদি
বেবিসিয়াসিস বা রক্ত প্রস্রাব
আটালি দ্বারা এ রোগের জীবাণূ সংক্রামিত হয়।
লক্ষণ
ক) হঠাৎ জ্বর (১০৮ ডিগ্রী ফা.) হয়
খ) জাবর কাটা বন্ধ করে দেয়
গ) রক্তের সঙ্গে লোহিত কাণিকা ডাঙ্গা হিমোব্লোবিন যুক্ত হবে প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে আসে।
ঘ) প্রস্রাবের রঙ লাল হয়।
প্রতিকার ও চিকিৎসা
১। বেরিনিণ ইনজেকশন
২। শরীরের আটালিমুক্ত করার জন্য নেগুভন সপ্রে অথবা আসানটল সপ্রে দিতে হবে।
উকুন/আটালি
এরা এক প্রকার বহিঃ পরজীবী। অধিকাংশ গবাদি পশু উকুন/ আটালি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
১। নিওসিডল ৪০ ডবি্লউ-পি
২। আসানটল
৩। নেগুভন সপ্রে ইত্যাদি মিশিয়ে পশুর গায়ের সপ্রে করতে হবে।
তথ্য সূত্র: শাইখ সিরাজ রচিত ‘মাটি ও মানুষের চাষবাস’ গ্রন্থ থেকে সংগ্রহীত

গবাদি পশুর গলাফুলা রোগ ও প্রতিকার

গলাফুলা একটি তীব্র প্রকৃতির রোগ যা গরু এবং মহিষকে আক্রান্ত করে। এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ যা Pasteurella multocida দ্বারা সংঘটিত হয়। এ রোগে মৃত্যুর হার খুবই বেশি। বর্ষাকালে গলাফুলা রোগ বেশি দেখা যায়। আমাদের দেশে বর্ষার শুরুতে এবং বর্ষার শেষে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। পশুর শরীরে স্বাভাবিক অবস্থায় এ রোগের জীবাণু বিদ্যমান থাকে। কোনো কারণে যদি পশু ধকল যেমন ঠান্ডা, অধিক গরম, ভ্রমণজনিত দুর্বলতা ইত্যাদির সম্মুখীন হয় তখনই এ রোগ বেশি দেখা দেয়। গলাফুলা রোগের প্রচলিত নাম ব্যাংগা, ঘটু, গলগটু, গলবেরা ইত্যাদি।

চিত্র-১ গলাফুলা রোগে আক্রান্ত পশুর মুখমন্ডলসহ গলা ফুলে উঠেছে
এপিডেমিওলজি ও রোগজননতত্ত্ব 
গলাফুলা (hemorrhagic septicemia) এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ ইউরোপের কিছু দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যমান। তবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এটি বেশি পরিলক্ষিত হয়। গলাফুলা মূলত গরু ও মহিষের রোগ হলেও শুকর, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া, বাইসন, উট, হাতী এমনকি বানরেও এ রোগ হতে পারে। এ রোগ বছরের যে কোনো সময় হতে পারে তবে বর্ষাকালে এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। বাহক পশুর টনসিল ও ন্যাজো-ফ্যারিনজিয়াল মিউকোসায় এ রোগের জীবাণু থাকে। অনুকূল পরিবেশে রক্তে এ রোগের জীবাণুর সংখ্যা বেড়ে গিয়ে septicemia করে। এই বৃদ্বিপ্রাপ্ত জীবাণু মরে গিয়ে এন্ডোটক্সিন নিঃসৃত হয় যার ফলে রক্ত দূষিত হয়ে পড়ে। এন্ডোটক্সিন রক্তের ক্যাপিলারিস নষ্ট করে; ফলে এডিমা হয়। এছাড়া এন্ডোটক্সিন একদিকে কোষ কলা বিনষ্ট করে দেহে হিস্টামিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে অন্যদিকে টিস্যু বিনষ্টের ফলে টিস্যুর প্রোটিন ভেঙ্গে রক্তে প্রোটিনের পরিমাণ হ্রাস পায়। ফলে, এডিমার সৃষ্টি হয়। সে কারণে এ রোগে আক্রান্ত পশুর গলা ফুলে যায় ও রক্তে জীবাণুর উপস্থিতির(septicemia) কারণে পশুর দ্রুত মৃতু্য হয়।
লক্ষণ
এ রোগ অতি তীব্র ও তীব্র এ দুই ভাবে হতে পারে। অতি তীব্র প্রকৃতির রোগে হঠাৎ জ্বর (১০৬-১০৭০ ফা) হয়ে মুখ ও নাক দিয়ে তরল পদার্থ বের হতে থাকে। পশু অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে ও খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে মৃতু্য ঘটে। তীব্র প্রকৃতির রোগে আক্রান্ত পশু ২৪ ঘন্টার অধিক বেঁচে থাকে। এ সময় পশুর এডিমা দেখা দেয় যা প্রথমে গলার নিচে, পরে চোয়াল, তলপেট এবং নাক, মুখ, মাথা ও কানের অংশে বিসতৃত হয়।
গলায় স্ফীতি থাকলে গলার ভেতর ঘড় ঘড় শব্দ হয় যা অনেক সময় দূর থেকে শোনা যায়। প্রদাহযুক্ত ফোলা স্থানে ব্যথা থাকে এবং হাত দিলে গরম ও শক্ত অনুভূত হয়। সূঁচ দিয়ে ছিদ্র করলে উক্ত স্থান হতে হলুদ বর্ণের তরল পদার্থ বের হয়ে আসে। অনেক সময় কাশি হয় এবং চোখে পিচুটি দেখা যায়। নাক দিয়ে ঘন সাদা শ্লেষ্মা পড়তে দেখা যায়। সাধারণত লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আক্রান্ত পশু মারা যায়। মারা যাবার সাথে সাথে পেট খুব ফুলে উঠে এবং নাক ও মুখ দিয়ে তরল পদার্থ বের হতে থাকে। পোস্টমর্টেম করলে পেরিকার্ডিয়াল স্যাক (pericardial sac) এ রক্ত মিশ্রিত তরল পদার্থ দেখা যায়, যা থোরাসিক (thoracic) এবং এবডোমিনাল ক্যাভিটি (abdominal cavity) তে বিসতৃত হতে পারে। ফ্যারিনজিয়াল এবং সার্ভাইক্যাল লিম্ফনোডে বিন্দু আকৃতির (petechial) রক্তক্ষরণ পরিলক্ষিত হয়।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব 
গলাফুলা রোগের যথেষ্ট অর্থনৈতিক গুরুত্ব আছে বিশেষত, এশিয়া এবং আফ্রিকার কিছু দেশে। এশিয়াতে ৩০% গবাদিপশু এ রোগের প্রতি সংবেদনশীল। ভারত দুগ্ধ উৎপাদনে এশিয়াতে সর্বোচ্চ যেখানে ৫০% দুধ আসে মহিষ থেকে, যারা এ রোগের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। ভারতে গত চার দশক ধরে গলাফুলা রোগে মৃত্যু হার গবাদিপশুর মৃত্যুহারের ৪৬-৫৫%। ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ভারতে গবাদিপশুর ৫টি মহামারীতে আক্রান্ত গবাদিপশুর ৫৮.৭% মারা যায়। এই ৫টি মহামারী হল ক্ষুরারোগ, রিন্ডারপেষ্ট, বাদলা, এনথ্রাক্স এবং গলাফুলা। শ্রীলংকায় ১৯৭০ এর দশকে পরিচালিত একটি অপঃরাব সারভ্যাইল্যান্স স্টাডিতে দেখা গেছে গলাফুলা আক্রান্ত স্থানসমূহে বছরে প্রায় ১৫% মহিষ এবং ৮% গরু গলাফুলার কারণে মারা যায়। পাকিস্তানে একটি রির্পোটে দেখা গেছে সেখানে গবাদিপশুর মোট মৃত্যুর ৩৪.৪% মারা যায় গলাফুলা রোগে। মায়ানমারে পশু রোগ নিয়ন্ত্রণে বরাদ্দকৃত মোট বাজেটের ৫০ ভাগ ব্যয় হয় গলাফুলা রোগ দমনে। গলাফুলা রোগে শুধু গবাদিপশুর মৃত্যুই ঘটে না, সাথে সাথে বেশ কিছু অপ্রত্যক্ষ ক্ষতিও হয়। যেমন -
উৎপাদন হ্রাসঃ মাংস, দুধ, জোয়াল টানা, হালচাষের বিকল্প উপায়ের জন্য মোট ব্যয় ইত্যাদি। পশুর প্রজনন ক্ষমতা বিঘি্নত হওয়া, চিকিংসা খরচ ইত্যাদি।
প্রতিরোধ
এ রোগ উচ্ছেদ করা অসম্ভব কারণ এ রোগের জীবাণু স্বাভাবিক অবস্থায় পশুর দেহে থাকে। তবে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
• রোগাক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা করে সুস্থ পশুকে টিকা দানের ব্যবস্থা করতে হবে।
• মড়কের সময় পশুর চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
• হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পশুর পরিচর্যার ব্যবস্থা করতে হবে।
• টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত এল.আর. আই কতৃর্ক প্রস্তুতকৃত টিকার নাম গলাফুলা টিকা। লোকাল স্ট্রেইন দ্বারা প্রস্তুতকৃত এই অয়েল এডজুভেন্ট টিকা সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক (৬ মাস বয়সের উপরে) গবাদিপশুকে ২ মিলি মাত্রায় ও ছাগল ভেড়াকে ১ মিলি মাত্রায় প্রয়োগ করতে হয়। এ রোগের প্রাদুর্ভাব আছে এরূপ এলাকায় ৬ মাস বা তদুধর্ব বয়সী বাছুরে প্রাপ্ত বয়স্ক গরুর অর্ধেক মাত্রায় টিকা দিতে হয়। এলাম অধঃপাতিত (Alum precipitated) টিকা মাংসে প্রদান করা হয়। যেহেতু দুই ধরনের টিকাই মাঠপর্যায়ে ব্যবহার হয় তাই বিষয়টির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ অয়েল এডজুভেন্ট টিকা তেল থেকে প্রস্তুতকৃত বিধায় এই টিকা ভুলক্রমে মাংসে প্রদান করলে মাংসে প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে মাংসের ক্ষতি হয় এবং সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। টিকা প্রদানের ২-৩ সপ্তাহ পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মাতে শুরু করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ১ বৎসর কাল পর্যন্ত বজায় থাকে। এই টিকা মৃত জীবাণুর দ্বারা প্রস্তুত বিধায় এই টিকা প্রদানের মাধ্যমে রোগ বিস্তারের কোনো সম্ভাবনা নাই। টিকা প্রয়োগের স্থান ২/৩ দিন পর্যন্ত ফোলা থাকতে পারে। ত্রুটিপূর্ণ ইনজেকশনের কারণে এই ফোলা স্বাভাবিক এর চেয়ে কয়েকদিন বেশি থাকতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে এনাফাইলেকটিক শক দেখা দিতে পারে। কোনো এলাকায় বা খামারে টিকা প্রদানের পূর্বে অল্প কয়েকটি গবাদিপশুকে টিকা প্রদানের পর ২৫-৩০ মিনিট অপেক্ষা করে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা শ্রেয়। যদি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় তবে উক্ত বোতলের টিকা পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না। অয়েল এডজুভেন্ট টিকা বেশ ঘন হওয়ায় এই টিকা প্রদানে মোটা বারের নিডল ব্যবহার করা সুবিধাজনক।
রোগ নির্ণয় 
হঠাৎ মৃত্যু হয় এ ধরনের রোগ যেমন বজ্রপাত, সাপে কাটা, বাদলা রোগ, রিন্ডারপেস্ট, এনথ্রাক্স ইত্যাদি থেকে গলাফোলা রোগকে আলাদা করতে হবে। সেরোলজিক্যাল টেস্ট যেমন Indirect hemagglutination test এ উচ্চ টাইটার লেভেল (১:১৬০ বা তার বেশি) পাওয়া গেলে এ রোগ সমন্ধে নিশ্চিত হওয়া যায়।
চিকিৎসা
আক্রান্ত পশুর চিকিৎসায় বিলম্ব হলে সুফল পাওয়া যাবে না। তাই রোগের উপসর্গ দেখা দেয়ার সাথে সাথে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এ রোগের চিকিৎসায় সালফোনামাইড গ্রুপ যেমন সালফাডিমিডিন (৫০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১৫-৩০ মিলি হিসেবে প্রত্যহ একবার করে তিনদিন শিরা বা ত্বকের নিচে), ট্রাইমিথোপ্রিম-সালফামেথাক্সাসোল কম্বিনেশন (৪৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৩-৫ মিলি), অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, পেনিসিলিন ও ক্লোরামফেনিকল জাতীয় ঔষধ অধিক কার্যকর।

Ampicillin, Tetracycline, Erythromycin, Sulphonamide জাতীয় ইনজেকশন গভীর মাংসে দিয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়। Sulphadimidin ঔষধ শীরায় প্রয়োগ করে দ্রুত ফল পাওয়া যায়। আমাদের দেশে এ চিকিত্সাটা বেশি ব্যবহূত হয়। Oxytetracycline/Streptophen ইনজেকশন গভীর মাংসে প্রয়োগ করে কার্যকরী ফল পাওয়া যায়। টিকার ব্যবহার মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি: বাংলাদেশের মহাখালীর খজও -এ টিকা পাওয়া যায়- ১. অয়েল এ্যাডজুভেন্ট টিকা: গরু/মহিষ- ২ মি.লি চামড়ার নিচে দিতে হয়। ছাগল/ভেড়া- ১ মি.লি চামড়ার নিচে দিতে হয়। (অয়েল এ্যাডজুভেন্ট টিকা ঘন হওয়ায় মোটা বোরের নিডল ব্যবহার করতে হবে)।
প্রতিরোধ 
ভ্যাকসিনই এ রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে ভাল উপায়। মূলত তিন ধরনের ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলো হল প্লেইন ব্যাকটেরিন, এলাম অধ:পাতিত ব্যাকটেরিন এবং অয়েল এডজুভেন্ট ব্যাকটেরিন। এর মধ্যে ৬ মাস বিরতিতে এলাম অধ:পাতিত ব্যাকটেরিন এবং ৯ থেকে ১২ মাস অন্তর অয়েল এডজুভেন্ট ভ্যাকসিন দিতে হয়। ভালো ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত খামারে বাছুরকে ৩ থেকে ৬ মাস বয়সে প্রথম, ৩ মাস পরে বুস্টার এবং এরপর বছরে একবার টিকা দিতে হয়। উন্মুক্ত খামারে বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই বাৎসরিক টিকার কোর্স শুরু করতে হয়।


লেখক: ডাঃ এ, এইচ. এম. সাইদুল হক
এক্সিকিউটিভ, ভেটেরিনারী সার্ভিসেস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল
তথ্যসূত্র: পোলট্রি, পশুসম্পদ ও মৎস্য বিষয়ক মাসিক পত্রিকা ‘খামার’

আরো পড়ুন>

হাইব্রিড টার্কি মুরগীর দাম এতো বেশি কেন ? Why hybrid turkey chicken prices so much?

হাইব্রিড টার্কি মুরগি পর্ব
বলেছিলাম হাইব্রিড টার্কি মুরগি নিয়ে লিখবো!! (আমি হাইব্রিড মুরগী বিরোধি নয়)
কিন্তু তার আগে একটা গল্প না বললেই নয়ঃ

হাইব্রিড টার্কি মুরগি  


এলাকার বাঁজারে আমাদের দোকানের সামনে এক শ্যাকের ছেলে (আঞ্চলিক ভাষা) পাকা তাল বিক্রি করতেছে। এক সাধু তাল কিনতে চাইলেন কিন্তু সর্থ একটাই তাল মিষ্টি হবে কি না??
শ্যাকের ছেলের উত্তরটা এমনঃ তাল ভালো করে গোলাইয়া মিডা (গুড়) আর বেশি কইররা দুধ দিবেন হেইয়ার পর ঘন কইরা ২/৩ দিন জালাইবেন। হ্যার পর যদি খারাপ লাগে হেলে বোঝবেন আপনার গায়ে জর আছে।
হাইব্রিডের আবির্ভাব নিয়ে লেখা বাড়াতে চাচ্ছি না,
১. পৃথিবীতে হাইব্রিডের সৃষ্টিই ব্যাপক চাহিদা মিটানোর জন্য। মোদ্দা কথা হচ্ছে দ্রুত বর্ধনশিল, কম মজাদার এবং দামটা হবে হাতের নাগালে।
২. যদি সেটাই হয় তাহলে প্রশ্ন আসতেই পারে হাইব্রিড টার্কির দাম এতো বেশি ক্যান??
সুবিধা বাদিদের থেকে যে উত্তরটা আসবে সেটাও বলে দিচ্ছি, তারা বলবেন এখনো প্রডাকশন কম চাহিদা বেশি তাই দাম বেশি।
৩. মেনে নিলাম আপনার কথা, হাইব্রিডের নিয়ম হচ্ছে আমি বাচ্চা কিনে বড় করে মাংস আকারে বিক্রি করব।
আমি কারো থেকে ১০০ বাচ্চা কিনে বড় করে বিক্রি করে যদি মাংস আকারে বিক্রি করতে যাই তাহলে বর্তমান ক্রয় দর, খাবার ও ঔষধ মিলিয়ে আমার ব্যাবসা কোথায় দ্বারাবে?
৪. আমার ৩ নং প্রশ্নের উত্তরে উত্তর আসবে এখনো মাংস আকারে বিক্রি করে লস হবে আগে নিজে প্রোডাকশন করেন।
৫. আপনার কথা মেনে নিয়ে আমি প্রোডাকশন শুরু করে দিলাম, আমার প্রোডাকশন শুরু হতে সময় লাগবে ৭/৮ মাস সেই বাচ্চা মিট আকারে বাঁজারে পাঠাতে আমার সময় লাগবে আরো ৪/৫ মাস। এবার বলুন তখন (মোট ১ বছর পরে) আমার বয়লার টার্কির মাংসের দাম প্রতি কেজি কত এসে দ্বারাবে??
৬. আপনারা ৫নং এর উত্তরে বলবেনঃ ৩০০ করে হলেও আপনার ২০ কেজির একটা টার্কির দাম আসবে ৬০০০ টাকা। কিন্তু ভাই এখনই অনেক যায়গা থেকে আমরা লোকাল টার্কি ২৫০-৩০০ মধ্যে কিনতেছি। তাহলে আমার বয়লার কে কিনবে ৩০০ করে?
আর যদি ৩০০ টাকাই দাম হিসাব করে থাকেন তাহলে এক পেয়ার রানিং হাইব্রিডের দাম কিভাবে ২৫০০০ টাকা চাচ্ছেন?
৭. উত্তর আসবে ততোদিনে চাহিদা বাড়বে তাই দাম কমবে না, কিন্তু একটা ২০ কেজির টার্কির ক্রেতা এই দেশে কতজন আছে?
৮. আপনি হয়তো ৮ নং প্রশ্নের উত্তর দিবেন মানুষ টার্কির মজা পেয়ে গেলে ক্রেতা বেড়ে যানে। কিন্তু আপনি কি হাইব্রিড টার্কির স্বাধ কখনো চেখে দেখেছেন? ৯৯% হাইব্রিড খামারিই বলবেন এখনো আমি হাইব্রিড খাইনি (আমি খেয়ে বলছি এর চাইতে পাঠার মাংস উত্তম)।
৯. আপনারা ১/২ মাসের ১ জোড়া হাইব্রিড টার্কির বাচ্চার যে দাম চাচ্ছেন তাতে আমি হিসাব করে দেখেছি ২টা ছাগলের বাচ্চা কিনা যায়। এবং ২/৪ টা ছাগল পালতে তেমন কোন নগদ অর্থের দরকার হয় না, কারোন কথায় বলে ছাগলে না খায় কি।
১০. আপনারা ৯ নং এর উত্তরে বলবেন তাহলে ছাগল কিনেন, টার্কি পালার দরকার নাই।
ভাই এটা তো কোন ফেন্সি আইটেম না! ছাগল তো কেউ দুধ খাওয়ার জন্য পালে না। ছগল যেমন মাংসের আইটেম টার্কিও তেমন মাংসের আইটেম তাহলে দাম এতো বেশি হবে ক্যান?
তাহলে কি বলতে পারি আপনারা এক মাসের প্রডাকশন দিয়ে আপনার পুরা ইনভাইস্ট তুলে নিতে চাচ্ছেন??
হাইব্রিড টার্কি মুরগি পর্ব
বলেছিলাম হাইব্রিড টার্কি মুরগি নিয়ে লিখবো!! (আমি হাইব্রিড মুরগী বিরোধি নয়)
কিন্তু তার আগে একটা গল্প না বললেই নয়ঃ

হাইব্রিড টার্কি মুরগি  


এলাকার বাঁজারে আমাদের দোকানের সামনে এক শ্যাকের ছেলে (আঞ্চলিক ভাষা) পাকা তাল বিক্রি করতেছে। এক সাধু তাল কিনতে চাইলেন কিন্তু সর্থ একটাই তাল মিষ্টি হবে কি না??
শ্যাকের ছেলের উত্তরটা এমনঃ তাল ভালো করে গোলাইয়া মিডা (গুড়) আর বেশি কইররা দুধ দিবেন হেইয়ার পর ঘন কইরা ২/৩ দিন জালাইবেন। হ্যার পর যদি খারাপ লাগে হেলে বোঝবেন আপনার গায়ে জর আছে।
হাইব্রিডের আবির্ভাব নিয়ে লেখা বাড়াতে চাচ্ছি না,
১. পৃথিবীতে হাইব্রিডের সৃষ্টিই ব্যাপক চাহিদা মিটানোর জন্য। মোদ্দা কথা হচ্ছে দ্রুত বর্ধনশিল, কম মজাদার এবং দামটা হবে হাতের নাগালে।
২. যদি সেটাই হয় তাহলে প্রশ্ন আসতেই পারে হাইব্রিড টার্কির দাম এতো বেশি ক্যান??
সুবিধা বাদিদের থেকে যে উত্তরটা আসবে সেটাও বলে দিচ্ছি, তারা বলবেন এখনো প্রডাকশন কম চাহিদা বেশি তাই দাম বেশি।
৩. মেনে নিলাম আপনার কথা, হাইব্রিডের নিয়ম হচ্ছে আমি বাচ্চা কিনে বড় করে মাংস আকারে বিক্রি করব।
আমি কারো থেকে ১০০ বাচ্চা কিনে বড় করে বিক্রি করে যদি মাংস আকারে বিক্রি করতে যাই তাহলে বর্তমান ক্রয় দর, খাবার ও ঔষধ মিলিয়ে আমার ব্যাবসা কোথায় দ্বারাবে?
৪. আমার ৩ নং প্রশ্নের উত্তরে উত্তর আসবে এখনো মাংস আকারে বিক্রি করে লস হবে আগে নিজে প্রোডাকশন করেন।
৫. আপনার কথা মেনে নিয়ে আমি প্রোডাকশন শুরু করে দিলাম, আমার প্রোডাকশন শুরু হতে সময় লাগবে ৭/৮ মাস সেই বাচ্চা মিট আকারে বাঁজারে পাঠাতে আমার সময় লাগবে আরো ৪/৫ মাস। এবার বলুন তখন (মোট ১ বছর পরে) আমার বয়লার টার্কির মাংসের দাম প্রতি কেজি কত এসে দ্বারাবে??
৬. আপনারা ৫নং এর উত্তরে বলবেনঃ ৩০০ করে হলেও আপনার ২০ কেজির একটা টার্কির দাম আসবে ৬০০০ টাকা। কিন্তু ভাই এখনই অনেক যায়গা থেকে আমরা লোকাল টার্কি ২৫০-৩০০ মধ্যে কিনতেছি। তাহলে আমার বয়লার কে কিনবে ৩০০ করে?
আর যদি ৩০০ টাকাই দাম হিসাব করে থাকেন তাহলে এক পেয়ার রানিং হাইব্রিডের দাম কিভাবে ২৫০০০ টাকা চাচ্ছেন?
৭. উত্তর আসবে ততোদিনে চাহিদা বাড়বে তাই দাম কমবে না, কিন্তু একটা ২০ কেজির টার্কির ক্রেতা এই দেশে কতজন আছে?
৮. আপনি হয়তো ৮ নং প্রশ্নের উত্তর দিবেন মানুষ টার্কির মজা পেয়ে গেলে ক্রেতা বেড়ে যানে। কিন্তু আপনি কি হাইব্রিড টার্কির স্বাধ কখনো চেখে দেখেছেন? ৯৯% হাইব্রিড খামারিই বলবেন এখনো আমি হাইব্রিড খাইনি (আমি খেয়ে বলছি এর চাইতে পাঠার মাংস উত্তম)।
৯. আপনারা ১/২ মাসের ১ জোড়া হাইব্রিড টার্কির বাচ্চার যে দাম চাচ্ছেন তাতে আমি হিসাব করে দেখেছি ২টা ছাগলের বাচ্চা কিনা যায়। এবং ২/৪ টা ছাগল পালতে তেমন কোন নগদ অর্থের দরকার হয় না, কারোন কথায় বলে ছাগলে না খায় কি।
১০. আপনারা ৯ নং এর উত্তরে বলবেন তাহলে ছাগল কিনেন, টার্কি পালার দরকার নাই।
ভাই এটা তো কোন ফেন্সি আইটেম না! ছাগল তো কেউ দুধ খাওয়ার জন্য পালে না। ছগল যেমন মাংসের আইটেম টার্কিও তেমন মাংসের আইটেম তাহলে দাম এতো বেশি হবে ক্যান?
তাহলে কি বলতে পারি আপনারা এক মাসের প্রডাকশন দিয়ে আপনার পুরা ইনভাইস্ট তুলে নিতে চাচ্ছেন??
আরো পড়ুন>

ইনকিউবেটরে টার্কির ডিম ফুটানোঃ তুষ ও বালি পদ্ধতি (পর্ব-০১) | Incubator turkey eggs Chisel and sand method

কোনো পাখি ডিম পাড়ার পর ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য সেই ডিমে তা দেয় পাখিটি, নিদৃষ্ট দিন পর্যন্ত ডিমে তাপ দিলে সেই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয়। পাখি বা মুরগী যে ভাবে ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটায় সেই নিয়ম গুলো সাঠিক রেখে কৃত্রিম অবাহাওয়া তৈরি করে লক্ষ লক্ষ ডিম এক সাথে নিদৃষ্ট দিনে ফুটানো যায়।

ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর মূল কাজ গুলো হচ্ছেঃ
(১) ডিমে সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখা।
(২) ডিমের বাহিরের আবহাওয়াতে সঠিক পরিমান আদ্রতা বজায় রাখা।
(৩) ডিম গুলো নিদৃষ্ট সময় পর পর সঠিক ভাবে ঘুরিয়ে দেয়া,এবং নিদৃষ্ট দিন পরে ডিম স্থির রাখা।
উক্ত তিনটি পন্থাই হচ্ছে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর মূল পন্থা। তাহলে এখন ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে ঐ কাজ গুলো যদি কোনো কৌশল দ্বারা সহজ করা যায় তবে ডিম ফুটাননোর সেই কৌশলকে ডিম ফুটানোর পদ্ধতীও বলা যাবে।”
প্রথমে আমরা তুষ হারিকেন পদ্ধতী নিয়ে আলোচনা করবোঃ
তুষ পদ্ধতী নিয়ে ভাবতে গেলে প্রথমে ভাবতে হবে ডিম ফুটানোর ক্ষেত্রে তুষের ভুমিকা টা আসলে কি.!
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখতে গেলে তুষ হচ্ছে শক্তিশালী তাপ কুপরিবাহী একটি পদার্থ, এখন আমরা জানি ডিম ফুটাতে একটি কক্ষে নিদৃষ্ট তাপমাত্রা বাজায় রাখতে হবে, আর তাপের মাত্রাকে ধরে রাখতে হলে তাপকে আটকে রাখতে হবে।
আর তাপমাত্রাকে একটি বেশি সময় আটকে রাখতে হলে তাপ পরিবাহীত হতে পারেনা এমন পদার্থের দেয়াল তৈরি করতে হবে, সেই সূত্রে তুষ হচ্ছে তাপ রোধক বা তাপ কুপরিবাহী একটি পদার্থ, তাই ডিম রাখার ছোট্ট কক্ষের চারপাশে তুষের পুরু আস্তরন দিয়ে রেখে তাপমাত্রা দির্ঘক্ষণ বজায় রাখা যায়। এইটাই হচ্ছে ডিম ফুটানোর ক্ষেত্রে তুষের ভুমিকা।
একটা বা একাধিক কক্ষে কিছু ডিম কে পুটলি বেঁধে রাখা হয়, ডিম রাখার কক্ষের চারপাশে পুরুকরে তুষের স্তর দেয়া হয় তাপ আটকে রাখার জন্য। তার পাশে একই রকম একটি কক্ষে একটি হারিকেন রাখা হয়, হারিকেনের আগুন থেকে উৎপন্ন উত্তাপ্ত কার্বনডাইঅক্সাইড তাপকে ছাড়িয়ে দেয় ঐ কক্ষের বাতাসে সেখান থেকে ছোট ছিদ্রর চুঙ্গা দিয়ে পাশে ডিম রাখার কক্ষ গুলোত তাপ সঞ্চার হতে থাকে। ২/৩ঘন্টা পর পর ডিমের পুটলি গুলোকে উল্টিয়ে দিতে হয়, এবং মাঝে মাঝে ডিম ভিজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে। তাপমাত্রা যদি খুব বেশি হয়ে যায় তবে ডিম গুলোতে বাতাস দিয়ে ডিমকে ঠান্ডা করতে হয়। হেচিং এর আগে পর্যন্ত বা ১৪ দিন এই ভাবে ডিম গুলোকে পুটলি বেঁধে তাপ দিতে হয়, হেচিংএর সময় একটা ঘরে সঠিক তাপমাত্রা রেখে, বাঁশ বা কাঠ দিয়ে বানানো একটা ট্রে তে ডিম গুলো ছড়িয়ে দিয়ে তাপ দিতে হয়,এবং মাঝে মাঝে ডিম গুলোকে ভিজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হয় অথবা ডিমের ট্রের মাঝে মাঝে পানির পাত্র রাখা হয়। এখন আমরা জানলাম হারিকেন তাপ তৈরি করে, হারিকেনের তেল খরচ যাতে কম হয় অল্প জ্বালানীতে যাতে অনেক বেশি ডিম ফুটানো যায় সেই জন্য তাপমাত্রা আটকে রাখাতে তুষ ব্যবহার করা হয় এই হলো তুষের ভুমিকা। এরপরে ডিমের পুটলি উলট পালট করার মাধ্যমে ডিম ঘুরানো হয়। ভিজা কাপড় দিয়ে ডিম মুছা অথবা ডিমের পাশে পানির বাটি রাখা হয় আদ্রতা তৈরির জন্য। তুষ পদ্ধতীকে আমরা দির্ঘ সময় তাপ আটকানোর পদ্ধতীও বলতে পারি।
এবার বালি হারিকেন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবোঃ
এবারও আমার জানবো বালি ডিম ফুটানোর ক্ষেত্রে কি ভুমিকা রাখতে পারে, ইনকিউবেটরের ভিতর বালি ব্যবহার করলে কোন কাজ গুলো সহজ হয়। বালি বা বালু মূলত হারিকেন চালিত ইনকিউবেটরে ব্যবহার হয়। বালি ও তাপমত্রাকে আটকে রাখতে পারে, বালি তাপমাত্রাকে ধিরে ধিরে সমানভাবে ছড়াতে পারে। আমরা জানি হারিকেন চালিত ইনকিউবেটরে হারিকেনের মাথার উপরে তাপ অনেক বেশি থাকে, কিন্তু সব ডিমে তাপমাত্রা সমান থাকলেই সব ডিম গুলো ফুটবে, হারিকেন চালিত ইনকিউবেটর সার্কুলেশন ফ্যান ব্যবাহার করলেও সমস্যা হয়, তাই তাপমাত্রাকে সমানভাবে ছড়িয়ে দিয়ে তাপমাত্রাকে ধিরে ধিরে উপরে ওঠার জন্য হারিকেনের মাথার উপর ধতব পাত দিয়ে তার উপর বালি ছড়িয়ে দিতে হয় বালি তাপমাত্রাকে এবং কার্বোড্রাইঅক্সাইডকে সরাসরি উপরে উঠতে দেয়না। বালি হারিকেনের তাপকে ধিরে ধিরে সমান ভাবে ছড়িয়ে দেয়। এছাড়াও বালি আদ্রতা শোষনের জন্য ব্যবহার করা হয় ইনকিউবেটরে। হারিকেনের পাশে বা ডিমের ট্রের মাঝে বাটিতে করে বালি রেখে দিলে আদ্রতা কিছুটা শোষিত হয়। তাহলে বুঝাগেলো বালি দ্বারা হারিকেনের তাপ ইনকিউবেটরে ভিতর ছাড়ানো এবং আদ্রতা শোষনের জন্য যে ভাবে বালি ব্যবহার করাহয় তাকে বালি পদ্ধতী বলে।
আমরা বুঝলাম যে ভাবেই ডিম ফুটানো হোকনাকেনো সঠিক তাপমাত্রা সঠিক আদ্রতা সঠিক সময় ডিম ঘুরানো এবং সঠিক সময়ে ডিম স্থীর রাখা, এই মুল নিয়ম গুলো একই থাকে। সেই নিয়ম গুলোকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে অনেক পদ্ধতীতে রুপান্তরিত হয়েছে। প্রোল্ট্রি শিল্পে এতবড় প্রয়োজনীয় একটা মেশিনকে এমন ভাবে বিভিন্ন পদ্ধতীর মাধ্যমে যারা রহস্যময় করে রেখেছে তাদের একটু হলেও বোঝা উচিৎ সকল খামারীর অন্তরে ছোট্ট একটা স্বপ্ন থাকে নিজের খামারের ডিম গুলো নিজের মেশিনে ফুটাবে, সেই ছোট খামারী ভাইদের মনের সেই স্বপ্ন গুলো কোনো আমরা রহস্যের জালে জড়িয়ে রেখেছি! ছোট খামারী ভাইদের কাছে রহস্য ছাড়া ইনকিউবেটর বানানো শিখিয়ে দেয়া আমাদের সকলের দ্বায়িত্ব।
কোনো পাখি ডিম পাড়ার পর ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য সেই ডিমে তা দেয় পাখিটি, নিদৃষ্ট দিন পর্যন্ত ডিমে তাপ দিলে সেই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয়। পাখি বা মুরগী যে ভাবে ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটায় সেই নিয়ম গুলো সাঠিক রেখে কৃত্রিম অবাহাওয়া তৈরি করে লক্ষ লক্ষ ডিম এক সাথে নিদৃষ্ট দিনে ফুটানো যায়।

ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর মূল কাজ গুলো হচ্ছেঃ
(১) ডিমে সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখা।
(২) ডিমের বাহিরের আবহাওয়াতে সঠিক পরিমান আদ্রতা বজায় রাখা।
(৩) ডিম গুলো নিদৃষ্ট সময় পর পর সঠিক ভাবে ঘুরিয়ে দেয়া,এবং নিদৃষ্ট দিন পরে ডিম স্থির রাখা।
উক্ত তিনটি পন্থাই হচ্ছে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর মূল পন্থা। তাহলে এখন ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে ঐ কাজ গুলো যদি কোনো কৌশল দ্বারা সহজ করা যায় তবে ডিম ফুটাননোর সেই কৌশলকে ডিম ফুটানোর পদ্ধতীও বলা যাবে।”
প্রথমে আমরা তুষ হারিকেন পদ্ধতী নিয়ে আলোচনা করবোঃ
তুষ পদ্ধতী নিয়ে ভাবতে গেলে প্রথমে ভাবতে হবে ডিম ফুটানোর ক্ষেত্রে তুষের ভুমিকা টা আসলে কি.!
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখতে গেলে তুষ হচ্ছে শক্তিশালী তাপ কুপরিবাহী একটি পদার্থ, এখন আমরা জানি ডিম ফুটাতে একটি কক্ষে নিদৃষ্ট তাপমাত্রা বাজায় রাখতে হবে, আর তাপের মাত্রাকে ধরে রাখতে হলে তাপকে আটকে রাখতে হবে।
আর তাপমাত্রাকে একটি বেশি সময় আটকে রাখতে হলে তাপ পরিবাহীত হতে পারেনা এমন পদার্থের দেয়াল তৈরি করতে হবে, সেই সূত্রে তুষ হচ্ছে তাপ রোধক বা তাপ কুপরিবাহী একটি পদার্থ, তাই ডিম রাখার ছোট্ট কক্ষের চারপাশে তুষের পুরু আস্তরন দিয়ে রেখে তাপমাত্রা দির্ঘক্ষণ বজায় রাখা যায়। এইটাই হচ্ছে ডিম ফুটানোর ক্ষেত্রে তুষের ভুমিকা।
একটা বা একাধিক কক্ষে কিছু ডিম কে পুটলি বেঁধে রাখা হয়, ডিম রাখার কক্ষের চারপাশে পুরুকরে তুষের স্তর দেয়া হয় তাপ আটকে রাখার জন্য। তার পাশে একই রকম একটি কক্ষে একটি হারিকেন রাখা হয়, হারিকেনের আগুন থেকে উৎপন্ন উত্তাপ্ত কার্বনডাইঅক্সাইড তাপকে ছাড়িয়ে দেয় ঐ কক্ষের বাতাসে সেখান থেকে ছোট ছিদ্রর চুঙ্গা দিয়ে পাশে ডিম রাখার কক্ষ গুলোত তাপ সঞ্চার হতে থাকে। ২/৩ঘন্টা পর পর ডিমের পুটলি গুলোকে উল্টিয়ে দিতে হয়, এবং মাঝে মাঝে ডিম ভিজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে। তাপমাত্রা যদি খুব বেশি হয়ে যায় তবে ডিম গুলোতে বাতাস দিয়ে ডিমকে ঠান্ডা করতে হয়। হেচিং এর আগে পর্যন্ত বা ১৪ দিন এই ভাবে ডিম গুলোকে পুটলি বেঁধে তাপ দিতে হয়, হেচিংএর সময় একটা ঘরে সঠিক তাপমাত্রা রেখে, বাঁশ বা কাঠ দিয়ে বানানো একটা ট্রে তে ডিম গুলো ছড়িয়ে দিয়ে তাপ দিতে হয়,এবং মাঝে মাঝে ডিম গুলোকে ভিজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হয় অথবা ডিমের ট্রের মাঝে মাঝে পানির পাত্র রাখা হয়। এখন আমরা জানলাম হারিকেন তাপ তৈরি করে, হারিকেনের তেল খরচ যাতে কম হয় অল্প জ্বালানীতে যাতে অনেক বেশি ডিম ফুটানো যায় সেই জন্য তাপমাত্রা আটকে রাখাতে তুষ ব্যবহার করা হয় এই হলো তুষের ভুমিকা। এরপরে ডিমের পুটলি উলট পালট করার মাধ্যমে ডিম ঘুরানো হয়। ভিজা কাপড় দিয়ে ডিম মুছা অথবা ডিমের পাশে পানির বাটি রাখা হয় আদ্রতা তৈরির জন্য। তুষ পদ্ধতীকে আমরা দির্ঘ সময় তাপ আটকানোর পদ্ধতীও বলতে পারি।
এবার বালি হারিকেন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবোঃ
এবারও আমার জানবো বালি ডিম ফুটানোর ক্ষেত্রে কি ভুমিকা রাখতে পারে, ইনকিউবেটরের ভিতর বালি ব্যবহার করলে কোন কাজ গুলো সহজ হয়। বালি বা বালু মূলত হারিকেন চালিত ইনকিউবেটরে ব্যবহার হয়। বালি ও তাপমত্রাকে আটকে রাখতে পারে, বালি তাপমাত্রাকে ধিরে ধিরে সমানভাবে ছড়াতে পারে। আমরা জানি হারিকেন চালিত ইনকিউবেটরে হারিকেনের মাথার উপরে তাপ অনেক বেশি থাকে, কিন্তু সব ডিমে তাপমাত্রা সমান থাকলেই সব ডিম গুলো ফুটবে, হারিকেন চালিত ইনকিউবেটর সার্কুলেশন ফ্যান ব্যবাহার করলেও সমস্যা হয়, তাই তাপমাত্রাকে সমানভাবে ছড়িয়ে দিয়ে তাপমাত্রাকে ধিরে ধিরে উপরে ওঠার জন্য হারিকেনের মাথার উপর ধতব পাত দিয়ে তার উপর বালি ছড়িয়ে দিতে হয় বালি তাপমাত্রাকে এবং কার্বোড্রাইঅক্সাইডকে সরাসরি উপরে উঠতে দেয়না। বালি হারিকেনের তাপকে ধিরে ধিরে সমান ভাবে ছড়িয়ে দেয়। এছাড়াও বালি আদ্রতা শোষনের জন্য ব্যবহার করা হয় ইনকিউবেটরে। হারিকেনের পাশে বা ডিমের ট্রের মাঝে বাটিতে করে বালি রেখে দিলে আদ্রতা কিছুটা শোষিত হয়। তাহলে বুঝাগেলো বালি দ্বারা হারিকেনের তাপ ইনকিউবেটরে ভিতর ছাড়ানো এবং আদ্রতা শোষনের জন্য যে ভাবে বালি ব্যবহার করাহয় তাকে বালি পদ্ধতী বলে।
আমরা বুঝলাম যে ভাবেই ডিম ফুটানো হোকনাকেনো সঠিক তাপমাত্রা সঠিক আদ্রতা সঠিক সময় ডিম ঘুরানো এবং সঠিক সময়ে ডিম স্থীর রাখা, এই মুল নিয়ম গুলো একই থাকে। সেই নিয়ম গুলোকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে অনেক পদ্ধতীতে রুপান্তরিত হয়েছে। প্রোল্ট্রি শিল্পে এতবড় প্রয়োজনীয় একটা মেশিনকে এমন ভাবে বিভিন্ন পদ্ধতীর মাধ্যমে যারা রহস্যময় করে রেখেছে তাদের একটু হলেও বোঝা উচিৎ সকল খামারীর অন্তরে ছোট্ট একটা স্বপ্ন থাকে নিজের খামারের ডিম গুলো নিজের মেশিনে ফুটাবে, সেই ছোট খামারী ভাইদের মনের সেই স্বপ্ন গুলো কোনো আমরা রহস্যের জালে জড়িয়ে রেখেছি! ছোট খামারী ভাইদের কাছে রহস্য ছাড়া ইনকিউবেটর বানানো শিখিয়ে দেয়া আমাদের সকলের দ্বায়িত্ব।
আরো পড়ুন>

ইনকিউবেটরে টার্কির ডিম ফুটানোঃ আদ্রতা নিয়ন্ত্রন (পর্ব-০২) | Turkey egg boiling humidity control in incubator

সবকিছু ঠিক থাকা শর্তেও ইনকিউবেটরে ১০০% বাচ্চা না ফোটার মুল কারন হচ্ছে আদ্রতা সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রন করতে না পারা, এখন কার ইনকিউবেটর গুলিতে অটোমেটিক আদ্রতা নিয়ন্ত্রনের কোনো সিষ্টেম থাকেনা বললেই চলে। এই আদ্রতা আসলে কিভাবে সহজে কম খরচে নিয়ন্ত্রণ করাযায় সেটাই আজ জানবো আমরা। বাতসে জলিয় বাস্পের উপস্থিতিকে আদ্রতা বলাহয়, ইনকিউবেটরের ভেতরে যখন বাতাস আদ্র হয় তখন সেই বাতাসে পানির অনুগুলি ডিমের সংস্পর্শে এসে ডিমের খোসায় ক্যলসিয়াম কার্বোনেট তৈরি করে যার ফলে সেই ডিমের ভেতরে থাকা ভ্রুনে অক্সিজেন গ্রহনের পথ বন্ধ হয়ে যায় এবং ভ্রুন মারা যায়, আর বাতাসে আদ্রতা কম থাকলে ডিম উত্তাপের ফলে ডিমের খোসা ভঙ্গুর হয় এবং ডিমের ভিতরে বাচ্চা দুর্বল হয়ে মারা যায়। তাই এই আদ্রতাকে সব সময় স্বভাবিক রাখতে হয়, কিন্তু সেটা জন্য তেমন কোনো অধুনিক প্রযুক্তি আমাদের হাতের নাগালে নেই, আর আদ্রতা নিয়ন্ত্রন মেশিন গুলো মুলত অনেক বেশি পরিমানে বিদ্যুৎ খরচ করে।

বৃষ্টির সময় বাতাস আদ্র থাকে কারন বাতাসের অনুর সাথে পানির অনুর স্পর্স হয়, এটাকে কৃতীম উপায়ে এবং পম্প ছাড়া করার জন্য, ছোট্ট একটা পাত্রেমধ্যে পানি দিবেন, একটা ৬ ভোল্টেজ হাইস্পিড মোটর সেখানে সেট করবেন, মোটরে ছেট একটা পাখা এমন ভাবে লাগাবে যাতে পাখার অর্ধেক পানির ভিতর এবং অর্ধেক পানির উপরে থাকে, এখন পাত্র টা বন্ধ করে মোটর অন করুন, দেখবেন পানি ভিষণ জোরে ছিটছে, অর্থাৎ পানির অনুএবং বাতাশের অনু মিশ্রিত হয়ে বাতাসকে আদ্র করছে, এখন সেই বাতাসকে একটা ফ্যন দিয়ে ইনকিউবেটরেরর ভেতরে ছড়িয়ে দিন দেখবেন আদ্রতা বাড়ছে ঐ মোটর আর ফ্যন কন্ট্রোলারের সাথে যুক্ত করুন, দেখবেন আদ্রতা স্বভাবিক হলে কন্ট্রলার মোটর এবং ফ্যনকে অফ করবে, এবং আদ্রতা কমেগেলে নিজে থেকেই ফ্যন চালু হবে। এখন দ্বিতীয় অংশ কন্ট্রোল করার উপায় বলবো, ধরুন ইনকিউবেটরের ভেতরে এবং বাহিরে আদ্রতা খুব বেশি তখন আদ্রতা কমাবেন কেমন করে! আমরা জানি বালি অথবা ক্যলসিয়াম কার্বনেট অধিক পরিমানে আদ্রতা শোষণ কারি পদার্থ, ক্যলসিমাম কার্বোনেট মুলত “চুন”, এখন বাজার থেকে একটা বড় পাথর চুনের টুকরো কিনবেন, সাবধানে সেটার মধ্যে বেশ কিছু ফুটো করুন এখন সেই চুন কে একটা পাত্রে রাখলেন এবার সেই পাত্রের মুখে একটা ফ্যন লাগান, এখন ইনকিউবেটরের ভেতরের বাতাস গুলো পাথর চুনের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত করো আবার ইনকিবেটরের ভেতরে পাঠান দেখবেন আদ্রতা কমতে শুরু করেছে এভাবে কিছু ক্ষণ চালু রাখুন দেখবেন আদ্রতাকমে এসেছে, পাথর চুনের পাত্রটির মুখের ফ্যনটি কন্ট্রোলারের সাথে যুক্ত করুন দেখবেন আদ্রতা স্বাভাবিক হলে ফ্যনটি বন্ধ হবে, আদ্রতা বেশি হলে ফ্যনটি আবার চালু হবে। কিছদিন পরপর পাথর চুনের টুকরো টা রোদে শুকিয়ে নিন, দেখবেন অনেক ভালো কাজ করছে।
ইনকিবেটরে আদ্রতা কন্ট্রোল করার ব্যপারে নতুন কিছু জানবো , আদ্রতাকে নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য সবার আগে আমাদের জানতে হবে আদ্রতার জন্ম হয় কোথায়, আর আদ্রতা শেষ হয় কোথায়। প্রথমে জানবো বাতাস আদ্র হয় কেনো, বিজ্ঞানের সুত্র অনুযায়ী বাতাস যত উত্তাপ্ত হবে বাতাসে পানি শোষণ করার ক্ষমতা তত বাড়বে, আবার বাতাস যত শিতল হবে বাতাস থেকে তত পানির অনু বের হয়ে আসবে, বাতাস থেকে আদ্রতা বের করার একটা ছোট পরিক্ষা করা যাক, দুপুরে যখন আবহাওয়া একটু গরম হয় তখন ফ্রিজ থেকে কয়েক টুকরো বরফ বের করুন এবং একটি শুকনো কাচের পাত্রে বরফ গুলি রাখুন, এবার পাত্রের মুখটা বন্ধ করুন, কিছুক্ষণ পরে দেখুন সেই পাত্রের বাহির পিষ্টে পানির বুদ বুদ জমেছে, এবার ভবুন তো পানি কোথায় থেকে এলো, তবে কি কাঁচ ভেত করে পানি বেরিয়ে এলো! না। আসলে পাত্রের গা অত্যান্ত ঠান্ডা হওয়াতে ঐ পাত্রের সংস্পর্শে যে সুমস্ত বাতাসের অনু এসেছে সেই বাতাস অদ্রতা বা পানির অনু ধরে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে, যার ফলে বাতাসে থাকা সেই পানিগুলি এখন কাঁচের প্রাত্রের গায়েই লেগে আছে, এখন বোঝা গেলো বাতাস থেকে তাড়াতারি আদ্রতা শোষণের সব চেয়ে কার্জকারী উপায় হলো বাতাস কে শীতল করা, আর অদ্রতা তৈরি হতে তিনটি বিষয় লাগে প্রথমত পানি দ্বিতীয়ত বাতাস এবং তৃতীয়ত তাপ, আপনি যদি তিনটি জিনিষ কোনো জায়গায় একটা নিদৃষ্ট পরিমান রাখতে পারেন তবে ঐ জায়গায় আদ্রতাও নিদৃষ্ট পরিমানই থাকবে, এই বিষয় টাই আমাদের ইনকিউবেটরের সাথে মিলিয়ে রাখতে হবে।
আর আদ্রতা ধংস করার সব চেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে প্রথমে বাতাসকে ঠান্ডা করে আদ্রতা ঝরিয়ে নিয়ে সমস্থ পানি সরিয়ে নিয়ে সেই বাতাসকে গরম করে ইনিউবেটরের ভেতর পাঠানো, কিন্তু আদ্রতা বাড়ানোর ক্ষেত্র ইনকিউবের ভেতরে কতটুকু জায়গা আছে, ইনকিউবেটরের বডিটা কতক্ষণে কতটুকু তাপ শোষণ করে, বাহিরে তাপমাত্রা কত সেগুলি জেনে একটা হিসেব করে ভেতরের পানির আয়তন বাড়িয়ে আদ্রতা স্বভাবিক রাখা সম্ভব।
ইনকিউবেটরে ইমার্জেনসি আদ্রতা তৈরির পদ্ধতী জানাবো, পদ্ধতীটা বেস মজার এবং হাস্যকর কিন্তু বিপদের সময় এটাই আপনার অনেক উপকার করবে, খুব বড় ইনকিউবেটরে কাজ নাও করতে পারে। শীতকালে বাতাসের আদ্রতা খুব কম থাকে, আজ সকালেও অনেক শীত পড়েছিলো আমারও ভিষণ করছিলো শীতের কারনে মাঝে মাঝে হা করে থেকে মুখ দিয়ে নিঃস্বাস নিচ্ছিলাম হঠাৎ খেয়াল করেদেখি মুখ দিয়ে ধোঁয়ার মত বাতাস বের হচ্ছে, এটা নিয়েই গবেষণা শুরু করেদিলাম, এই বাতাস অনেক আদ্র, এখন আপনার ইনকিউবেটরে আদ্রতা যদি খুবই কমে যায় এবং তা কোনো ভাবে বাড়াতে না পারেন, তবে নিজে মুখ দিয়ে ফু দিয়ে ইনকিউবেটরের ভেতরে বাতাস ঢুকিয়ে ইনকিউবেটরের ভেতরে তৎক্ষনাৎ আদ্রতা তৈরি করতে পারবেন, আমাদের ফুসফুসের ভেতরে যতটা বাতাস থাকে পুরোটা কর্বোনডাই অক্সাইড নয় এতে অনেটা আক্সিজেনও থাকে তাই এটা ডিমের ভিতরে ভ্রুনের কোনো ক্ষতি করবেনা।
বিশেষ কথাঃ ডিমের ভিতর থেকে ছোট্ট ভ্রুনকে বাচ্চায় রুপান্তরিত করার প্রধান ভুমিকা পালান করে নিদৃষ্ট তাপমাত্রা। একটা কক্ষে সব জায়গায় সঠিক ভাবে ডিম ফুটার জন্য নিদৃষ্ট তাপমাত্রা রেখে সেই কক্ষে কিছু উর্বর ডিম রাখলে ডিমের ভিতরে ভ্রুনের কোষ বিভাজোন হতে থাকে, তাপমাত্রা সঠিক রেখে ভ্রুনের সঠিক বৃদ্ধির জন্য ডিম গুলো নিদৃষ্ট সময় পর পর এদিক ওদিক উল্টে দিলে, নিদৃষ্ট দিনে সেই ভ্রুন বাচ্চায় পরিনিত হয়। কিন্তু ডিমের ভিতরে তরল পদার্থ সঠিক সময়ে সঠিক পরিমান না শুকালে ডিমের ভিতর বাচ্চা বড় হয়েও মৃত্যু বরণ করে, ডিমের ভিতরে তরল সঠিক সময়ে শুকানোর জন্য ডিমের বাহিরে ইনকিউবেটরের ভিতরের বাতাসে নিদৃষ্ট পরিমান আদ্রতা বজায় রাখতে হয়। তাপমাত্রা ভ্রুন বড় করে, ডিম ঘুরানো হয় ভ্রুনের সঠিক বৃদ্ধির জন্য এবং নিদৃষ্ট আদ্রতা ডিমের তরল শুকাতে সাহায্য করে। একটি বিষয় লক্ষণীয়, তাপমাত্রা ভ্রুন বড় করে সেই জন্য তাপমাত্রাকে প্রথম থেকেএকটা নিদৃষ্ট সময় পর্যন্ত শেষের সপ্তাহ অপেক্ষা একটু বেশি তাপমাত্রা রাখতে হয় যাতে ভ্রুনের বৃদ্ধিটা নিদৃষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। ডিম ঘুরানো হয় ভ্রুনের সঠিক বৃদ্ধির জন্য সেই কারনে প্রথম থেকে একটা নিদৃষ্ট সময় পর্যন্ত ডিম ঘুরানো হয় যাতে ঐ সময়ের মধ্যেই যে করনে ডিম ঘুরানো হয় সেটা সম্পূর্ণ হয়। আদ্রতা ডিমের তরল শুকাতে সাহায্য করে সেই জন্য প্রথম থেকে আদ্রতাকে একটা নিদৃষ্ট সময় পর্যন্ত শেষের সপ্তাহ অপেক্ষা কম আদ্রতা রাখা হয় যাতে ঐ সময়ের মধ্যে সঠিকভাবে ডিম শুকানোর কাজ সম্পূর্ন হয়। প্রথম থেকে সেই নিদৃষ্ট সময় হচ্ছে হেচিংএর আগে পর্যন্ত। তাহলে বোঝাগেলো হেচিংএর আগেই ডিমের ভিতরে বাচ্চার সঠিক বৃদ্ধি এবং সঠিক পরিমানে ডিমের তরল শুকানোর কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে, যাতে হেচিংএর সময় অনায়াসে বাচ্চা ফুটে বের হতে পারে। সেই জন্য ইনকিউবেটরে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর সময়কে দুইভাগে ভাগ করা হয় প্রথম ভাগে সাঠিক ভাবে ভ্রুনকে বাচ্চায় পরিনিত করা, দ্বিতীয় ভাগে সেই বাচ্চাকে সঠিকভাবে ডিম থেকে বের হরার ব্যবস্থা করা। ‘মূলত ইনকিউবেটর হচ্ছে ডিম দেবার প্রথম থেকে শুরু করে ডিম ফুটা পর্যন্ত সঠিক যত্ন নেয়া এবং ডিম ফুটার উপযোগী আবহাওয়া বজায় রাখার কক্ষ।
সবকিছু ঠিক থাকা শর্তেও ইনকিউবেটরে ১০০% বাচ্চা না ফোটার মুল কারন হচ্ছে আদ্রতা সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রন করতে না পারা, এখন কার ইনকিউবেটর গুলিতে অটোমেটিক আদ্রতা নিয়ন্ত্রনের কোনো সিষ্টেম থাকেনা বললেই চলে। এই আদ্রতা আসলে কিভাবে সহজে কম খরচে নিয়ন্ত্রণ করাযায় সেটাই আজ জানবো আমরা। বাতসে জলিয় বাস্পের উপস্থিতিকে আদ্রতা বলাহয়, ইনকিউবেটরের ভেতরে যখন বাতাস আদ্র হয় তখন সেই বাতাসে পানির অনুগুলি ডিমের সংস্পর্শে এসে ডিমের খোসায় ক্যলসিয়াম কার্বোনেট তৈরি করে যার ফলে সেই ডিমের ভেতরে থাকা ভ্রুনে অক্সিজেন গ্রহনের পথ বন্ধ হয়ে যায় এবং ভ্রুন মারা যায়, আর বাতাসে আদ্রতা কম থাকলে ডিম উত্তাপের ফলে ডিমের খোসা ভঙ্গুর হয় এবং ডিমের ভিতরে বাচ্চা দুর্বল হয়ে মারা যায়। তাই এই আদ্রতাকে সব সময় স্বভাবিক রাখতে হয়, কিন্তু সেটা জন্য তেমন কোনো অধুনিক প্রযুক্তি আমাদের হাতের নাগালে নেই, আর আদ্রতা নিয়ন্ত্রন মেশিন গুলো মুলত অনেক বেশি পরিমানে বিদ্যুৎ খরচ করে।

বৃষ্টির সময় বাতাস আদ্র থাকে কারন বাতাসের অনুর সাথে পানির অনুর স্পর্স হয়, এটাকে কৃতীম উপায়ে এবং পম্প ছাড়া করার জন্য, ছোট্ট একটা পাত্রেমধ্যে পানি দিবেন, একটা ৬ ভোল্টেজ হাইস্পিড মোটর সেখানে সেট করবেন, মোটরে ছেট একটা পাখা এমন ভাবে লাগাবে যাতে পাখার অর্ধেক পানির ভিতর এবং অর্ধেক পানির উপরে থাকে, এখন পাত্র টা বন্ধ করে মোটর অন করুন, দেখবেন পানি ভিষণ জোরে ছিটছে, অর্থাৎ পানির অনুএবং বাতাশের অনু মিশ্রিত হয়ে বাতাসকে আদ্র করছে, এখন সেই বাতাসকে একটা ফ্যন দিয়ে ইনকিউবেটরেরর ভেতরে ছড়িয়ে দিন দেখবেন আদ্রতা বাড়ছে ঐ মোটর আর ফ্যন কন্ট্রোলারের সাথে যুক্ত করুন, দেখবেন আদ্রতা স্বভাবিক হলে কন্ট্রলার মোটর এবং ফ্যনকে অফ করবে, এবং আদ্রতা কমেগেলে নিজে থেকেই ফ্যন চালু হবে। এখন দ্বিতীয় অংশ কন্ট্রোল করার উপায় বলবো, ধরুন ইনকিউবেটরের ভেতরে এবং বাহিরে আদ্রতা খুব বেশি তখন আদ্রতা কমাবেন কেমন করে! আমরা জানি বালি অথবা ক্যলসিয়াম কার্বনেট অধিক পরিমানে আদ্রতা শোষণ কারি পদার্থ, ক্যলসিমাম কার্বোনেট মুলত “চুন”, এখন বাজার থেকে একটা বড় পাথর চুনের টুকরো কিনবেন, সাবধানে সেটার মধ্যে বেশ কিছু ফুটো করুন এখন সেই চুন কে একটা পাত্রে রাখলেন এবার সেই পাত্রের মুখে একটা ফ্যন লাগান, এখন ইনকিউবেটরের ভেতরের বাতাস গুলো পাথর চুনের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত করো আবার ইনকিবেটরের ভেতরে পাঠান দেখবেন আদ্রতা কমতে শুরু করেছে এভাবে কিছু ক্ষণ চালু রাখুন দেখবেন আদ্রতাকমে এসেছে, পাথর চুনের পাত্রটির মুখের ফ্যনটি কন্ট্রোলারের সাথে যুক্ত করুন দেখবেন আদ্রতা স্বাভাবিক হলে ফ্যনটি বন্ধ হবে, আদ্রতা বেশি হলে ফ্যনটি আবার চালু হবে। কিছদিন পরপর পাথর চুনের টুকরো টা রোদে শুকিয়ে নিন, দেখবেন অনেক ভালো কাজ করছে।
ইনকিবেটরে আদ্রতা কন্ট্রোল করার ব্যপারে নতুন কিছু জানবো , আদ্রতাকে নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য সবার আগে আমাদের জানতে হবে আদ্রতার জন্ম হয় কোথায়, আর আদ্রতা শেষ হয় কোথায়। প্রথমে জানবো বাতাস আদ্র হয় কেনো, বিজ্ঞানের সুত্র অনুযায়ী বাতাস যত উত্তাপ্ত হবে বাতাসে পানি শোষণ করার ক্ষমতা তত বাড়বে, আবার বাতাস যত শিতল হবে বাতাস থেকে তত পানির অনু বের হয়ে আসবে, বাতাস থেকে আদ্রতা বের করার একটা ছোট পরিক্ষা করা যাক, দুপুরে যখন আবহাওয়া একটু গরম হয় তখন ফ্রিজ থেকে কয়েক টুকরো বরফ বের করুন এবং একটি শুকনো কাচের পাত্রে বরফ গুলি রাখুন, এবার পাত্রের মুখটা বন্ধ করুন, কিছুক্ষণ পরে দেখুন সেই পাত্রের বাহির পিষ্টে পানির বুদ বুদ জমেছে, এবার ভবুন তো পানি কোথায় থেকে এলো, তবে কি কাঁচ ভেত করে পানি বেরিয়ে এলো! না। আসলে পাত্রের গা অত্যান্ত ঠান্ডা হওয়াতে ঐ পাত্রের সংস্পর্শে যে সুমস্ত বাতাসের অনু এসেছে সেই বাতাস অদ্রতা বা পানির অনু ধরে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে, যার ফলে বাতাসে থাকা সেই পানিগুলি এখন কাঁচের প্রাত্রের গায়েই লেগে আছে, এখন বোঝা গেলো বাতাস থেকে তাড়াতারি আদ্রতা শোষণের সব চেয়ে কার্জকারী উপায় হলো বাতাস কে শীতল করা, আর অদ্রতা তৈরি হতে তিনটি বিষয় লাগে প্রথমত পানি দ্বিতীয়ত বাতাস এবং তৃতীয়ত তাপ, আপনি যদি তিনটি জিনিষ কোনো জায়গায় একটা নিদৃষ্ট পরিমান রাখতে পারেন তবে ঐ জায়গায় আদ্রতাও নিদৃষ্ট পরিমানই থাকবে, এই বিষয় টাই আমাদের ইনকিউবেটরের সাথে মিলিয়ে রাখতে হবে।
আর আদ্রতা ধংস করার সব চেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে প্রথমে বাতাসকে ঠান্ডা করে আদ্রতা ঝরিয়ে নিয়ে সমস্থ পানি সরিয়ে নিয়ে সেই বাতাসকে গরম করে ইনিউবেটরের ভেতর পাঠানো, কিন্তু আদ্রতা বাড়ানোর ক্ষেত্র ইনকিউবের ভেতরে কতটুকু জায়গা আছে, ইনকিউবেটরের বডিটা কতক্ষণে কতটুকু তাপ শোষণ করে, বাহিরে তাপমাত্রা কত সেগুলি জেনে একটা হিসেব করে ভেতরের পানির আয়তন বাড়িয়ে আদ্রতা স্বভাবিক রাখা সম্ভব।
ইনকিউবেটরে ইমার্জেনসি আদ্রতা তৈরির পদ্ধতী জানাবো, পদ্ধতীটা বেস মজার এবং হাস্যকর কিন্তু বিপদের সময় এটাই আপনার অনেক উপকার করবে, খুব বড় ইনকিউবেটরে কাজ নাও করতে পারে। শীতকালে বাতাসের আদ্রতা খুব কম থাকে, আজ সকালেও অনেক শীত পড়েছিলো আমারও ভিষণ করছিলো শীতের কারনে মাঝে মাঝে হা করে থেকে মুখ দিয়ে নিঃস্বাস নিচ্ছিলাম হঠাৎ খেয়াল করেদেখি মুখ দিয়ে ধোঁয়ার মত বাতাস বের হচ্ছে, এটা নিয়েই গবেষণা শুরু করেদিলাম, এই বাতাস অনেক আদ্র, এখন আপনার ইনকিউবেটরে আদ্রতা যদি খুবই কমে যায় এবং তা কোনো ভাবে বাড়াতে না পারেন, তবে নিজে মুখ দিয়ে ফু দিয়ে ইনকিউবেটরের ভেতরে বাতাস ঢুকিয়ে ইনকিউবেটরের ভেতরে তৎক্ষনাৎ আদ্রতা তৈরি করতে পারবেন, আমাদের ফুসফুসের ভেতরে যতটা বাতাস থাকে পুরোটা কর্বোনডাই অক্সাইড নয় এতে অনেটা আক্সিজেনও থাকে তাই এটা ডিমের ভিতরে ভ্রুনের কোনো ক্ষতি করবেনা।
বিশেষ কথাঃ ডিমের ভিতর থেকে ছোট্ট ভ্রুনকে বাচ্চায় রুপান্তরিত করার প্রধান ভুমিকা পালান করে নিদৃষ্ট তাপমাত্রা। একটা কক্ষে সব জায়গায় সঠিক ভাবে ডিম ফুটার জন্য নিদৃষ্ট তাপমাত্রা রেখে সেই কক্ষে কিছু উর্বর ডিম রাখলে ডিমের ভিতরে ভ্রুনের কোষ বিভাজোন হতে থাকে, তাপমাত্রা সঠিক রেখে ভ্রুনের সঠিক বৃদ্ধির জন্য ডিম গুলো নিদৃষ্ট সময় পর পর এদিক ওদিক উল্টে দিলে, নিদৃষ্ট দিনে সেই ভ্রুন বাচ্চায় পরিনিত হয়। কিন্তু ডিমের ভিতরে তরল পদার্থ সঠিক সময়ে সঠিক পরিমান না শুকালে ডিমের ভিতর বাচ্চা বড় হয়েও মৃত্যু বরণ করে, ডিমের ভিতরে তরল সঠিক সময়ে শুকানোর জন্য ডিমের বাহিরে ইনকিউবেটরের ভিতরের বাতাসে নিদৃষ্ট পরিমান আদ্রতা বজায় রাখতে হয়। তাপমাত্রা ভ্রুন বড় করে, ডিম ঘুরানো হয় ভ্রুনের সঠিক বৃদ্ধির জন্য এবং নিদৃষ্ট আদ্রতা ডিমের তরল শুকাতে সাহায্য করে। একটি বিষয় লক্ষণীয়, তাপমাত্রা ভ্রুন বড় করে সেই জন্য তাপমাত্রাকে প্রথম থেকেএকটা নিদৃষ্ট সময় পর্যন্ত শেষের সপ্তাহ অপেক্ষা একটু বেশি তাপমাত্রা রাখতে হয় যাতে ভ্রুনের বৃদ্ধিটা নিদৃষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। ডিম ঘুরানো হয় ভ্রুনের সঠিক বৃদ্ধির জন্য সেই কারনে প্রথম থেকে একটা নিদৃষ্ট সময় পর্যন্ত ডিম ঘুরানো হয় যাতে ঐ সময়ের মধ্যেই যে করনে ডিম ঘুরানো হয় সেটা সম্পূর্ণ হয়। আদ্রতা ডিমের তরল শুকাতে সাহায্য করে সেই জন্য প্রথম থেকে আদ্রতাকে একটা নিদৃষ্ট সময় পর্যন্ত শেষের সপ্তাহ অপেক্ষা কম আদ্রতা রাখা হয় যাতে ঐ সময়ের মধ্যে সঠিকভাবে ডিম শুকানোর কাজ সম্পূর্ন হয়। প্রথম থেকে সেই নিদৃষ্ট সময় হচ্ছে হেচিংএর আগে পর্যন্ত। তাহলে বোঝাগেলো হেচিংএর আগেই ডিমের ভিতরে বাচ্চার সঠিক বৃদ্ধি এবং সঠিক পরিমানে ডিমের তরল শুকানোর কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে, যাতে হেচিংএর সময় অনায়াসে বাচ্চা ফুটে বের হতে পারে। সেই জন্য ইনকিউবেটরে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর সময়কে দুইভাগে ভাগ করা হয় প্রথম ভাগে সাঠিক ভাবে ভ্রুনকে বাচ্চায় পরিনিত করা, দ্বিতীয় ভাগে সেই বাচ্চাকে সঠিকভাবে ডিম থেকে বের হরার ব্যবস্থা করা। ‘মূলত ইনকিউবেটর হচ্ছে ডিম দেবার প্রথম থেকে শুরু করে ডিম ফুটা পর্যন্ত সঠিক যত্ন নেয়া এবং ডিম ফুটার উপযোগী আবহাওয়া বজায় রাখার কক্ষ।
আরো পড়ুন>

ইনকিউবেটরে টার্কির ডিম ফুটানো কিছু সূত্র (পর্ব-০৩) | Some sources of incubation of turkey eggs in incubator

অনেক টার্কি খামারী ভাই আছেন, তাদের উদ্দেশ্য এই পোষ্ট টা দিলাম। সবাই বলছে ইন্ডিয়ান টার্কির বাচ্চা মৃত্যুর হার ৬০% বা ৭০%, বৈজ্ঞানিক ভাবে বিশ্লেষণ করে দেখাযাক কেনো এই কথিত ইন্ডিয়ান টার্কির বাচ্চার মৃত্যুর হার ৬০%, আসল সমস্যা কোথায়? এখানে সমস্যা দুইটা কারনে, প্রথম কারন টা ইনকিউবেটর কন্ট্রোলার সার্কিটে নির্ভুল ভাবে তাপ মাত্রা এবং আদ্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে না পরলে এই সমস্যা হবে, এবং ইনকিউবেটরের তাপমাত্র বা আদ্রতা নিয়ন্ত্রনের সেন্সর সঠিক জায়গায় স্থাপন না করলে বাচ্চা দুর্বল হবে, কিন্তু কেনো ইনকিউবেটরের কারনে বাচ্চা দুর্বল হবে! আমরা জানি, তাপমাত্রার সাথে ডিমের ভিতর বাচ্চার শরির গঠনের সম্পর্ক আছে, যদি কোনো ডিমে তাপ বেশী লাগে তবে সেই ডিমের খোসা ভঙ্গুর হয়ে যাবে এবং বাচ্চা তাড়াতারি ফুটবে এক্ষেত্রে বাচ্চা খুব দুর্বল হবে, আর যদি তাপ একটু কম পৌঁছায় তবে ডিম দেরিতে ফুটবে এতেও বাচ্চা দুর্বল হবে, ইনকিউবেটরে তাপমাত্রার সংকেত পৌছানোর সেন্সর যেখানে লাগানো থাকে সার্কিট শুধু সেই জায়গাটুকুর তাপমত্রা সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, অন্য স্থান গুলোতে তাপমাত্র একটু পার্থক্য থাকে,সেই পার্থক্য যদি বেশী হয় তবে সেখানকার বাচ্চা দুর্বল হবে, এবার ইন্ডিয়ান বাচ্চা ৬০% মারাযাবার দ্বিতীয় কারন, ব্রুডিং সিষ্টেম আমরা সবাই জানি জন্মের পর থেকে ৪ সপ্তহ বয়স পর্যন্ত বাচ্চা তাদের শরিরের তাপ নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা তাই কৃতীম তাপ দিতে হয়, কিন্তু আমাদের যে ব্রুডিং কক্ষ সেটাতে কি আটোমেটিক তাপ নিয়ন্ত্রনের কোনো ব্যবস্থা আছে! নেই। বাচ্চার শরিরে তাপের প্রয়োজন হলে বাল্পের কাছে বা তাপের উৎসের কাছে যায়, আর তাপ বেশি হলে বাল্প থেকে দুরে থাকে। কিন্ত বাচ্চা তো নিজেই জানেনা যে তাদের শরিরে কতটুকু তাপ লাগবে, এটাই হলো ভুল, টার্কির বাচ্চা যদি বেশী তাপে থেকে অভ্যস্থ হয়,পর্বতীতে স্বভাবিক আবহাওয়ায় কাম তাপে এসে বাচ্চা দুর্বল হয় এবং মারা যায়। এই সমস্যা থেকে বাঁচার সহজ এবং সঠিক উপায় হচ্ছে আপনার টার্কির ডিম গুলো দেশি মুরগী দিয়ে ফুটান এবং খামারের সবচেয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় যেখানে সঠিক আলো বাতাস পৌছায় সেখান বাচ্চাগুলো চার সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত দেশি মুরগীর সাথে রাখুন এবং প্রয়োজন হলে কৃতীম তাপের ব্যবস্থা রাখুন, দেখবেন মা মুরগীই বাচ্চাদের সঠিক তাপ গ্রহণ করা শিখাবে।

আজকে ইনকিউবেটরের সঠিক তাপমাত্রা, সঠিক আদ্রতা, এবং ডিম ঘুরানোর উপর লিখলাম। বিজ্ঞানের সূত্র এমন একটি নিখুঁত নিয়ম যেটা অনুশরন করলে সাফল্য নিশ্চিত। সূত্র বা নিয়ম মত কোনো কাজ করলে কাজ শেষ হবার আগেই অনেকটা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব,যে এই কাজের ফলাফল কি হতে যাচ্ছে। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোরও তেমনি একটা সঠিক নিয়ম রয়েছে সেই নিয়গুলো নিখুঁত ভাবে অনুশরন করলে ডিমও সঠিক ভাবে ফুটবে। যেমন, একটা নিদৃষ্ট দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়,আর ডিমের ভিতর এই বাচ্চা বড় হয় একটা নিদৃষ্ট তাপমাত্রায়। যেহেতু তাপমাত্রায় ভ্রুন বড় হয়, তাহলে ভ্রুনকে নিদৃষ্ট দিনে বড় করতে হলে একটা নিদৃষ্ট তাপমাত্রা বজায় রাখতে হবে,তবেই সেই তাপ সফলভাবে সঠিক সময়ে ভ্রুনকে বড় করে বাচ্চায় রুপান্তরিত করে ডিম থেকে বাচ্চা বের করবে। সেই সঠিক তাপমাত্রাটা প্রায় সবক্ষেত্রে ৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৯ থেকে ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। ডিমের ভিতর কিছু জ্বলীয় অংশ থাকে যেটা ভ্রুনের বয়সের সাথে সাথে একটা নিদৃষ্ট পরিমানে শুকাতে হয়। ডিমের ভিতরের তরল পদার্থ শুকিয়ে বাস্পায়িত হয় বা বাতাসে তরল টা মিশে যায়, এখন বাতাসে যদি বাস্পের পরিমান বেশি থাকে তবে ডিমের ভিতরের তরল আর বাতাস শুষে নেয় না, আবার বাতাসে যদি বাস্পের পরিমান কম হয় তাহলে ডিমের ভিতরের তরলটা বেশি শুষেনেয়, বাতাসে বাস্পের পরিমান কম অথবা বেশি থাকলে ডিমের তরল নিদৃষ্ট দিনে সঠিক পরিমানে শুকায়না। সেই কারনে বাতাসে সঠিক পরিমান জ্বলীয়বাস্প বজায় রাখতে হয়,আমর বাতাসের জ্বলীয় বাস্পের পরিমানকে বাতাসের আদ্রতা বলে জানি, তাই বাতাসের আদ্রতা সঠিক রাখতে হয় যাতে ডিমের তরল সঠিক সময়ে সঠিক পরিমানে শুকিয়ে সুস্থবাচ্চা বের হয়। ভ্রুনের সঠিক বৃদ্ধির জন্য ডিম গুলোক এদিক ওদিক ঘুরাতে হয়। যেহেতু ডিম ফুটার জন্য সঠিক তাপমাত্রা, সঠিক আদ্রতা, এবং সঠিক সময় ডিম ঘুরানোর উপর নির্ভর করে সুস্থ বচ্চা ফুটে তাই তাপমাত্রা আদোতা এবং ডিম ঘুরানো একটা নিদৃষ্ট সময় পর্যন্ত রাখতে হয়, আর এই সময়টা ডিমকে ইনকিউবেটরের সেটারে রাখতে হয়।
ডিম ফুটার ৪/৫দিন আগে সেটার ট্রে থেকে ডিমকে হেচার ট্রেতে নিতে হয়, এবং আদ্রতা, তাপমাত্রা,এবং ডিম ঘুরানোর পরিবর্তন করতে হয়। ডিম ফুটার ৪/৫দিন আগে বলতে, মনে করুন মুরগীর ডিম ২১দিনে ফুটে তাহলে ২১থেকে ৪বিয়োগ করলে ১৭অবশিষ্ঠ থাকে অর্থাৎ মুরগীর ডিম ১৭দিন পর্যন্ত সেটারে রাখতে হবে। এবং ১৭দিন থেকে অবশিষ্ঠ দিন গুলোতে হেচারে রাখতে হবে, অর্থাৎ ১৮তম দিন থেকে হেচারে রাখতে হবে,(ক্ষেত্র বিশেষে ৩দিন আগেও হেচারে রাখা যায়)। সেটারে এবং হেচারের যত্নের কিছুটা পরিবর্তন রয়েছে সেটাই নিচে উল্লেখ করলাম।

মুরগী
মুরগীর ডিম ২১দিন বাচ্চা ফুটে।
*সেটার*
মুরগীর ডিমের জন্য সেটরের তাপমাত্রা রাখতে হবে,
৩৭.৭ডিগ্রীসেলসিয়াস, বা১০০ডিগ্রি ফ্যারেনহইট।
মুরগীর ডিমের জন্য সেটারে আদ্রতা রাখতে হয় ৪০%থেকে ৫০%।
*হেচার*
মুরগীর ডিম ১৮তম দিনে হেচার ট্রেতে রাখার পরে ডিম ঘুরানো বন্ধ করতে হয়।
মুরগীর ডিমের জন্য হেচরে সঠিক আদ্রতা ৬০%থেকে ৭০%।

হাঁস
হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয় ২৮দিনে।
*সেটার*
হাঁসের ডিমের জন্য সেটরের তাপমাত্রা রাখতে হবে,
৩৭.৭ডিগ্রীসেলসিয়াস, বা ১০০ডিগ্রি ফ্যারেনহইট।
হাঁসের ডিমের জন্য সেটারে আদ্রতা রাখতে হয় ৪৫%থেকে ৫০%।
*হেচার*
হাঁসের ডিম ২৫তম দিনে হেচার ট্রেতে রাখার পরে ডিম ঘুরানো বন্ধ করতে হয়।
হাঁসের ডিমের জন্য হেচরে সঠিক আদ্রতা ৬০%থেকে ৭০%।

মস্কভি
মস্কভির ডিম ফুটে বাচ্চাবের হয় ৩৭ দিনে।
*সেটার*
মস্কভির ডিমের জন্য সেটরের তাপমাত্রা রাখতে হবে,
৩৭.৭ডিগ্রীসেলসিয়াস, বা ১০০ডিগ্রি ফ্যারেনহইট।
মস্কভির ডিমের জন্য সেটারে আদ্রতা রাখতে হয় ৪৫%থেকে ৫৫%।
*হেচার*
মস্কভির ডিম ৩১তম দিনে হেচার ট্রেতে রাখার পরে ডিম ঘুরানো বন্ধ করতে হয়।
মস্কভির ডিমের জন্য হেচরে সঠিক আদ্রতা ৬০%থেকে ৭০%।

রাজহাঁস
রাজহাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়২৮থেকে ৩৪দিনে।
*সেটার*
রাজহাঁসের ডিমের জন্য সেটরের তাপমাত্রা রাখতে হবে,
৩৭.৭ডিগ্রীসেলসিয়াস, বা ৯৯ডিগ্রি ফ্যারেনহইট।
ডিমের জন্য সেটারে আদ্রতা রাখতে হয় ৪৫%থেকে ৫৫%।
*হেচার*
২৫তম দিনে রাজহাঁসের ডিম হেচার ট্রেতে রেখে ঘুরানো বন্ধ করতে হয়।
মস্কভির ডিমের জন্য হেচরে সঠিক আদ্রতা ৬৫%থেকে ৭৫%।

তিতির
তিতিরের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয় ২৬-২৮দিনে।
*সেটার*
তিতিরের ডিমের জন্য সেটরের তাপমাত্রা রাখতে হবে,
৩৭.৭ডিগ্রীসেলসিয়াস, বা ১০০ডিগ্রি ফ্যারেনহইট।
তিতিরের ডিমের জন্য সেটারে আদ্রতা রাখতে হয় ৪০%থেকে ৫০%।
*হেচার*
২৫তম দিনে তিতিরের ডিম হেচার ট্রেতে রেখে ঘুরানো বন্ধ করতে হয়।
তিতিরের ডিমের জন্য হেচরে সঠিক আদ্রতা ৬৫%থেকে ৭৫%।

টার্কি
টার্কির ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় ২৮দিনে।
*সেটার*
টার্কির ডিমের জন্য সেটরের তাপমাত্রা রাখতে হবে,
৩৭.৭ডিগ্রীসেলসিয়াস, বা ৯৯ডিগ্রি ফ্যারেনহইট।
ডিমের জন্য সেটারে আদ্রতা রাখতে হয় ৪০%থেকে ৫০%।
*হেচার*
টার্কির ডিম ইনকিউবেটরে দেবার ২৫তম দিনে হেচার ট্রেতে রেখে ঘুরানো বন্ধ করতে হয়।
টার্কির ডিমের জন্য হেচরে সঠিক আদ্রতা ৬৫%থেকে ৭৫%।

কোয়েল
কোয়েলের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয় ১৭-১৮দিনে।
*সেটার*
কোয়েলের ডিমের জন্য সেটরের তাপমাত্রা রাখতে হবে,
৩৭.৭ডিগ্রীসেলসিয়াস, বা ১০০ডিগ্রি ফ্যারেনহইট।
কোয়েলের ডিমের জন্য সেটারে আদ্রতা রাখতে হয় ৪৫%থেকে ৫০%।
*হেচার*
কোয়েলের ডিম ইনকিউবেটরে দেবার ১৪ তম দিনে হেচার ট্রেতে রেখে ঘুরানো বন্ধ করতে হয়।
কোয়েলের ডিমের জন্য হেচরে সঠিক আদ্রতা ৬০%থেকে ৭০%।
অনেক টার্কি খামারী ভাই আছেন, তাদের উদ্দেশ্য এই পোষ্ট টা দিলাম। সবাই বলছে ইন্ডিয়ান টার্কির বাচ্চা মৃত্যুর হার ৬০% বা ৭০%, বৈজ্ঞানিক ভাবে বিশ্লেষণ করে দেখাযাক কেনো এই কথিত ইন্ডিয়ান টার্কির বাচ্চার মৃত্যুর হার ৬০%, আসল সমস্যা কোথায়? এখানে সমস্যা দুইটা কারনে, প্রথম কারন টা ইনকিউবেটর কন্ট্রোলার সার্কিটে নির্ভুল ভাবে তাপ মাত্রা এবং আদ্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে না পরলে এই সমস্যা হবে, এবং ইনকিউবেটরের তাপমাত্র বা আদ্রতা নিয়ন্ত্রনের সেন্সর সঠিক জায়গায় স্থাপন না করলে বাচ্চা দুর্বল হবে, কিন্তু কেনো ইনকিউবেটরের কারনে বাচ্চা দুর্বল হবে! আমরা জানি, তাপমাত্রার সাথে ডিমের ভিতর বাচ্চার শরির গঠনের সম্পর্ক আছে, যদি কোনো ডিমে তাপ বেশী লাগে তবে সেই ডিমের খোসা ভঙ্গুর হয়ে যাবে এবং বাচ্চা তাড়াতারি ফুটবে এক্ষেত্রে বাচ্চা খুব দুর্বল হবে, আর যদি তাপ একটু কম পৌঁছায় তবে ডিম দেরিতে ফুটবে এতেও বাচ্চা দুর্বল হবে, ইনকিউবেটরে তাপমাত্রার সংকেত পৌছানোর সেন্সর যেখানে লাগানো থাকে সার্কিট শুধু সেই জায়গাটুকুর তাপমত্রা সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, অন্য স্থান গুলোতে তাপমাত্র একটু পার্থক্য থাকে,সেই পার্থক্য যদি বেশী হয় তবে সেখানকার বাচ্চা দুর্বল হবে, এবার ইন্ডিয়ান বাচ্চা ৬০% মারাযাবার দ্বিতীয় কারন, ব্রুডিং সিষ্টেম আমরা সবাই জানি জন্মের পর থেকে ৪ সপ্তহ বয়স পর্যন্ত বাচ্চা তাদের শরিরের তাপ নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা তাই কৃতীম তাপ দিতে হয়, কিন্তু আমাদের যে ব্রুডিং কক্ষ সেটাতে কি আটোমেটিক তাপ নিয়ন্ত্রনের কোনো ব্যবস্থা আছে! নেই। বাচ্চার শরিরে তাপের প্রয়োজন হলে বাল্পের কাছে বা তাপের উৎসের কাছে যায়, আর তাপ বেশি হলে বাল্প থেকে দুরে থাকে। কিন্ত বাচ্চা তো নিজেই জানেনা যে তাদের শরিরে কতটুকু তাপ লাগবে, এটাই হলো ভুল, টার্কির বাচ্চা যদি বেশী তাপে থেকে অভ্যস্থ হয়,পর্বতীতে স্বভাবিক আবহাওয়ায় কাম তাপে এসে বাচ্চা দুর্বল হয় এবং মারা যায়। এই সমস্যা থেকে বাঁচার সহজ এবং সঠিক উপায় হচ্ছে আপনার টার্কির ডিম গুলো দেশি মুরগী দিয়ে ফুটান এবং খামারের সবচেয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় যেখানে সঠিক আলো বাতাস পৌছায় সেখান বাচ্চাগুলো চার সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত দেশি মুরগীর সাথে রাখুন এবং প্রয়োজন হলে কৃতীম তাপের ব্যবস্থা রাখুন, দেখবেন মা মুরগীই বাচ্চাদের সঠিক তাপ গ্রহণ করা শিখাবে।

আজকে ইনকিউবেটরের সঠিক তাপমাত্রা, সঠিক আদ্রতা, এবং ডিম ঘুরানোর উপর লিখলাম। বিজ্ঞানের সূত্র এমন একটি নিখুঁত নিয়ম যেটা অনুশরন করলে সাফল্য নিশ্চিত। সূত্র বা নিয়ম মত কোনো কাজ করলে কাজ শেষ হবার আগেই অনেকটা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব,যে এই কাজের ফলাফল কি হতে যাচ্ছে। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোরও তেমনি একটা সঠিক নিয়ম রয়েছে সেই নিয়গুলো নিখুঁত ভাবে অনুশরন করলে ডিমও সঠিক ভাবে ফুটবে। যেমন, একটা নিদৃষ্ট দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়,আর ডিমের ভিতর এই বাচ্চা বড় হয় একটা নিদৃষ্ট তাপমাত্রায়। যেহেতু তাপমাত্রায় ভ্রুন বড় হয়, তাহলে ভ্রুনকে নিদৃষ্ট দিনে বড় করতে হলে একটা নিদৃষ্ট তাপমাত্রা বজায় রাখতে হবে,তবেই সেই তাপ সফলভাবে সঠিক সময়ে ভ্রুনকে বড় করে বাচ্চায় রুপান্তরিত করে ডিম থেকে বাচ্চা বের করবে। সেই সঠিক তাপমাত্রাটা প্রায় সবক্ষেত্রে ৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৯ থেকে ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। ডিমের ভিতর কিছু জ্বলীয় অংশ থাকে যেটা ভ্রুনের বয়সের সাথে সাথে একটা নিদৃষ্ট পরিমানে শুকাতে হয়। ডিমের ভিতরের তরল পদার্থ শুকিয়ে বাস্পায়িত হয় বা বাতাসে তরল টা মিশে যায়, এখন বাতাসে যদি বাস্পের পরিমান বেশি থাকে তবে ডিমের ভিতরের তরল আর বাতাস শুষে নেয় না, আবার বাতাসে যদি বাস্পের পরিমান কম হয় তাহলে ডিমের ভিতরের তরলটা বেশি শুষেনেয়, বাতাসে বাস্পের পরিমান কম অথবা বেশি থাকলে ডিমের তরল নিদৃষ্ট দিনে সঠিক পরিমানে শুকায়না। সেই কারনে বাতাসে সঠিক পরিমান জ্বলীয়বাস্প বজায় রাখতে হয়,আমর বাতাসের জ্বলীয় বাস্পের পরিমানকে বাতাসের আদ্রতা বলে জানি, তাই বাতাসের আদ্রতা সঠিক রাখতে হয় যাতে ডিমের তরল সঠিক সময়ে সঠিক পরিমানে শুকিয়ে সুস্থবাচ্চা বের হয়। ভ্রুনের সঠিক বৃদ্ধির জন্য ডিম গুলোক এদিক ওদিক ঘুরাতে হয়। যেহেতু ডিম ফুটার জন্য সঠিক তাপমাত্রা, সঠিক আদ্রতা, এবং সঠিক সময় ডিম ঘুরানোর উপর নির্ভর করে সুস্থ বচ্চা ফুটে তাই তাপমাত্রা আদোতা এবং ডিম ঘুরানো একটা নিদৃষ্ট সময় পর্যন্ত রাখতে হয়, আর এই সময়টা ডিমকে ইনকিউবেটরের সেটারে রাখতে হয়।
ডিম ফুটার ৪/৫দিন আগে সেটার ট্রে থেকে ডিমকে হেচার ট্রেতে নিতে হয়, এবং আদ্রতা, তাপমাত্রা,এবং ডিম ঘুরানোর পরিবর্তন করতে হয়। ডিম ফুটার ৪/৫দিন আগে বলতে, মনে করুন মুরগীর ডিম ২১দিনে ফুটে তাহলে ২১থেকে ৪বিয়োগ করলে ১৭অবশিষ্ঠ থাকে অর্থাৎ মুরগীর ডিম ১৭দিন পর্যন্ত সেটারে রাখতে হবে। এবং ১৭দিন থেকে অবশিষ্ঠ দিন গুলোতে হেচারে রাখতে হবে, অর্থাৎ ১৮তম দিন থেকে হেচারে রাখতে হবে,(ক্ষেত্র বিশেষে ৩দিন আগেও হেচারে রাখা যায়)। সেটারে এবং হেচারের যত্নের কিছুটা পরিবর্তন রয়েছে সেটাই নিচে উল্লেখ করলাম।

মুরগী
মুরগীর ডিম ২১দিন বাচ্চা ফুটে।
*সেটার*
মুরগীর ডিমের জন্য সেটরের তাপমাত্রা রাখতে হবে,
৩৭.৭ডিগ্রীসেলসিয়াস, বা১০০ডিগ্রি ফ্যারেনহইট।
মুরগীর ডিমের জন্য সেটারে আদ্রতা রাখতে হয় ৪০%থেকে ৫০%।
*হেচার*
মুরগীর ডিম ১৮তম দিনে হেচার ট্রেতে রাখার পরে ডিম ঘুরানো বন্ধ করতে হয়।
মুরগীর ডিমের জন্য হেচরে সঠিক আদ্রতা ৬০%থেকে ৭০%।

হাঁস
হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয় ২৮দিনে।
*সেটার*
হাঁসের ডিমের জন্য সেটরের তাপমাত্রা রাখতে হবে,
৩৭.৭ডিগ্রীসেলসিয়াস, বা ১০০ডিগ্রি ফ্যারেনহইট।
হাঁসের ডিমের জন্য সেটারে আদ্রতা রাখতে হয় ৪৫%থেকে ৫০%।
*হেচার*
হাঁসের ডিম ২৫তম দিনে হেচার ট্রেতে রাখার পরে ডিম ঘুরানো বন্ধ করতে হয়।
হাঁসের ডিমের জন্য হেচরে সঠিক আদ্রতা ৬০%থেকে ৭০%।

মস্কভি
মস্কভির ডিম ফুটে বাচ্চাবের হয় ৩৭ দিনে।
*সেটার*
মস্কভির ডিমের জন্য সেটরের তাপমাত্রা রাখতে হবে,
৩৭.৭ডিগ্রীসেলসিয়াস, বা ১০০ডিগ্রি ফ্যারেনহইট।
মস্কভির ডিমের জন্য সেটারে আদ্রতা রাখতে হয় ৪৫%থেকে ৫৫%।
*হেচার*
মস্কভির ডিম ৩১তম দিনে হেচার ট্রেতে রাখার পরে ডিম ঘুরানো বন্ধ করতে হয়।
মস্কভির ডিমের জন্য হেচরে সঠিক আদ্রতা ৬০%থেকে ৭০%।

রাজহাঁস
রাজহাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়২৮থেকে ৩৪দিনে।
*সেটার*
রাজহাঁসের ডিমের জন্য সেটরের তাপমাত্রা রাখতে হবে,
৩৭.৭ডিগ্রীসেলসিয়াস, বা ৯৯ডিগ্রি ফ্যারেনহইট।
ডিমের জন্য সেটারে আদ্রতা রাখতে হয় ৪৫%থেকে ৫৫%।
*হেচার*
২৫তম দিনে রাজহাঁসের ডিম হেচার ট্রেতে রেখে ঘুরানো বন্ধ করতে হয়।
মস্কভির ডিমের জন্য হেচরে সঠিক আদ্রতা ৬৫%থেকে ৭৫%।

তিতির
তিতিরের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয় ২৬-২৮দিনে।
*সেটার*
তিতিরের ডিমের জন্য সেটরের তাপমাত্রা রাখতে হবে,
৩৭.৭ডিগ্রীসেলসিয়াস, বা ১০০ডিগ্রি ফ্যারেনহইট।
তিতিরের ডিমের জন্য সেটারে আদ্রতা রাখতে হয় ৪০%থেকে ৫০%।
*হেচার*
২৫তম দিনে তিতিরের ডিম হেচার ট্রেতে রেখে ঘুরানো বন্ধ করতে হয়।
তিতিরের ডিমের জন্য হেচরে সঠিক আদ্রতা ৬৫%থেকে ৭৫%।

টার্কি
টার্কির ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় ২৮দিনে।
*সেটার*
টার্কির ডিমের জন্য সেটরের তাপমাত্রা রাখতে হবে,
৩৭.৭ডিগ্রীসেলসিয়াস, বা ৯৯ডিগ্রি ফ্যারেনহইট।
ডিমের জন্য সেটারে আদ্রতা রাখতে হয় ৪০%থেকে ৫০%।
*হেচার*
টার্কির ডিম ইনকিউবেটরে দেবার ২৫তম দিনে হেচার ট্রেতে রেখে ঘুরানো বন্ধ করতে হয়।
টার্কির ডিমের জন্য হেচরে সঠিক আদ্রতা ৬৫%থেকে ৭৫%।

কোয়েল
কোয়েলের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয় ১৭-১৮দিনে।
*সেটার*
কোয়েলের ডিমের জন্য সেটরের তাপমাত্রা রাখতে হবে,
৩৭.৭ডিগ্রীসেলসিয়াস, বা ১০০ডিগ্রি ফ্যারেনহইট।
কোয়েলের ডিমের জন্য সেটারে আদ্রতা রাখতে হয় ৪৫%থেকে ৫০%।
*হেচার*
কোয়েলের ডিম ইনকিউবেটরে দেবার ১৪ তম দিনে হেচার ট্রেতে রেখে ঘুরানো বন্ধ করতে হয়।
কোয়েলের ডিমের জন্য হেচরে সঠিক আদ্রতা ৬০%থেকে ৭০%।
আরো পড়ুন>